মহামারির নিদানকালে ঘরে বইয়া থাক...

কনক আদিত্য, শারমিন সুলতানা সুমি ও রাহুল আনন্দ । ছবি: প্রথম আলো
কনক আদিত্য, শারমিন সুলতানা সুমি ও রাহুল আনন্দ । ছবি: প্রথম আলো

‘চলো একসাথে দূরে থাকি, বিশ্বাসে কাছাকাছি, দূরে দূরে কাছে থেকে দেশটাকে ভালোবাসি...’

গ্রামীণফোনের উদ্যোগে ঘরে বসে নির্মিত এই গান এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল। ২৬ মার্চ মুক্তির পর কেবল ফেসবুকেই গানটি শোনা ও দেখা হয়েছে প্রায় দুই কোটিবার। শেয়ার ৭৫ হাজার। কেন এই গান এত আলোড়ন ফেলে দিল? এই গানের সুরকার ও অন্যতম শিল্পী চিরকুট ব্যান্ডের শারমিন সুলতানা সুমি নিজে এতটুকুও কৃতিত্ব নিলেন না। এমনকি কৃতিত্ব দিলেন না এই গানের গীতিকার গাউসুল আলম শাওনকে। সংগীত পরিচালক পাভেলকেও নয়। গায়ক সাদি মোহাম্মদ, তাহসান খান, এলিটা করিম, মিলন মাহমুদ, নিরব বা সন্ধি—কাউকে নয়। তবে? উত্তরটা শোনা যাক সুমির মুখ থেকেই—‘আমার মনে হয়, মানুষ যখন অন্য কোনো চিন্তা মাথায় না রেখে কেবল মানুষের মঙ্গলের জন্য কোনো কাজ করে, সেটা ভালো না হয়ে যায়ই না।’

২৩ মার্চ দুপুরের পর গানের কথা হাতে পান সুমি। ২৪ মার্চ রাতেই তৈরি হয়ে যায় সুর-সংগীতায়োজন। তারপর শুরু শিল্পী বাছাই। সবাই ২৫ ও ২৬ মার্চ সকালে ভিডিও পাঠালেন। সবার ভিডিও একসঙ্গে করে গানটি বেঁধে মুক্তি দেওয়া হয় ২৬ মার্চ। ভিডিওটি বানিয়েছেন বিধান সাহা। গানের মিউজিক কম্পোজার ও চিরকুট ব্যান্ডের ড্রামার পাভেল বললেন, ‘ঘরই স্টুডিও, স্টুডিওই ঘর। আর কিছু তো করার নেই। তাই মনপ্রাণ উজাড় করে কাজটা করেছি।’

আসিফ আকবর। ছবি: সংগৃহীত
আসিফ আকবর। ছবি: সংগৃহীত

অন্যদিকে কনক আদিত্য একাই লিখে, সুর করে, বাজিয়ে, গেয়ে ফেললেন ‘মহামারির নিদানকালে ঘরে বইয়া থাক...’। পাশ থেকে মুঠোফোনে ভিডিওবন্দী করেন স্ত্রী ইশরাত জাহান। তারপর কনক গানটি তুলে দেন ফেসবুকে। লাখ লাখ মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছে সুখতারা আর ঘুঙুরের বাজনাকে সঙ্গী করে গাওয়া এই গান। শত শত মানুষ মন্তব্যে জানিয়েছে, এই গান তাঁদের অশান্ত হৃদয়কে খানিক শান্ত করেছে। জানতে চাইলাম, কী ভেবে বাঁধলেন এই গান? কনক জানালেন, ‘মানুষ যেন নিজের ঘরটাকেই প্রার্থনাস্থল বানিয়ে প্রার্থনা করেন, এই কথাটাই তিনি সহজভাবে বলতে চেয়েছেন। বললেন, ‘এই গানের ওপর আমার কোনো দাবি, কপিরাইট নেই। কয়েকটি স্টুডিও থেকে বলেছে, তারা গানটা ব্যবহার করতে চায়। আমি জানিয়ে দিয়েছি, কেউ যদি গানটা নিজের বলে দাবি করে গ্রামে-গঞ্জে, মহল্লায়, মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়, আমার আপত্তি নেই। আমি চাই, গানটা মানুষের কানে ঢুকে মনে যাক।’

এদিকে জলের গানের রাহুল আনন্দ গেয়েছেন ‘অবরুদ্ধ দিনের গান’। গানটির কথা লিখেছেন শাওন আকন্দ। এই গানের ভিডিও অনেকটা বায়োস্কোপের মতো। এখানেও এই মহামারি থেকে নিস্তার পেতে উদাত্ত প্রার্থনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নিচ্ছে। আমাদের এখন সময় এসেছে নতুন করে ভাবার। প্রকৃতির কাছে জমা হওয়া সব ঋণ শোধ করার।

মিলা, মিশা ও আরিফিন। ছবি: সংগৃহীত
মিলা, মিশা ও আরিফিন। ছবি: সংগৃহীত

পপ গায়িকা মিলা একটি পালাগান তৈরি করেছেন। মিলা তাঁর এই গানের মাধ্যমে সবার মধ্যে সচেতনতার বাণী ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে প্রথম আলোকে জানান। ‘করোনা সতর্কবার্তা’ শিরোনামের এই পালাগানের কথা লিখেছেন মিলা, ছোট বোন মিশা ও তাঁর স্বামী আরিফিন মিলে। গানের সুরও তাঁদের করা। নিজের ফেসবুকে গানটি আপলোডও করেছেন মিলা। গানের পাশাপাশি মিলা সচেতনতামূলক কথাও বলেছেন।

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে আশাজাগানিয়া বার্তা নিয়ে একটি ইন্সট্রুমেন্টাল তৈরি করেছেন বেজ গিটারিস্ট রানা ও লিড গিটারিস্ট শামু। সেখানে স্লোগানের মতো একটি ভয়েজ ওভার ও ‘আমরা করব জয়’ গান থেকে ছয়টি চরণ নিয়ে গেয়েছেন আসিফ আকবর। এর শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’। ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ কম্পোজিশনের পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছেন আসিফ নিজেই।