এই যুদ্ধ এমন যুদ্ধ যে আমরা প্রতিপক্ষকে দেখতে পাচ্ছি না

চিত্রনায়ক আলমগীর। ছবি: প্রথম আলো
চিত্রনায়ক আলমগীর। ছবি: প্রথম আলো

আজ বাংলা চলচ্চিত্রের চিরসবুজ অভিনেতা আলমগীরের ৭০তম জন্মদিন। ১৯৫০ সালের এই দিনে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর বাবা কলিম উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে দুদু মিয়া ছিলেন ঢালিউডের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর অন্যতম প্রযোজক। পারিবারিক, সামাজিক, অ্যাকশন, রোমান্টিক, ফোক, ফ্যান্টাসিসহ সব ধরনের চলচ্চিত্রের একজন সফল অভিনেতা তিনি। প্রযোজক, পরিচালক, গায়ক হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন। চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য(২০১৮সাল) আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন কবির বকুল।

শুভ জন্মদিন আলমগীর ভাই। অনেক শুভেচ্ছা আপনাকে। জীবনের ৭০টি বছর পার করছেন। বিশেষ এই দিন বিশেষভাবে পালন করার পরিকল্পনা ছিল নিশ্চয়ই... ধন্যবাদ বকুল। হ্যাঁ, একটা পরিকল্পনা তো ছিলই। প্রতিবার বিশেষ এই দিনে সবাই মিলে বাড়িতে কেক কাটার যে উপলক্ষটি হতো, সেটা এবার হচ্ছে না বা করতে পারছি না। কারণ, সারা বিশ্ব একটা ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এখন।

প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে মুক্তির পথ জানা নেই কারও। অবরুদ্ধ সবাই। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এই মুহূর্তে সচেতনতা তৈরির জন্য আপনার জায়গা থেকে সবার উদ্দেশে কী বলবেন?

আমি সবাইকে বলব, বাড়িতে থাকুন। সরকার এবং বিশেষজ্ঞ যাঁরা, তাঁরা যেটা বলছেন, সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। করোনাভাইরাস আপনার বাড়িতে আসবে না। আপনি যদি বাড়ির বাইরে যান, তবেই সে আসবে। আপনি যদি না যান, তবে সে একা আসবে না। সরকার যে নীতিতে চলছে, সেভাবে আমাদের চলতে বলা হচ্ছে, সেই নীতি মেনে চললে আমরা অবশ্যই এই যুদ্ধে জয়ী হব। আমরা সম্মুখ যুদ্ধ দেখেছি, স্বাধীনতাযুদ্ধ দেখেছি। কিন্তু এই যুদ্ধ এমন যুদ্ধ যে আমরা প্রতিপক্ষকে দেখতে পাচ্ছি না। এই যুদ্ধ আরও কঠিন যুদ্ধ। তাই সবাইকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। সবাইকে অনুরোধ করছি, আপনারা বাড়িতে থাকুন।

প্রথম বাংলা সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’–এর অন্যতম প্রযোজক আপনার বাবা কলিম উদ্দিন আহমেদ দুদু মিয়া। ১৯৭৩ সালে আলমগীর কুমকুম পরিচালিত ‘জন্মভূমি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আপনার বড় পর্দায় অভিষেক। অভিনয় করে যাচ্ছেন এখনো। সেই হিসেবে আপনি আগাগোড়াই চলচ্চিত্র পরিবারের একজন মানুষ। ৩ এপ্রিল জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসও। কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

চিত্রনায়ক আলমগীর। ছবি: প্রথম আলো
চিত্রনায়ক আলমগীর। ছবি: প্রথম আলো

আসলে এই বিল বঙ্গবন্ধু ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল প্রাদেশিক পরিষদে উত্থাপন করেছিলেন। কাকতালীয়ভাবে ৩ এপ্রিল আমার জন্মদিন। আর বঙ্গবন্ধুকন্যা এই দিনকে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে প্রতিবছর এই দিন শিল্পী সমিতি, পরিচালক সমিতি, প্রযোজক সমিতিতে কেক কাটা হতো। এবার কিছুই হচ্ছে না। এই ক্রান্তিলগ্নে সরকারিভাবে স্বাধীনতা দিবস, পয়লা বৈশাখ সবই বাতিল করা হয়েছে। আবার যদি শঙ্কামুক্ত দিন আসে, তখন নাহয় সবাই মিলে পালন করব।

আপনি আলমগীর কুমকুম, খান আতাউর রহমান, দীলিপ বিশ্বাস, কামাল আহমেদ, সুভাষ দত্ত, আমজাদ হোসেন, মোস্তফা মাহমুদ, এ জে মিন্টুর মতো গুণী নির্মাতাদের চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। কিন্তু সেই স্বর্ণযুগ পেরিয়ে এখন বাংলা চলচ্চিত্র মুখ থুবড়ে পড়েছে। নেই গুণী নির্মাতা। নেই ভালো গল্পের চলচ্চিত্র। তাই এখন প্রেক্ষাগৃহ দর্শকশূন্য। উত্তরণের পথ কী?

আসলে হয়েছে কি, আমাদের চলচ্চিত্রের অবক্ষয় শুরু হয় অনেক আগে থেকেই। প্রথমে শুরু হয় অশ্লীলতা থেকে। সমষ্টিগতভাবে সবাই এর জন্য দায়ী। এই অশ্লীল চলচ্চিত্র যাঁরা নির্মাণ করেছেন, যাঁরা অভিনয় করেছেন, তাঁরা তো বটেই, তাঁদের সঙ্গে যাঁরা হলমালিক তাঁরাও এর জন্য দায়ী। তাঁরা কাটপিস চাইতেন ছবির সঙ্গে। ব্যবসা বেশি করার জন্য। এই যে শুরু, আস্তে আস্তে প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ল। মাদ্রাজি ছবির হুবহু কপি শুরু করলেন পরিচালকেরা। ফলে অভিনয়ের জায়গাটা নষ্ট হলো। স্ক্রিপ্ট দুর্বল হতে থাকল। হিন্দি, উর্দু, মাদ্রাজি গানও হুবহু নকল ঢুকে গেল। এরপর টেকনিক্যাল সাইডেও পিছিয়ে গেল আমাদের চলচ্চিত্র। পরিকল্পনাহীনভাবে চলতে চলতে পুরো সিস্টেমটাই বদলে গেল। এখন একসঙ্গে একটি জাল ফেলে সবকিছুকে যদি তুলে এনে সংস্কার করা যায়, তাহলে হয়তো নতুন একটা কিছু বের করে আনা সম্ভব। উত্তরণের এটাই পথ, আমার কাছে মনে হয়।

চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য(২০১৮সাল) আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। ছবি: ফোকাস বাংলা
চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য(২০১৮সাল) আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। ছবি: ফোকাস বাংলা



এই স্বেচ্ছা–অবরুদ্ধ সময় কীভাবে কাটে?

বই পড়ি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটা বই পড়লাম। ছবি দেখি। ছবি দেখা নিয়ে যদিও একটু সমস্যা হয়। আমার স্ত্রী একটু আধুনিক ছবি দেখতে চায়। আর আমি দেখতে চাই উত্তম–সুচিত্রার ছবি। এই জুটির ছবি ছাড়া আমি অন্য ছবি দেখি না। এই জুটির ‘সপ্তপদি’ ছবিটা যে কতবার দেখেছি। আর বিকেলে ছাদে যাই, সেখানে আমার একটা বাগান আছে, বাগানচর্চা করি। এই তো এভাবেই সময় কাটছে।