বাড়িপালানো শিশুদের গল্প

কেপারনাউম,ফোর হান্ড্রেড ব্লোজ এবং বাড়ি থেকে পালিয়ে সিনেমার পোস্টার
কেপারনাউম,ফোর হান্ড্রেড ব্লোজ এবং বাড়ি থেকে পালিয়ে সিনেমার পোস্টার

আহা শৈশব! কী দুরন্তপনা। নাটাই কিংবা সাইকেলের টায়ার, সুপারিগাছের খোলস কিংবা তিন চাকার গাড়ি বানিয়ে কাঁচা রাস্তা মাতিয়ে তোলা। চরকি হাতে নিয়ে বাতাসের সঙ্গে পাল্লা। মেলা, যাত্রা, দুর্গাপূজায় মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ানো। আর বাড়িতে ফিরলে মা–বাবার কড়া শাসন। ভয়ে বাড়ি না ফিরে পালিয়ে বেড়ানো। এভাবে বাড়ি থেকে পালানোর অভিজ্ঞতায় ভরপুর আমাদের শৈশব। বাড়িপালানো নিয়ে আজ তিনটি ছবির গল্প শোনাব।

বাড়ি থেকে পালানো ছবির কথা ভাবলেই বাঙালি মনে প্রথম যে ছবির দৃশ্য ভেসে আসে, তার নাম বাড়ি থেকে পালিয়ে। শিবরাম চক্রবর্তীর গল্প নিয়ে ঋত্বিক কুমার ঘটক ১৯৫৮ সালে নির্মাণ করেন ছবিটি। আট বছরের দুরন্ত, চটপটে, অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় কিশোর কাঞ্চন। পড়াশোনার ফাঁকে দুষ্টু এই ছেলে লুকিয়ে বই-ও পড়ে। মা কাঞ্চনের দুষ্টুমি মেনে নিলেও তার বাবা বদমেজাজি এবং একরোখা। কাঞ্চন মনে করে, তার বাবা দৈত্য ছাড়া আর কিছু নয়। বাবার শাসনে অতিষ্ঠ হয়ে কাঞ্চন বাড়ি থেকে পালিয়ে রওনা দেয় কলকাতার দিকে।বৈরুতের একটি বস্তিতে পরিবারের সঙ্গে থাকে ১২ বছরের যাইন। বোনের সঙ্গে রাস্তায় শরবত বিক্রি করে। বাকি সময় বোনের সঙ্গে খুনসুটি করেই পার করে। হঠাৎ একদিন জানতে পারে তার আদরের বোনের বিয়ে। বাল্যবিবাহ মেনে নেয় না ছোট যাইন। মা–বাবা তার ওপর চড়াও হয়। বাবা তার গায়ে হাত তোলে। বোনের বিয়ে আটকাতে না পেরে প্রচণ্ড কষ্টে বাড়ি থেকে চলে যায় সে। অভিনয়ের জন্য শরণার্থীশিবির থেকে বেছে নেওয়া হয়েছিল যাইনকে। তার অসাধারণ অভিনয় দর্শকদের মন কাড়ে।

ক্যেপারনাম` ছবিতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্যে জিয়ান। ছবি: সংগৃহীত
ক্যেপারনাম` ছবিতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্যে জিয়ান। ছবি: সংগৃহীত

নাদিন লাবাকির পরিচালনায় 'কেপারনাউম' ছবিটি ২০১৮ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার হয়। জিতে নেয় তিনটি বিভাগে পুরস্কার। অস্কার, গোল্ডেন গ্লোব, বাফটাসহ একাধিক উৎসবে পুরস্কার এবং মনোনয়ন এনে দেয় ছবিটি।

দুষ্টুমি আর কাকে বলে! স্কুলপালানো, সময়মতো স্কুলে না আসা, স্কুলের কাজ বাড়িতে না করা, পালিয়ে শহর ঘোরা, বন্ধুর বাসায় থাকা—এগুলো আন্টনি ড্যানিয়েলের রোজকার কাজ। অনিয়মিত এবং পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে স্যারের কাছে মায়ের মৃত্যুর মিথ্যা কথা বলে সহানুভূতি আদায় করে সে। ১৩ বছর বয়সেই ড্যানিয়েলকে সহ্য করতে হয় পরিবারে সৎবাবা এবং তার পরকীয়া লিপ্ত মায়ের মধ্যে অসন্তোষ, ঝগড়াঝাঁটি। যা তাকে প্রচণ্ড বিষিয়ে তোলে। পরিবারের কারও কাছে কোনো সহানুভূতি না পেয়ে বাড়ি থেকে পালায় ১৩ বছরের এই কিশোর। বিশ্বের ধ্রুপদি সিনেমার জগতে প্রথম দিকে থাকা কিশোরদের নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র 'ফোর হান্ড্রেড ব্লোজ'। ছবির এই কিশোর নায়ক পরিবারের কারও কাছ থেকে সহানুভূতি না পেয়ে অদেখার সন্ধানে সব ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে। কালজয়ী এই ছবি নির্মাতা ফ্রাঁসোয়া ত্রুফোর প্রথম নির্মাণ। ছবিটি কান উৎসবের পাম দরে মনোনয়ন পায়। দুটি শাখায় জিতে নেয় পুরস্কার। অস্কার এবং বাফটায় মনোনয়ন এনে দেয় ছবিটি। বিশ্বের সিনেমাপ্রেমীদের কাছে ছবিটি এখনো সমসাময়িক। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৫৯ সালে।

বিশ্বের সিনেমাপ্রেমীদের কাছে ছবিটি এখনো সমসাময়িক ফোর হান্ড্রেড ব্লোজ। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বের সিনেমাপ্রেমীদের কাছে ছবিটি এখনো সমসাময়িক ফোর হান্ড্রেড ব্লোজ। ছবি: সংগৃহীত