পরিচালকদের কপাল খুলেছিল যে ছবি দিয়ে

‘ফলোয়িং’, ‘অ্যামোরেস প্যারোস’ ও ‘দ্য রিটার্ন’ ছবির পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত
‘ফলোয়িং’, ‘অ্যামোরেস প্যারোস’ ও ‘দ্য রিটার্ন’ ছবির পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত

প্রথম ছবি দিয়েই খুলে গেছে নির্মাতার ভাগ্য। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন চলচ্চিত্র দুনিয়া। ঝুলিতে জমাচ্ছেন বিশ্বের নামীদামি পুরস্কার, প্রশংসা। এমন তিন নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান, আলেহান্দ্রো গঞ্জালেস ইনারিতু ও আন্দ্রেই পেত্রোভিচ জভিয়াগিনৎসেভের তিনটি ছবি থাকল আজ।

গল্পের উপকরণ জোগাড় করতে লেখক অনুসরণ করেন একজন চোরকে। একসময় এই চোরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। লেখক বুঝতে পারেন, তিনি গোলকধাঁধায় আটকে গেছেন। এমন একটি গল্পকেই প্রথম ছবির জন্য বেছে নেন নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান। ছবির নাম ‘ফলোয়িং’। নোলানের প্রথম ছবির বাজেট ছিল মাত্র ছয় হাজার ডলার। বাজেটের কথা মাথায় রেখেই গল্প ভাবেন তিনি। একই কারণে ছবির জন্য নেন সব নবীন অভিনেতা ও কলাকুশলী। ৬৯ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই ছবির শুটিং করতে প্রায় এক বছর সময় লেগেছিল। তার কারণ, ফলোয়িং-এর সঙ্গে যুক্ত প্রায় সবাই ফুল টাইম চাকরি করতেন। ছবিটি ১৯৯৮ সালে প্রিমিয়ার হয়। থ্রিলার এই ছবির জন্য বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসব থেকে প্রশংসা পান তরুণ এই নির্মাতা। প্রযোজকদের নজর কাড়েন, জুটে যায় পরের ছবির প্রযোজকও। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি এই নির্মাতাকে। ক্রমেই বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রভাবশালী নির্মাতা হয়ে ওঠেন আজকের ক্রিস্টোফার নোলান।

‘অ্যামোরেস প্যারোস’ ছবির দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
‘অ্যামোরেস প্যারোস’ ছবির দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

আলেহান্দ্রো গঞ্জালেস ইনারিতু তখন কিশোর। বেশির ভাগ রাতে তাঁকে ঘুম পাড়ানো হতো গল্প শুনিয়ে। গল্প শুনতে শুনতে একদিন মুগ্ধ হয়ে যান গল্প বলার ধরনে। একসঙ্গে তিনটি গল্প শুরু হলেও গল্পের শেষে গিয়ে ইনারিতু অবাক হয়ে লক্ষ করেন, তিনটি নয়, একটি গল্পই এতক্ষণ শুনেছেন। পরে যুবক বয়সে মিলকো ম্যানচেভস্কির ‘বিফোর দ্য রেইন’ ছবির গল্প উপস্থাপনের সঙ্গে ছোটবেলার গল্পের মিল খুঁজে পান। এই অনুপ্রেরণায় প্রথম ছবি ‘আমোরেস পেরোস’-এর গল্প বলার ঢংটি তৈরি করে ফেলেন তিনি। গল্প হিসেবে বেছে নেন সমসাময়িক মেক্সিকো সিটির অন্ধকার দিক। তিনটি জায়গা থেকে আলাদাভাবে গল্প শুরু করে শেষে এক বিন্দুতে গিয়ে মিলিয়ে দেন নির্মাতা। সাত মাস ধরে সম্পাদনা করে ছবিটি পাঠিয়ে দেন নির্মাতা গিয়েরমো দেল তোরোকে। ছবিটি দেখে তিনি খুবই পছন্দ করেন এবং দৈর্ঘ্য কমাতে বলেন। এরপর একসঙ্গে তাঁরা টানা তিন দিন ছবিটি কাটছাঁট শেষে কান চলচ্চিত্র উৎসবে জমা দেন। এরপরই বাজিমাত। কান চলচ্চিত্র উৎসবে ক্রিটিকস উইকস অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয় ছবিটি। মেক্সিকো থেকে অস্কারে বিদেশি ভাষার ছবি হিসেবে মনোনীত হয়। এরপর বড় বড় প্রযোজকের ভিড় সামলাতে হয় এই নির্মাতাকে। ২০০০ সালের পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

‘ফলোয়িং’ ছবির দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
‘ফলোয়িং’ ছবির দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

বাবার কোনো স্মৃতি নেই দুই ভাইয়ের কাছে। এমনকি বাবা আছেন কি নেই, সেটাই জানত না কিশোর দুই ভাই আন্দ্রে ও ইভান। হঠাৎ একদিন মা জানান, তাদের বাবা বাসায় এসেছেন। বাবাকে দেখে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন দুই ছেলে। রাতে খাবার টেবিলে বাবা জানান, দুই ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন। সকালে শুরু হয় তাদের যাত্রা। বড় ছেলে আন্দ্রে বাবার সব কথা শুনলেও ছোট ছেলে জেদি ও একরোখা। সে যাত্রাপথে বাবার অনেক কিছুই মেনে নিতে পারে না। এই যাত্রাপথের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে এগোতে থাকে ‘দ্য রিটার্ন’ ছবির গল্প। এটি নির্মাণ করেছেন রাশিয়ান নির্মাতা আন্দ্রেই পেত্রোভিচ জভিয়াগিনৎসেভ। ছবিটির বাজেট কম হওয়ায় এ তথ্য গোপন রেখেছেন নির্মাতা। কম বাজেট হওয়ায় নির্মাতা দীর্ঘদিন গল্প এবং চরিত্র নিয়ে ভেবেছেন। অবসর আছে এমন একজন চিত্রগ্রাহককে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। প্রথম ছবি দিয়ে এই নির্মাতা পেয়ে যান ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের সেরা ছবির পুরস্কার। ‘দ্য রিটার্ন’ দিয়ে ভাগ্য বদলে যায় নির্মাতার।