একা বাঁচতে রাজি নন শুভ

>চলতি পরিস্থিতিতে অনেকের মতো অভিনেতা আরিফিন শুভও বাসায় দিন কাটাচ্ছেন। অবসরে চর্চা করছেন ইতিবাচকতার। শুভর কথায়, সময়টা ঘরে বসে কেবল দুশ্চিন্তা করার নয়, বরং সামনে যে দিনগুলো আসছে, তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার। তবে কেবল নিজের জন্যই বাঁচা নয়, শুভ বললেন এ দুঃসময়ে আশপাশের মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর কথাও। এসবই লিখেছেন আদর রহমান
আরিফিন শুভ। ছবি: প্রথম আলো
আরিফিন শুভ। ছবি: প্রথম আলো

দিনের শুরু
ঘুম থেকে উঠে শুভ তাঁর বাসার চিলেকোঠার বারান্দায় চলে যান। সেখানে ঘণ্টা দেড়েক কার্ডিও (কার্ডিওভাসকুলার অ্যাকটিভিটি) করেন এবং হাঁটেন। শরীরের নিচের অংশ ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত তা চলতে থাকে। শুভ বলেন, এই ঘরে থাকার সময়টাতে শরীরে থাকা এনার্জি যেন কোনো নেতিবাচক দিকে না যায়, সেটা খেয়াল রাখতে হবে।

ব্যায়াম করে আর হেঁটে হেঁটে মস্তিষ্ক যখন পুরো শরীরে ক্লান্তির বার্তা পাঠায়, তখন শুভ সকালের অনুশীলনে ক্ষান্ত দেন। নাশতা সেরে নেমে পড়েন ঘরের কাজে। শুভ বাড়ির সহকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ছুটিতে পাঠিয়েছেন। তাই বাসার ময়লা ফেলা থেকে শুরু করে গাড়ি ধোয়া, নিজের ঘর পরিষ্কার—সব কাজই বাড়ির অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। শুভর ভাষায়, মানসিক স্বস্তির জন্য এই চর্চাও বেশ কাজের।

সকাল গড়িয়ে দুপুর

ঘরের কাজকর্ম শেষ করে শুভ বসেন সিনেমা আর সিরিজ দেখতে। গত কয়েক দিন যাঁর কাছ থেকে যে সিনেমা-সিরিজের নামই শুনছেন, সেটাই দেখে ফেলছেন। শুভ বলেন, ‘অন্য সময়ে অনেককেই অভিযোগ করতে শুনতাম, সময় পাচ্ছি না, ভালো সিনেমা দেখতে পারছি না, অবসরে বিশ্রাম নিতে পারছি না...এমন আরও কত কথা। এখন যখন সবার হাতে অখণ্ড অবসর, তখন সময়টা কাজে লাগাতে হবে। পুরোনো সব ধ্যানধারণা ধুয়েমুছে সামনে একটা নতুন পৃথিবীর শুরু হবে। সেখানে সবাই একই সঙ্গে আবার পথচলা শুরু করবেন। তারকা কিংবা ছাপোষা মানুষ, যে-ই হোন না কেন, কারও জন্য কোনো বাঁধাধরা গণ্ডি থাকবে না, সবাই সমান হয়ে যাবে। তাই সেই সময়ের জন্য নিজেকে এখন থেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করছি।’

জিমে গিয়ে এভাবে শরীরচর্চা করতে না পারলেও ঘরে বসে শুভ ঠিকই নিজেকে ঝালিয়ে নিচ্ছেন
জিমে গিয়ে এভাবে শরীরচর্চা করতে না পারলেও ঘরে বসে শুভ ঠিকই নিজেকে ঝালিয়ে নিচ্ছেন

রাতের ভাগে

পৃথিবী এখন বিশাল এক সংকটের মধ্যে। সামনে ঘোর অনিশ্চয়তা। তাই শুভ বলেন, ‘এ সময় ঘরে বসে থেকে নিজেকে আলসেমিতে না জড়িয়ে, শরীর ও মনকে প্রস্তুত করতে হবে যুদ্ধের জন্য।’ তাই সকালের মতো করে রাতেও আরিফিন শুভ দেড় থেকে দুই ঘণ্টা বাড়ির ছাদে গিয়ে হাঁটেন, ব্যায়াম করেন। ক্লান্তিতে যখন পা ভেঙে আসে, তখন ঘরে ফিরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে ঘুমাতে যান। শুভ বলেন, ‘১০ দিনের বেশি সময় ধরে এই একই রুটিন মেনে চলছি। এখনো একটুও একঘেয়েমি, অবসাদ বা নেতিবাচকতা আমাকে ছুঁতে পারেনি। কারণ, আমি তো অলস বসে নেই। কথায় আছে না, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। তাই নিজের ভেতরের শক্তি কখনো অলস ফেলে রাখতে নেই, সেটাকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে হবে।’

শুভর ডায়েট

চলতি সময়ে আরিফিন শুভ একেবারে সাদামাটা ডায়েটে আছেন। হুজুগে কেনাকাটা থেকে নিজেকে অনেক দূরে রেখেছেন। এক সপ্তাহের বাজার করেন, এক সপ্তাহ খান। শুভ বলেন, ‘আমি নিজে একটু কম বাজার করলে আরেকজন তার প্রয়োজনের জিনিসটুকু পাবে। আমি একাই চাইলে দুই মাসের বাজার করে মজুত রাখতে পারি। কিন্তু এমন করে আমি একলা বেঁচে কী করব? এখন সময় সবার কথা ভাবার, সবাইকে নিয়ে ভাবার। কারণ, সামনে আমাদের সবাইকে এক হয়ে কঠিন লড়াই করতে হবে।’

শুভর পরামর্শ

১. নিজের মনকে বুঝুন এবং মানসিকভাবে নিজেকে শক্ত করুন।

২. আগ্রহের বিষয়গুলো চর্চা করুন। নিজেকে আরও তীক্ষ্ণ করে তুলুন।

৩. আশপাশের মানুষদের খেয়াল রাখুন। তাঁদের সহযোগিতা করলে সবাই মিলে ভালো থাকা যাবে।

৪. নতুন কিছু শিখুন। আমার অনেক বন্ধু অনলাইনে নতুন কিছু শিখছে। আমিও যেমন স্বেচ্ছাসেবার প্রশিক্ষণের খোঁজখবর করছি।