বৃষ্টি এড়িয়ে এক ফালি রোদ

ঘরে বসে দেখতে পারেন এই তিনটি সিনেমা: ছবি: সংগৃহীত
ঘরে বসে দেখতে পারেন এই তিনটি সিনেমা: ছবি: সংগৃহীত

কয়েক দিন ধরেই আকাশ কালো করে মেঘ জমছে। বৃষ্টি নামছে যখন-তখন। কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, আবার কখনো নামছে ঝুম বৃষ্টি। আবার বৃষ্টি শেষে রোদেরও দেখা মিলেছে।

এমন বৃষ্টির দিন মিঠি কুমারের বেশ পছন্দের। বর্ষার ঘনঘটায় তার মন স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে। অফিস যেতেও ইচ্ছে করে না। শুধু মনে হয়, ছাদে বা আবরণহীন বারান্দায় বসে যদি বৃষ্টি উপভোগ করা যেত!

কিন্তু অফিসে না গেলেও যে মিঠি কুমারের মন মানে না। যাওয়ার পথটায় স্টেশন আছে। ওখানেই যে আছে একজন। শুধু মাইকে যার গলা বাজে। তার স্বর কানে না বাজলে যে জীবনটা আরও খালি খালি লাগে।

ওহ্ হো, দেখুন কাণ্ড! মিঠি কুমারের পরিচয়টাই দেওয়া হয়নি। অবাঙালি মিঠি কলকাতার অদূরেই থাকে। অফিসে যেতে প্রতিদিন ট্রেনে ওঠে। একলা জীবন কাটানো মিঠির আছে এক ভাড়াটে, একটা ছোট বোন আর একজন প্রেমিক। ওই প্রেমিককে প্রায়ই চিঠি লেখেন মিঠি। কিন্তু তার কোনো উত্তর বাড়ির পোস্ট বক্সে জমা পড়ে না। জমা পড়ে মিঠির মনে। চলে কথোপকথন। একলা জীবনের নানান মারপ্যাঁচ পেরিয়ে মিঠি শুধু প্রেমিকের কাছে আশ্রয় খোঁজে। কিন্তু শেষতক কি দেখা মেলে?

এই প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে ‘ইয়োরস ট্রুলি’ ছবিটা পুরো দেখলে। সঞ্জয় নাগের পরিচালনায় ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে অভিনয় করেছেন সোনি রাজদান, পঙ্কজ ত্রিপাঠি প্রমুখ। ক্যামিও চরিত্রে আছেন মহেশ ভাট। একলা মিঠির ‍চরিত্রকে অপরূপ দক্ষতায় পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন সোনি রাজদান। কয়েক মুহূর্তের চরিত্রেও দারুণ মহেশ ভাট। আর পঙ্কজ ত্রিপাঠি তুলনাহীন।

একাকী জীবনেও সংগ্রাম থাকে, প্রেম থাকে। তবে সংগ্রাম ও প্রেম সবচেয়ে খাপ খায় যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। হয়তো যুদ্ধ মানুষের জীবনে সবচেয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করে বলেই প্রেম আরও মহান হয়ে ওঠে। এমন কাহিনিই পাবেন ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য অটোমান লেফটেন্যান্ট’ ছবিতে। জোসেফ রুবেন পরিচালিত ছবিটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি। একজন সামরিক কর্মকর্তা, একজন নার্স ও একজন ডাক্তার—এই তিন চরিত্র ঘিরে ছবির কাহিনি গড়িয়েছে। যুদ্ধের মধ্যেও নার্স লিলির (হেরা হিলমার) প্রেম জাতি-ধর্ম-বর্ণের কোনো বাধা মানে না। এই ছবিতে যেমন নিটোল প্রেম আছে, তেমনি আছে যুদ্ধের নৃশংসতা। আবার সমাজে প্রচলিত পরিচয় ভুলে মানুষের স্রেফ মানুষ হয়ে ওঠার দৃশ্যও আছে। আর আছে চন্দ্রশোভিত রাতে মৃত্যুকে পাশ কাটিয়ে প্রেমের স্তুতি!

অর্থাৎ প্রতিটি প্রতিকূলের উল্টো পিঠেই থাকে অনুকূল। মন্দের পাশাপাশি ভালোও থাকে। তারপরও আজকের পৃথিবীতে ভালো মানুষ খুঁজে বের করতে হয়। সেই খোঁজটাই করছিলেন কলকাতার এক নামকরা সমাজবিজ্ঞানী। নিজের ছেলেকে হারিয়ে মনুষ্যত্ব খুঁজে বেড়ানোর পরীক্ষায় নামেন তিনি। কিন্তু মনুষ্যত্বের খোঁজ কি পাওয়া যাবে?

অতনু ঘোষের ‘এক ফালি রোদ’ ঠিক সেই অনুসন্ধানই করে। ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে অভিনয় করেছেন ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী, অপরাজিতা ঘোষ দাস, যীশু সেনগুপ্ত, টোটা রায়চৌধুরীর মতো বাঘা বাঘা অভিনয়শিল্পী। ছোট চরিত্রেও সাবলীল অভিনয় করেছেন বরুণ চন্দ, অরুণিমা ঘোষ ও রুদ্রনীল ঘোষ।

পুরো ছবিতে মনুষ্যত্ব খুঁজতে গিয়ে নিজেদের জীবনের নানা সত্যিকারের সমস্যায় আটকে যেতে থাকে চরিত্রগুলো। কারও প্রেম ভেঙে টুকরো হয়ে যায়, আবার কারও প্রেমরূপী কাচের ফুলদানি ভেঙে গিয়েও আঠায় জোড়া লাগে। কেউ পায় বই লেখার টোটকা। এভাবে সবাই বেঁচে থাকে একটুখানি আশায় ভর করে। ঠিক যেমনটা স্বাগত (ঋত্বিক চক্রবর্তী) বলেছিল সোমশঙ্কর রায়কে (ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়)। ‘আসলে সবাই এক ফালি রোদের অপেক্ষায় থাকে, স্যার।’

এই করোনাকালে আমরাও তেমনি আছি এক ফালি রোদের অপেক্ষায়। রোগে ক্লিষ্ট জীবনে ওটাই যে বেঁচে থাকার ওষুধ।