আরব দুনিয়ার অচেনা কাহিনি

.
.

এবার আরব দুনিয়ার দিকে চোখ ঘোরানো যাক।

জিয়াদ দুয়েইরি ১৯৯৮ সালে পশ্চিমা বিশ্বের সামনে তাঁর ওয়েস্ট বেইরুত নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। সে ছবি দেখে কপালে উঠে গিয়েছিল সবার চোখ। আরবের রুক্ষ মরুভূমি কিনা এমন ছবি! আরব সম্পর্কে গৎবাঁধা ছবি খানখান করে দিয়েছিলেন লেবাননের এই চিত্রপরিচালক। কান চলচ্চিত্র উৎসবের ‘চলচ্চিত্রপক্ষ’-এ (ডিরেক্টরস ফর্টনাইট) প্রদর্শিত হওয়ার পর ধন্য ধন্য পড়ে গেল জিয়াদের। পরপর বেশ কটি চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটির ঝুলিতে টপটপ করে পড়তে লাগল পুরস্কার। সে ছিল জিয়াদের শুরু, শেষ নয়। আজ আমরা বলব তাঁর অন্য ছবি দ্য অ্যাটাক নিয়ে।

আমরা ছবির দেখার স্বাদ বদল করি। আর সে স্বাদ বদল করতে করতে আরব দুনিয়া সম্পর্কে আমাদের ছকে বাঁধা ধারণাতে খানিকটা খোলা হাওয়া বইয়ে দিই। পশ্চিমা দুনিয়ার চলচ্চিত্রের ছকের বাইরেও খানিকটা পা বাড়াই।

ফিলিস্তিনি চিকিৎসক আলী সুলায়মানের দিন কাটছিল আয়েশেই। সমাজে সম্মানজনক স্থান হয়েছে তাঁর। ইসরায়েলে চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ সম্মানও তিনি পেলেন, যা আগে কখনো কোনো আরব পাননি। খ্যাতি তাঁর যা-তা নয়। কিন্তু যে দিন এই সম্মাননা পেলেন, সে দিনই ঘটল ভয়ংকর অঘটন। এক রেস্তোরাঁয় আত্মঘাতী বোমায় নিহত আর ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল একঝাঁক শিশু-নারী-পুরুষ। দুর্ভাগ্যজনক এক ব্যস্ততায় জড়িয়ে পড়লেন আলী সুলায়মান।

অপ্রীতিকর এই দিনটিতেই ছবির সূচনা। ধীরে ধীরে জানা যায়, আলী সুলায়মানের ধীরস্থির স্ত্রীই ছিলেন সেই আত্মঘাতী বোমারু। কী করে তা হতে পারে? স্বামী হয়েও তিনি একেবারেই টের পাবেন না? নেমে পড়লেন তিনি স্ত্রীর মনের এই অলক্ষ্য রূপান্তরের অনুসন্ধানে। এই অনুসন্ধানই ছবিটির বিষয়। কারণ, এই অনুসন্ধান থেকে তিনি ঢুকে পড়েন ইসরায়েল রাষ্ট্রের নিষ্ঠুর বাস্তবতার ভেতরে। ইসরায়েলি আর ফিলিস্তিনি দুই নিষ্ঠুর বিপরীত বাস্তবে। এ অনুসন্ধান হয়ে ওঠে তার আত্মানুসন্ধানও। তার চারপাশের শান্তির দেয়াল চৌচির হয়ে যায়।
জিয়াদের নজর বাস্তবের দুই দিকেই খোলা। ফলে তার গল্প চলে অসম্ভব পিচ্ছিল ও ঝুঁকিপূর্ণ পথে। কিন্তু বলেন তিনি খুবই সরল আর আন্তরিকভাবে। ছবি শেষে বিহ্বল হয়ে থাকবেন আপনিও।

.
.

তবে খোদ ফিলিস্তিনের চলচ্চিত্রকার এলিয়া সুলেইমানের ছবি কিন্তু এতটা সরল নয়। তাঁর আবাস ফিলিস্তিনের তিক্ত বাস্তবতায়। সে তিক্ততা তিনি পরিবেশন করেন ঠান্ডা শ্লেষে। ইংরেজিতে যাকে বলে ডার্ক কমেডি। এলিয়া সুলেইমানকে বলতে পারেন আরব চলচ্চিত্রের ভলতেয়ার। নিজেই দেখে ফেলুন না তাঁর ডিভাইন ইন্টারভেনশন ছবিটা। কোনো সনদের দরকার হলে জানিয়ে রাখি, ছবিটি ২০০২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে স্বর্ণপামের জন্য মনোনীত হয়েছিল। পরে ফিলিস্তিন আদৌ রাষ্ট্র কি না, ছবিটি সেই কূটতর্কে পড়ে। অবশেষে সমালোচক পুরস্কার জিতে নেয়।
একগুচ্ছ ছিন্ন ঘটনার মালায় ছবিটি সাজানো। সেই মালার সুতো এক ফিলিস্তিনি যুবক। তার জীবনের একটি দিনের ঘটনাপুঞ্জ। অণুগল্পের মতো প্রতিটি ঘটনা একাধারে কৌতুকপূর্ণ ও অন্তর্দাহময়। নিদারুণ বাস্তবতার ফিলিস্তিনি এ ছবিতে কুহকী এক দেশ।

এ সময়ের আরেক কৃতী আরব পরিচালক হানি আবু-আসাদ। তাঁর সবচেয়ে বিতর্কমুখর প্যারাডাইস নাও ছবিটি নিয়েই বলা যেত, কিংবা ওমর নিয়েও। কিন্তু আমরা বরং একটু বৈচিত্র্যের দিকেই এগোই।


আরব থিম নিয়ে ছবি করতে করতে হানি আবু-আসাদ ২০১৭ সালে তাঁর শেষ ছবিটি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে, দ্য মাউন্টেইন বিটুইন আস, কেট উইন্সলেট আর ইদ্রিস অ্যালবাকে নিয়ে।

.
.

ডেনভারে যাওয়ার হঠাৎ ফ্লাইট বাতিল হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়ে গেছে যাত্রীরা। তাদের মধ্যে আলোকচিত্র-সাংবাদিক অ্যালেক্স মার্টিন আর নিউরোসার্জন বেন ব্যাসকে আজ পৌঁছাতেই হবে ডেনভারে। অ্যালেক্সের আজই বিয়ে, হবু বর অপেক্ষা করছে ডেনভারে। আর বেনের জরুরি অস্ত্রোপচার। টাকা ভাগাভাগি করে একটা ছোট্ট বিমান ভাড়া করে তাতে চড়ে বসল তারা। পাইলটের আকস্মিক অসুস্থতায় বিমান গোত্তা মারল তুষারাচ্ছন্ন উটাহ পর্বতমালার গভীরে।

দুর্ঘটনা থেকে ওরা প্রাণে বাঁচল বটে, কিন্তু ফিরে আসতে পারবে কি লোকালয়ে? এই নির্জন নিষ্ঠুর দুর্গমতা কি ওদের জীবনের আগের হিসাবকিতাব পাল্টে দেবে না?

আরব পাচকের হাতে তৈরি পশ্চিমা রুচির খাবার। চেখে দেখুন।