নিঃসঙ্গ সময়ে একাকিত্বের সিনেমাগুলো

করোনাকালে ঘরে বসে এ সিনেমাগুলো দেখতে পারেন। ছবি: সংগৃহীত
করোনাকালে ঘরে বসে এ সিনেমাগুলো দেখতে পারেন। ছবি: সংগৃহীত

২০১২ সালে কৌশিক গাঙ্গুলীর পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল সিনেমা শব্দ। তাতে ঋত্বিক চক্রবর্তী (তারেক) অভিনয় করেছেন শব্দশিল্পীর ভূমিকায়। যিনি সিনেমার জন্য নানা রকম শব্দ তৈরি করেন স্টুডিওতে। এই যেমন রাস্তায় মোটরগাড়ির চলাচল, শুকনো পাতা মাড়িয়ে হেঁটে যাওয়া বা ‍বৃষ্টির পানি পড়ার শব্দ। এসব শব্দ নিয়ে কাজ করতে করতে একসময় অজান্তেই নিজের আলাদা মনোজগৎ তৈরি করে ফেলেন তারেক। শুরু হয় তাঁর নিজের মনোজগতে বিচরণ। সিনেমাটি দেখার আগে জেনে রাখুন, এই সিনেমা ফিচার ফিল্ম ক্যাটাগরিতে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিল।

২০১৯ সালে অভিনেতা কৌশিক গাঙ্গুলীর আরেকটি সিনেমা মুক্তি পায়। কেদারা নামের সিনেমাটিও শব্দ নিয়ে। এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে নিঃসঙ্গ এক মানুষের গল্প, যিনি নিজের সঙ্গে নিজেই কথা বলেন। আবার কখনো এমনভাবে কথা বলেন, মনে হয় অন্য একটা চরিত্র ঠিকই আশপাশে আছে।

এই সিনেমা দেখতে বসার আগে চলুন পরিচিত হই মায়াস্বর বা ভেন্ট্রিলোকুইজমের সঙ্গে। সিনেমায় নরসিংহ (কৌশিক গাঙ্গুলী) নামের এক ব্যক্তিকে একা ঘরে বসে দুজনের মধ্যে কথা বলতে দেখবেন। বেশির ভাগ সময়জুড়ে তিনি কথা বলেন তাঁর ঠাকুমার সঙ্গে। তখন মনে হতে পারে ঠাকুমার চরিত্রটি বুঝি আশপাশেই কোথাও আছে। কিন্তু না। এই চরিত্রও নরসিংহ নিজেই। ঠোঁট না নাড়িয়ে শুধু কণ্ঠ ব্যবহার করে অদৃশ্য চরিত্রের শব্দ করার কৌশলই হলো মায়াস্বর বা ভেন্ট্রিলোকুইজম। সিনেমায় নিঃসঙ্গ নরসিংহের এই মায়াস্বরই একমাত্র সঙ্গী।নরসিংহ জীবনের শেষবেলায় এসে একাকিত্ব কাটাতে আশ্রয় নেন হরবোলা ও ভেন্ট্রিলোকুইজমের। একসময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হরবোলা (পশুপাখির ডাক নকল করেন যিনি) শিল্পী হিসেবে পারফর্ম করতেন।

জীবনে এই কাজ ছাড়া অন্য কিছু আর করেননি তিনি। ফলে স্ত্রীও ছেলেকে নিয়ে ছেড়ে চলে গেছেন। পশুপাখির ডাক নকল করায় পাড়া–প্রতিবেশীরাও ঘরের বাইরে বের হলে টিপ্পনী কাটে। তাই শেষ বয়সে এসে নিজ ঘরেই নিজের মতো করে জগৎ তৈরি করে নেন নরসিংহ। যেখানে না থেকেও আছে নরসিংহের ফেলে আসা শৈশব, ঠাকুমার চা বানানোর টুংটাং শব্দ, স্ত্রীর স্নানের সময় স্নানঘর থেকে ভেসে আসা পানি পড়া, ছেলের খেলনা ঘোড়ার গাড়ি, ঘরের মাঝখানে কেদারায় (চেয়ার) বসে চায়ে চুমুক দিয়ে আর শব্দ করে পত্রিকার পাতা উল্টিয়ে নরসিংহের নিশ্চিন্ত মনে খবর পড়া।

শিল্পী তাঁর সৃষ্ট শিল্পকে ভুলতে পারেন না। তাঁর কাছে তা সন্তানের মতো। মারাঠি ভাষার ২০১৬ সালের নটসম্রাট সিনেমাটাও একই কথা বলেছে। মঞ্চ অভিনেতা গণপাত রামচন্দ্র বেলওয়ালকার (নানা পাটেকার) উইলিয়াম শেক্‌সপিয়ারের নাটকগুলোর চরিত্রে অভিনয় করতেন। কিন্তু অভিনয় থেকে অবসর নেওয়ার পর তাঁর সন্তানদের কাছেই গৌণ হয়ে পড়েন। নিঃসঙ্গ গণপাতের এবার শুরু হয় বাস্তব জীবনের অভিনয়।

করপোরেট সংস্কৃতির চাপে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়া মানুষদের গল্প বলে ২০১৩ সালের হলিউডের সিনেমা হার। নিঃসঙ্গ সময়ে মানুষের বদলে প্রযুক্তির সঙ্গী হয়ে ওঠার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে সায়েন্স ফিকশন ঘরানার সিনেমাটিতে। করোনাকালের নিঃসঙ্গ দিনগুলোতে প্রযুক্তিকে সঙ্গী করে নেওয়ার বেলায় আপনি-আমিও যার উদাহরণ।