কণ্ঠশিল্পীর কবিতা থেকে গান

দিনাত জাহান মুন্নি। ছবি: ফেসবুক থেকে
দিনাত জাহান মুন্নি। ছবি: ফেসবুক থেকে

করোনায় আক্রান্ত হয়ে যখন বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যু বাড়ছে, তখন শঙ্কিত সবাই। এই মহামারির পর যদি জীবন থাকে, কী কী করবেন, তা নিয়ে ভাবছেন অনেকেই। কণ্ঠশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নিও নিজের ভাবনাগুলো লিখে ফেলেছেন কবিতায়। সেটাকে সুরে বেঁধে গান করেছেন তানভীর তারেক।

৮ এপ্রিল ভোরে ‘এবার যদি বেঁচে যাই’ শিরোনামে একটি কবিতা ফেসবুকে পোস্ট করেন কণ্ঠশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নি। কবিতায় নিজের মনের কথাগুলোই তুলে ধরেছেন তিনি। তুলে ধরেছেন ইচ্ছার তালিকা। সেখানে তিনি লিখেছেন, খোলা মাঠে শুয়ে আকাশ দেখার কথা, ফুলের বাগান করার কথা আর প্রতিদিন গলা সাধার কথা। এই শিল্পী প্রথম আলোকে বলেন, ‘গান করি, কিন্তু প্রতিদিন গলা সাধি না। এটা নিয়ে একরকম অপরাধবোধ আছে। কবিতায় যেগুলো লিখেছি, সেসব একেবারেই নিজের একান্ত মনের কথা।’

দিনাত জাহান কবিতাটায় লিখেছেন, ‘এবার যদি বেঁচে যাই/ কান ধরে সরি বলব…/ চিরশত্রুটাকেও মাফ করে দেব… / ভালোবাসি বলব/ ভালোবাসতে বলব/ হাতের তালুতে রেখে ধূলিকণার সুন্দর দেখব/ দেওয়া কথাগুলো রাখব/ না রাখতে পারা কথাগুলো ফিরিয়ে নেব/ সব ঋণ শোধ করে দেব/ আমার কাছে থাকা সবার ঋণ ক্ষমা করে দেব/ খাঁচার পাখিটাকে মুক্ত করে দেব/ এবার যদি বেঁচে যাই...আরও কত কিছু করব।’

একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া গীতিকার কবির বকুলের স্ত্রী দিনাত জাহান। তিনি বলেন, ‘আমার লেখার হাত নাকি ভালো, বকুল আমাকে ছাত্রজীবন থেকেই সেটা বলত। নিয়মিত লেখার জন্য তাগাদা দিত। গান করতে গিয়ে লেখার অবকাশ পেতাম না। করোনায় গৃহবন্দী হয়ে নানা ভাবনা ও দুশ্চিন্তা উঁকি দিচ্ছে মাথায়। সে কারণেই এটা লিখে আমি ফেসবুকে পোস্ট করি। সবাই যে এত প্রশংসা করবে, আমি সেটা ভাবতে পারিনি।’

অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে গান করছেন দিনাত জাহান মুন্নি। ছবি: ফেসবুক থেকে
অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে গান করছেন দিনাত জাহান মুন্নি। ছবি: ফেসবুক থেকে

মুন্নির কবিতাটির প্রশংসা করেছেন অনেকে। কেউ আবার মন্তব্য করেছেন সেই পোস্টে। সেই তালিকায় আছেন কবি ও সাংবাদিক আনিসুল হক, অভিনেত্রী ও সাংসদ সুবর্ণা মুস্তাফা, নির্মাতা কাউসার চৌধুরী। মুন্নি জানান, তপন চৌধুরী থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় শিল্পী লেখাটির প্রশংসা করেছেন।

মুন্নির কবিতাটি আবৃত্তি করে একটি ভিডিও বানিয়ে ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন নকশাকার বিপ্লব সাহা। তবে মূল কবিতাটিকে সুর করে গান করেছেন তানভীর তারেক। এমনকি গানের কথাগুলোর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কিছু স্থিরচিত্র ব্যবহার করে একটি ভিডিওচিত্র নির্মাণ করে প্রকাশ করেছেন তিনি। গানটি ফেসবুকে প্রকাশের সময় তিনি লেখেন, ‘ফেসবুকে মৃত্যুসংখ্যা আর ভয়াল সব স্ট্যাটাস দেখার জন্য দৃঢ় মনোবল নিয়ে নিউজ ফিড দেখতে লাগলাম গিটার হাতে নিয়েই। মুন্নি ভাবির কবিতায় চোখ আটকে গেল। আনমনেই গিটারে গাইতে লাগলাম। ইনস্ট্যান্ট শুধু পিয়ানো আর গিটারে সুরটা বাঁধলাম।’

এদিকে প্রায় একই রকম ভাবধারার একটি কবিতা লিখেছেন সহস্র সুমন নামের এক তরুণ কবি। করোনাকালের শপথের মতো করে জনপ্রিয় ২১ জন প্রবাসী শিল্পী সেই কবিতার পঙ্‌ক্তি কণ্ঠে তুলে নিয়েছেন। নিজ নিজ ঘর থেকে ভিডিও ধারণ করে তাঁরা সেটি প্রকাশ করেছেন। সেই কবিতায়ও বলা হয়েছে, ‘এ যাত্রায় বেঁচে গেলে, ভীষণ করে বাঁচব/ সবাইকে জড়িয়ে ধরে, অনেক করে কাঁদব/ এ যাত্রায় রেহাই যদি পাই, অন্যের কথা ভাবব/ যার যেখানে অংশ আছে, হিসাবগুলো চুকিয়ে দেব...।’

কবিতাটি দিয়ে তৈরি ভিডিওতে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশের একসময়ের টেলিভিশন তারকা তানিয়া আহমেদ, মোনালিসা, রুমানা, জামাল উদ্দিন হোসেন, মিলা হোসেন, শামীম শাহেদ, শিরিন বকুল, শ্রাবন্তী, কাজী উৎপল, তমালিকা কর্মকার, ডলি জহুর, শামসুল আলম, প্রিয়া ডায়েস, মহসিন রেজা, হিল্লোল, আফরোজা বানু, নওশীন নাহরিন মৌ, খাইরুল ইসলাম পাখি, রওশন আরা, টনি ডায়েস ও লুৎফুন নাহার লতাকে। নওশীন নাহরিনের পরিকল্পনায় ভিডিওটি তৈরি করেছেন টনি ডায়েস। করোনা–সংকটে সম্মুখযোদ্ধাদের এ প্রযোজনা উৎসর্গ করা হয়েছে।