ফেসবুক ছাড়াও তাঁদের চলে

>করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ঘরবন্দী থাকা মানুষের দিনের অনেকটা সময় এখন কাটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এর মধ্যে ফেসবুক এগিয়ে। তবে কয়েকজন তারকা আছেন, যাঁরা এই সময়েও অনুপস্থিত জনপ্রিয় এই যোগাযোগমাধ্যমে। ফেসবুক ছাড়াই কীভাবে কাটছে তাঁদের সময়? চলুন জেনে নিই। লিখেছেন শফিক আল মামুন

মৌসুমী ঘরে বসেই করছেন ঘরে-বাইরের কাজ

মৌসুমী
মৌসুমী

ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম কোথাও নেই চিত্রনায়িকা মৌসুমী। কিন্তু এরপর দিব্যি কেটে যাচ্ছে তাঁর করোনাকালের দিনগুলো। এক মাসের বেশি সময় ধরে স্বামী ওমর সানী ও দুই সন্তান নিয়ে নিজ বাড়িতে রয়েছেন তিনি। এই সময়ে সামগ্রিক বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য তাঁর বিশ্বস্ত মাধ্যম হলো সংবাদমাধ্যম। আর কাছের স্বজন, পরিচিতজনদের খোঁজ নেওয়ার জন্য তিনি ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপের ওপর নির্ভরশীল। মৌসুমী বলেন, ‘কখনো কখনো নিজে রান্না করছি। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে গেম খেলছি। ফাঁকে ফাঁকে টেলিভিশন দেখছি। ইউটিউব, নেটফ্লিক্সে সিনেমা দেখা হচ্ছে। ব্যায়াম করা হচ্ছে। এভাবেই সময় কেটে যায়। তাই সময় কাটানোর জন্য নতুন কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন বোধ করছি না।’

মৌসুমী জানান, তাঁর মা ও দুই বোন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় থাকেন। প্রতিদিন হোয়াটসঅ্যাপে তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন। দেশে থাকা আত্মীয় ও সহকর্মী-শুভাকাঙ্ক্ষীদেরও খোঁজ নিচ্ছেন একইভাবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা ঘটছে, তার সবই জানছেন স্বামী ওমর সানীর বরাতে।

বাড়ির কাজ তো করছেনই, সেই সঙ্গে মৌসুমী কিন্তু বাইরের কাজগুলোও দিব্যি ঘরে বসে সামলে যাচ্ছেন। এই সময়েও প্রতি রোববার এবিসি রেডিওতে রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ‘মৌসুমী হাওয়া’ অনুষ্ঠানটি বাসায় বসেই চালিয়ে নিচ্ছেন এই তারকা। মৌসুমী বলেন, ‘বাসায় বসে হোয়াটসঅ্যাপে অনু্ষ্ঠানটিতে যোগ দিচ্ছি। ভক্তরাও যোগ দিচ্ছেন। গানের পাশাপাশি করোনা সম্পর্কে সচেতনতামূলক কথা শ্রোতাদের জানাচ্ছি। ওই সময়টা আমার খুব ভালো কাটে।’

শাকিব খান
শাকিব খান

নতুন রুটিনে শাকিব খান

গত ২১ মার্চ থেকে ঘরবন্দী হয়ে আছেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিব খান। কখনোই একটানা এত লম্বা সময় বাড়িতে কাটাননি। দীর্ঘ সময় বাড়িতে একঘেয়েমি কাটাতে শাকিব নিজের দিন-রাতকে আলাদা করে নতুন রুটিনে সাজিয়ে নিয়েছেন। কারণ, অনেকের মতো এই অভিনেতা দিনের একটা বড় অংশ তো আর ফেসবুকে কাটাতে পারেন না। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত নন। বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁর যে পেজগুলো রয়েছে সবই পরিচালনা করে শাকিবের একটি দল। তাই নিজে ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রামে সময় না কাটিয়ে সিনেমা দেখে, গান শুনে আর ব্যায়াম করে কাটাচ্ছেন। 

বিশ্বের সামগ্রিক অবস্থার খোঁজখবর এই অভিনেতা রাখছেন টেলিভিশনে দেশ-বিদেশের খবর দেখে। মাঝেমধ্যে বাড়ির নিচের তলায় নিজের অফিসঘরে গিয়েও সময় কাটাচ্ছেন এই অভিনেতা। উল্টেপাল্টে দেখছেন তাঁর জমে থাকা কাজের চিত্রনাট্য। 

