চলে গেলেন শিল্পনির্দেশক ও 'বিরাজ বউ' পরিচালক

মহিউদ্দিন ফারুক। ছবি: সংগৃহীত
মহিউদ্দিন ফারুক। ছবি: সংগৃহীত

বনানীর বাসায় অচেতন হয়ে পড়েছিলেন খ্যাতিমান পরিচালক ও শিল্পনির্দেশক মহিউদ্দিন ফারুক। এরপর দ্রুত তাঁকে নেওয়া হয় ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আজ শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালে নেওয়ার পরই চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। প্রথম আলোকে জানিয়েছেন ছোট ছেলে নাসিরুদ্দিন ফারুক।

মহিউদ্দিন ফারুকের ভগ্নিপতি শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে দুলাভাই জ্বরে আক্রান্ত হন। এরপর সুস্থ হয়ে যান। ছয় বছর আগে তাঁর হার্টে স্টেন্ট (রিং) পরানো হয়। শ্বাসকষ্টের সমস্যাও ছিল। করোনার এই সময়টাতে তাই নিজে থেকে সচেতন হয়ে থেকেই দরজা বন্ধ করে পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে নিজেকে আলাদা রেখেছিলেন। ফোনে সবার সঙ্গে কথা বলতেন। চিকিৎসকের সঙ্গে ফোনে কথা বলে ওষুধও খাচ্ছিলেন। কিন্তু আজ শুক্রবার দুপুরে তাঁকে নিজ কক্ষে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। এরপর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’

ছোট ছেলে নাসিরুদ্দিন ফারুক বলেন, ‘বাবা ভালোই ছিলেন। কিছুদিন আগে জ্বর আসে। এরপর ভালো হয়ে যান। করোনার সময়ে আমাদের পুরো পরিবার বেশ সচেতন হই। বাইরে থেকে বাড়িতে কেউ আসতেন না, আমরাও প্রয়োজন ছাড়া বের হতাম। আব্বা যেহেতু হার্টের রোগী, তিনি আলাদা থাকতেন। সবাই সাবধানতা মেনে চলতেন। আজ সকালে বাবার রুমে গিয়ে দেখলাম, স্ট্রোক করেছেন। এরপর দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা বাবাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।’

শফিকুর রহমান জানান, চিকিৎসকেরা যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেছেন, দুলাভাই স্ট্রোক মারা গেছেন। হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁকে মিরপুর ১০ নম্বরের জান্নাতুল মাওয়া কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বাদ আছর তাঁকে দাফন করা হয়।

মহিউদ্দিন ফারুক স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ আত্মীয়স্বজন এবং অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন। ১৯৪২ সালের ১ মার্চ ঢাকায় জন্মগ্রহণ করা মহিউদ্দিন ফারুক শিল্পনির্দেশক হিসেবে শতাধিক ছবির জন্য কাজ করেছেন। তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবির ‘বিরাজ বউ’। রাজেন তরফদার পরিচালিত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘পালঙ্ক’তে শিল্পনির্দেশক হিসেবে কাজ করে কলকাতায় পুরস্কৃতও হন তিনি।

শিল্পনির্দেশক হিসেবে মহিউদ্দিন ফারুকের প্রথম ছবিটি হচ্ছে ‘পুনম কি রাত’। এরপর একে একে তিনি কাজ করেন ‘লাঠিয়াল’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘বসুন্ধরা’, ‘ডুমুরের ফুল’, ‘নাজমা’, ‘সোহাগ মিলন’, ‘সারেং বউ’, ‘সুর্যদীঘল বাড়ি’, ‘সৎ ভাই’, ‘চাপা ডাঙার বউ’, ‘অভিযান’, ‘জনি’, ‘মান সম্মান’, ‘চ্যালেঞ্জ’, ‘নসিব’, ‘উছিলা’, ‘নিয়ত’, ‘দুখাই’, ‘মেঘলা আকাশ’, ‘পদ্মানদীর মাঝি’, ‘পিতা মাতা সন্তান’সহ আরও শখানেক ছবিতে।

মহিউদ্দিন ফারুকের শিল্পনির্দেশনা দেওয়া সর্বশেষ ছবি যৌথ প্রযোজনার ‘মনের মানুষ’। গৌতম ঘোষ পরিচালিত এই ছবির জন্যও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন মহিউদ্দিন ফারুক। তিনি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটেরও শিক্ষক ছিলেন তিনি।