'আমি লজ্জিত, বিব্রত' বললেন সেলিম

শহীদুজ্জামান সেলিম। ছবি: সংগৃহীত।
শহীদুজ্জামান সেলিম। ছবি: সংগৃহীত।

সম্প্রতি একটি সুপারশপের ওভিসিতে (অনলাইন ভিডিও কমার্শিয়াল) অভিনয় করেন অভিনেতা এবং শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম। সেটা নিয়েই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সমালোচনার জন্ম হয়েছে। এই মুহূর্তে সব শুটিং স্থগিত। নিয়ম না মেনে শুটিং করায় বিভিন্ন সংগঠনের নেতা–কর্মীরা তাঁর বিরুদ্ধে নিয়মভঙ্গের অভিযোগ তোলেন।

এ বিষয়ে শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নাসিম জানান, ‘এটা তো তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। এটার ব্যাখ্যা তিনি নিজেই দেবেন। এটা নিয়ে সাংগঠনিক কোনো ব্যাখ্যা আমরা এখনই দেব না। তাঁর কাছে বিভিন্ন সংগঠন থেকে বক্তব্য চাওয়া হয়েছে। সেটা তিনি দিলেই তখন আমরা সাংগঠনিকভাবে বিবেচনা করব।’

এ বিষয়ে জানতে ডিরেক্টর গিল্ডের সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘শুনেছি আমাদের একজন নির্মাতা শাখাওয়াত মানিক একটি শুটিং করেছেন। সেটা নিয়ে আমরা এখনো কথাবার্তা বলছি। সম্ভবত এটা কোনো বিজ্ঞাপন নয়, হয়তো ফেসবুকের জন্য কিছু করার কথা ছিল। সংশ্লিষ্ট যারা যারা কাজটি করেছে, সেটা নিয়ে আমরা আন্তসংগঠন এখন বসব। সবার সঙ্গে কথা বলে বোঝা যাবে ব্যাপারটা কী, কবে কীভাবে হয়েছে। সেটা বুঝে তারপর আমরা আন্তসংগঠন থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১১ মে পুবাইলে একটি শুটিংবাড়িতে নাটক নির্মাণকাজ শুরু করেন নির্মাতা আদিবাসী মিজান। অভিনেতা ছিলেন জাহিদ হাসান। তারপর থেকেই এই অভিনেতা এবং নির্মাতা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শুটিং করে তোপের মুখে পড়েন। নির্মাতা জানিয়েছিলেন, ‘৮–৯ মাস আগে নেপালে ঘরকোনা (নাম পরিবর্তন হতে পারে) নামে একটি ঈদ ধারাবাহিকের শুটিং করেছিলাম। সেই গল্পে জাহিদ হাসান গ্রাম থেকে নেপালে যায়। সেই নাটকের দুইটা শট বাকি ছিল। পরে সংগঠন থেকে ফোন দিলে সবাই কাজ অসমাপ্ত রেখেই চলে চলে এসেছি।’

শহীদুজ্জামান সেলিম অভিনীত ওভিসি–টি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে। ভিডিওটিতে শুটিং করা সম্পর্কে এই অভিনেতা মুঠোফোনে বলেন, ‘আমাদের বাসার পাশেই মেহেদী মার্ট নামে একটি দোকান আছে। এক ছাদের নিচে সেখানে সবকিছু পাওয়া যায়। সেখান থেকে আমরা নিয়মিত বাজারসদাই করি। গত ১১ তারিখ রাতে বাজার করতে গেলে সেটার মালিক আমাকে অনুরোধ করে বলেন, সেলিম ভাই, আমাদের ফেসবুক পেজের জন্য আপনি একটু কথা বলে দেন। তখন আমি জিজ্ঞাসা করি কী কথা ভাই? তিনি বলেন, আপনি যে সচেতনভাবে নিরাপদে বাজার করতে ঢুকলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে। মূলত নিরাপদ থেকেই এখানে বাজার করতে পারলেন, সেটাই একটু বলবেন। তখন আমি বলেছি এটা তো ঠিক না, শুটিংয়ের মধ্যে পড়ে। তখন তাঁরা বলেন এটা সচেতনতামূলক ভিডিও ফেসবুকের জন্য। একজন মালিকের কথা তো আর ফেলা যায় না। যেভাবে বাজার করতে গিয়েছিলাম, সেই অবস্থায়ই সচেতনতার কথা বলি।’

শিল্পী সংঘের সভাপতি হওয়ার পর শহীদুজ্জামান সেলিম এবং সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নাসিম। ছবি: সংগৃহীত।
শিল্পী সংঘের সভাপতি হওয়ার পর শহীদুজ্জামান সেলিম এবং সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নাসিম। ছবি: সংগৃহীত।

তিনি আরও বলেন, ‘এখন জাহিদ হাসানের একটি শুটিংয়ের সঙ্গে আমার ফেসবুকের ভিডিওটা নিয়ে অনেকেই জল ঘোলা করার চেষ্টা করছেন। এই নিয়ে মোটামুটি আমাকে অনেকেই লজ্জায় এবং বিব্রত অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

এখন বাজার করতে গিয়েছিলাম, সেই অবস্থায় কথা বলেছি। এমন না যে আমি টাকা নিয়েছি বা আগে থেকে শুটিংয়ের প্ল্যান ছিল। বরং ওই সময়ে মালিকের কাছে আমি সংগঠনের ফান্ডের জন্য অনুদান চাই। তিনি রাজি হন। সেটা নিয়ে শনিবার তাঁর সঙ্গে আলোচনা করার কথা। তা ছাড়া তখন মালিককে মেহেদী মার্ট এবং সারা বেলায় কেনাকাটায় আমাদের শিল্পীদের জন্য ৫ ভাগ ছাড়ের কথা বলে রাজি করাই।’

পরিচালক কে ছিলেন জানতে চাইলে এই অভিনেতা এবং শিল্পীসংঘের নেতা বলেন, ‘সেই অর্থে কেউ পরিচালক ছিলেন না। সেখানকার একটি ছেলে এগুলো দেখছিল। খুব বেশি লোকজনও ছিল না। এখন সচেতনতামূলক অনেক কাজই তো আমাদের ফেসবুকে করতে হয়, অনেকে ভিডিও বার্তা চান, সেগুলোর ক্ষেত্রে আমাদের তেমন কোনো কথাবার্তা ওঠে নাই। কিন্তু এটাকে অনেকে বলছে শুটিং। সে অর্থে এটা কোনো শুটিং ছিল না। কোনো আয়োজনও ছিল না। আমি সেদিন যে বাজার করতে গিয়েছিলাম, সে লিস্ট এখনো আছে।’

নির্মাতা সাখাওয়াত মানিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কোনো পরিকল্পনা করা ছিল না। মূলত এটা শপিং মল খোলা নিয়ে সচেতনতামূলক একটা কাজ।’ এই ওভিসিতে আরও অভিনয় করেন চিত্রনায়ক নিরব, আমান রেজা, চিত্রনায়িকা শিরিন শিলা, ফখরুল বাশার মাসুম প্রমুখ।