প্রথম আলোকে শাকিব খান বলেন, ‘এত দীর্ঘ সময় টানা ঘরে থাকা হয়নি কখনো। যেহেতু করোনা সংক্রমণ রোধে ঘরে থাকাটাই শ্রেয়, তাই ঘরের বাইরে যাচ্ছি না। হাতে সময় অফুরন্ত পাওয়ায় দেশ-বিদেশের প্রচুর সিনেমা দেখছি। ঘরে থাকলেও নিজেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখছি।

প্রতিদিনই ফোনে, হোয়াটসঅ্যাপে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। খোঁজখবর নিতে পারছি। সমস্যা হচ্ছে না।’

ফেরার কথা ভাবছেন তিশা

তানজিন তিশা
তানজিন তিশা

১৮ মার্চ কাজ শেষ করে ঘরে ঢুকেছিলেন অভিনেত্রী তানজিন তিশা। এরপর আর বাইরে বের হননি। মেনে চলছেন করোনা প্রতিরোধের প্রতিটি নিয়ম। বাড়িতেই নানা কিছু করে সময় কাটাচ্ছেন। তবে সেই ‘নানা কিছুটা’ কী? সেটা কিন্তু তিশার ফেসবুকে থাকা ভক্তরা জানতে পারছেন না। অন্য তারকারা যেমন নিজেদের বাড়িতে থাকার সময় নিয়ে নানা অভিজ্ঞতা ফেসবুকের মাধ্যমে সবার সামনে তুলে ধরছেন, এই সুযোগ তিশার নেই। কারণ, এই অভিনেত্রী ফেসবুকে অনুপস্থিত।

তানজিন তিশা বলেন, ‘রোজকার রুটিন বদলে গেছে। এখন প্রতিদিন নিজের ঘর গোছাচ্ছি। ঘরের কাজে আর নিজের পরিচর্যায় সময়টা কাজে লাগাচ্ছি। জিম বন্ধ থাকার কারণে প্রশিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী বাসায় প্রতিদিনই কিছু সময় ব্যায়াম করছি।’

আর সবার সঙ্গে যোগাযোগটা? ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপে নিয়মিত সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন তিনি। তিশা বলেন, তবে এখন ফেসবুকে মানুষ বেশি সরব থাকে। এই সময় সেখানে থাকলে হয়তো আরও ভালো হতো। এই অভিনেত্রী জানালেন, লকডাউনের এই সময়টায় তিনি আবারও ফেসবুকে ফেরার কথা ভাবছেন।

ইমরান শেষ করছেন জমে থাকা কাজ

ইমরান
ইমরান

করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যে এক মাসের বেশি সময় ধরে বাড়ি থেকে বের হননি সংগীতশিল্পী ইমরান মাহমুদুল। তিনি ফেসবুকেও নেই। যে পেজ আছে ফেসবুকে, সেটা দিয়ে শুধু অনুসারীদের নানা বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য জানানো যায়। কিন্তু পেজ থেকে অন্যদের খোঁজখবর নেওয়া আর চলতি ঘটনার বিষয়ে ধারণা পাওয়ার সুযোগ কম। তাহলে কি বাড়িতে থেকে পিছিয়ে পড়ছেন ইমরান? মোটেই না! ইমরান জানান, সবকিছু থেকে একটু বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘরবন্দী থাকার এই সময়টাকে তিনি কাজে লাগাচ্ছেন। অনেক গান তৈরির কাজ আটকে ছিল, একে একে সেগুলো সারছেন তিনি।

ইমরান বলেন, ‘দেশ ও দেশের বাইরের মঞ্চ অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে অনেক কাজ জমেছিল। সেগুলো শেষ করছি। কোনো তাড়াহুড়া নেই। মনের মতো করে সব কাজ করতে পারছি। পাশাপাশি, আমার নিজের ধারা থেকে বেরিয়ে কিছু পরীক্ষামূলক সুরও তোলার চেষ্টা করছি। এর মধ্যে দুটি নতুন গানের সুর তুলেছি।’

ফেসবুকে না থাকলেও অবসরে ইনস্টাগ্রামে ঢুঁ মারেন ইমরান। তিনি বলেন, ‘আত্মীয়স্বজন, সহশিল্পী, কাছের বন্ধুদের সঙ্গে ইনস্টাগ্রাম ও ফোনে যোগাযোগ করছি। আর ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে।’

এসবের বাইরে বাকি সময় বাসায় বসে সিনেমা আর সিরিজ দেখেন ইমরান।