আমাকে গানের পাখি বলে ডাকতেন

সাবিনা ইয়াসমীন
সাবিনা ইয়াসমীন

আমাকে গানের পাখি বলে ডাকতেন আজাদ ভাই। একটা সময় ফোন আর মোবাইলে এভাবে সম্বোধন করলেও ইদানীংকালের ফেসবুক কথোপকথনে সেই ডাক অব্যাহত ছিল। তাঁর সুর ও সংগীতে আমি প্রথম গেয়েছিলাম ১৯৬৮ সালে। বেতারের জন্য রেকর্ড করা গানটি ছিল, 'ও নয়ন পাখিরে'।

আজাদ ভাই প্রথম কোন ছবিটার সংগীত পরিচালনা করেছেন, জানা নেই। তবে এটুকু বলতে পারি, তাঁর সব ছবিতে আমি গান করেছি। 'জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো'তে কণ্ঠ দিয়েছিলাম ১৯৭০ সালে। দীর্ঘ সংগীতজীবনে তাঁর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। সব স্মৃতি গান নিয়েই। তিনি টেলিফোন ধরেই কিংবা দেখা হলেই শুরুতে আমাকে গানের পাখি সম্বোধন করতেন। ফেসবুকেও তাঁর সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা হতো। তাঁর খুব ইচ্ছা ছিল, আরও কিছু গানের কাজ করার। আমার সঙ্গে আলাপ করেছিলেন। নানা কারণে হয়ে ওঠেনি। গত বছর সোনারগাঁ হোটেলের একটি অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা। এর মধ্যে মাস দুয়েক আগে যখন অসুস্থ হলেন, তখন তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে অনেক কথা হয়। বললেন, বাসায় এখন, ভালোই আছেন। আমিও ভাবলাম, এখন যেহেতু ভালো আছেন, পরে ফোন করে কথা বলব। এত দিন তাঁর খবর নিলাম না। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ফোন করে দেখি, বিজি বিজি বিজি। এরপর সন্ধ্যায় কাকে ফোন করতে গিয়ে শুনি, তিনি আর নেই। ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই দেখি, আজাদ রহমান নামটা। কী যে কান্না পেয়েছে।

মনে আছে, কলকাতা থেকে এসে আজাদ ভাই রেডিওতে কাজ শুরু করলেন। অনেকের সঙ্গে কাজ করলেও তাঁর কাজগুলো একেবারে অন্য রকম মনে হচ্ছিল, একদমই অন্য রকম। আমার বড় বোনসহ ফেরদৌসী রহমান আপারা যে ধরনের গান গাইতেন, তার চেয়ে একদমই আলাদা। একটা নিজস্বতা আছে। ক্ল্যাসিক্যালে যে তিনি পারদর্শী, তা তাঁর গান শুনে বোঝা যায়। তখন যে ধরনের গান চলত, তিনি মোটেও সে রকম গান বানাতেন না।