জ্যামাইকাতে রিচির সুখের সংসার

রিচি সোলায়মান। ছবি-সংগৃহীত
রিচি সোলায়মান। ছবি-সংগৃহীত

রিচির স্বামী নিউইয়র্কের পুলিশ বিভাগে চাকরি করেন। করোনার দিনেও তাঁকে নিয়মিত বাড়ি থেকে বের হতে হয়। মনটা তাই খুব খারাপ থাকে। জনগণের সেবক বলে কথা, কিছুই করার নেই। মন না মানলেও দেশের স্বার্থে মনকে মানাতেই হয়।

বেশ কয়েক বছর হলো যুক্তরাষ্ট্রের জ্যামাইকাতে বাস করছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী রিচি সোলায়মান। ২০০৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাশেকুর রহমান মালিকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। শুরুতে ঢাকা টু নিউইয়র্ক যাওয়া-আসার মধ্যে ছিলেন তিনি। তারপর একদিন উড়াল দিলেন স্বামীর কাছে। নিজের মতো করে সংসার সাজাতে কোন মেয়ে না চায়! তারপর বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল স্বামী, দুই সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে রিচির সুখের সংসার।

নিউইয়র্কে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় জানুয়ারি মাসে। এরপর থেকে শুরু হয় লকডাউন। স্কুল বন্ধ হয়ে বাড়িতে কাটতে থাকে রিচির সন্তানদের সময়। পুরো পরিবার যখন ঘরবন্দী, তাঁর স্বামী বেচারা চলে যান দায়িত্ব পালন করতে। ভীষণ দুশ্চিন্তা হয় রিচির।

নিউইয়র্কের রাস্তায় শ্রাবন্তী, অপি করিম ও রিচি সোলায়মান। ছবি-সংগৃহীত
নিউইয়র্কের রাস্তায় শ্রাবন্তী, অপি করিম ও রিচি সোলায়মান। ছবি-সংগৃহীত

নিউইয়র্কে করোনা পরিস্থিতি বিশ্বের যেকোনো জায়গার চেয়ে বেশি খারাপ। তাই মানুষের সুরক্ষার জন্য পুলিশকে খুব খাটতে হচ্ছে সেখানে। তবে এই পরিস্থিতির জন্য কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল বলে মনে করছেন রিচি। তিনি বলেন, ‘এখানে করোনা রোগী ধরা পড়ার পরও আমরা তেমন কেয়ার করিনি, যে কারণে আমাদের মূল্যও দিতে হচ্ছে। অথচ নিউইয়র্ক এমন একটা জায়গা, যেখানে অনেক ধরনের মানুষ থাকে। হয়তো ৮০ ভাগ মানুষ বুঝেছে, ২০ ভাগ বোঝেনি। তাদের মাধ্যমে ভাইরাস আরও কয়েক গুণ ছড়িয়েছে।’

লকডাউন পরিস্থিতিতে রিচির বেশির ভাগ সময় কাটছে সন্তানদের সঙ্গে। তাঁরা সঙ্গে থাকলে সময় যে কীভাবে কেটে যায়, সেটা নিজেই টের পান না তিনি। বাচ্চারা বাড়ির পেছনে লাগোয়া উঠানে খেলে, সাইকেল চালাই। তাদের দিকে তাকিয়েই রিচির মধুর সময় চলে যাচ্ছে।

নিউইয়র্কের একটি রেস্তোরাঁয় আড্ডার ফাঁকে মীর সাব্বিরের সেলফিতে শ্রাবন্তী, মাহফুজ আহমেদ, রিচি ও তাঁর স্বামী রাশেক মালিক এবং শামীম শাহেদ। ছবি: সংগৃহীত
নিউইয়র্কের একটি রেস্তোরাঁয় আড্ডার ফাঁকে মীর সাব্বিরের সেলফিতে শ্রাবন্তী, মাহফুজ আহমেদ, রিচি ও তাঁর স্বামী রাশেক মালিক এবং শামীম শাহেদ। ছবি: সংগৃহীত

বাড়িতে ফেরার ১০ মিনিট আগে রাশেক মালিক স্ত্রী রিচিকে জানান। রিচিও সন্তানদের অন্য ঘরে নিয়ে রীতিমতো আটকে রাখেন। কারণ, বাবা এসেছেন শুনলেই ইলমা দৌড়ে গিয়ে কোলে উঠতে চায়। বাইরে থেকে আসার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েকে কোলে নেওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ। রিচি বলেন, ‘রাশেক দ্রুত গোসলখানায় চলে যায়, বেজমেন্টে কাপড় লন্ড্রিতে দেয়। জীবাণুমুক্ত হয়, তারপর বাসার সবার সঙ্গে দেখা করে।’

বাংলাদেশের একসময়কার অনেক অভিনয়শিল্পী এখন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। রিচি জানান, তাঁদের সবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে তাঁর। করোনার এই সময়ে তাঁর কাছে ইতিবাচক হচ্ছে, এমন অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে, যাঁদের সঙ্গে বছরের পর বছর কথা হয়নি, দেখা হয়নি।

স্বামী রাশেক মালিকের সঙ্গে রিচি সোলায়মান। ছবি: সংগৃহীত
স্বামী রাশেক মালিকের সঙ্গে রিচি সোলায়মান। ছবি: সংগৃহীত

রিচি অভিনয় শুরু করেছিলেন শিশুশিল্পী হিসেবে। ১৯৮৯ সালে ‘ইতি আমার বোন’ নাটকে তাঁর প্রথম অভিনয়। বড় হওয়ার পর ১৯৯৮ সালে টনি ডায়েসের বিপরীতে ‘বেলা অবেলা’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। একুশে টিভিতে আহির আলমের ‘প্রেত’ নাটকে অভিনয় করে সবার নজর কাড়েন তিনি। একই সময়ে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলীর বিজ্ঞাপনচিত্রটিও তাঁকে বিশেষভাবে পরিচিত করিয়ে দেয়। ফেরদৌস হাসানের ‘ত্যাগ’ নাটকে কুসুম চরিত্রে অভিনয় করে নিজের অভিনয়প্রতিভা মেলে ধরেন রিচি। এই নাটকে অভিনয়ের জন্য মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের সমালোচক বিভাগে সেরা অভিনয়শিল্পী নির্বাচিত হন তিনি। এরপর শুরু হয় তাঁর শুধুই এগিয়ে চলা।

বিয়ের আগ পর্যন্ত প্রচুর কাজ করেছেন রিচি। বিয়ের পর সেটা কমিয়ে দেন। নিউইয়র্ক থেকে ছুটি কাটাতে ঢাকায় এলে অনুরোধে কিছু কাজ করতে হয়। সর্বশেষ গত বছরের মাঝামাঝি ঢাকায় এসে দু-একটি কাজ করেন তিনি। সেগুলোর মধ্যে ছিল একটি রান্নার অনুষ্ঠান। সেখানে অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনা করেছিলেন তিনি।

টেলিভিশন নাটকের অভিনয়শিল্পী রিচির চলচ্চিত্রেও কাজ করার কথা ছিল। শাহনেওয়াজ কাকলীর ‘নীরব প্রেম’ নামের একটি ছবিতে অভিনয়ের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। এখন পুরোদস্তুর প্রবাসী। তবে দেশের সবাইকে মিস করেন খুব। বিনোদন অঙ্গনের সবার প্রতি একটা মায়া রয়ে গেছে তাঁর। তাই এই করোনার মধ্যে নাটকের অসহায় কলাকুশলীদের জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজে যুক্ত হয়েছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেলেন কেন রিচি? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সন্তানদের সুন্দর ও নিরাপদ ভবিষ্যতের কথা ভেবেছি। স্বামীকেও মিস করছিলাম। তা ছাড়া সংসারটাও নিজের মতো করে সাজাতে চেয়েছি। তাই চলে এসেছি।’