পান থেকে চুন খসেছিল, তারপর...

`দ্য ইনসাল্ট`, `দ্য ফ্যান্টাস্টিক ওমেন` এবং `অফসাইড` ছবির পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত
`দ্য ইনসাল্ট`, `দ্য ফ্যান্টাস্টিক ওমেন` এবং `অফসাইড` ছবির পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত

অনেক ঘটনা থাকে যেগুলো আমরা হরহামেশাই এড়িয়ে যাই। চোখে দেখেও দেখি না। দেখলেও সেভাবে গুরুত্ব দিই না। আমাদের ভাবটা এমন থাকে যে এই আর এমনকি? এই বিষয়গুলো যখন সিনেমায় মূল উপজীব্য হয়ে ওঠে, তখন আমাদের চোখ যেন কপালে ওঠে। সে রকম বিষয়কে কেন্দ্র করেই এই তিনটি ছবির গল্প শুরু হয়েছে।

শুরুটা যেন পান থেকে চুন খসেছিল মাত্র। সেই গল্পগুলোই পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। চলচ্চিত্র উৎসবের জুরি সদস্যরাও গল্পগুলোতে নতুনত্ব থাকায় প্রশংসা করেন।
রাস্তায় একটি ভবনে কাজ করছিলেন ইয়াসের আবদুল্লাহ। এমন সময় হঠাৎ তাঁর মাথায় ওপর দোতলার পাইপ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। তিনি ওপরে গিয়ে সেই বাসার মালিক টনি হান্নাকে বিষয়টি জানিয়ে পানির পাইপ নতুন করে মেরামত করতে বলেন। তাঁর কথা শুনে হান্না কোনো গা করে না। ইয়াসের আবদুল্লাহ নিচে এসে এমনভাবে পাইপটি অন্য একটি পাইপের সঙ্গে লাগান, যেন পানি রাস্তার কারও গায়ে না পড়ে। হান্না রাগে এই পাইপ মেরামতকাজ তাঁদের সামনেই হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে দেন। এই সামান্য বিষয় নিয়েই লেবাননের টনি হান্না এবং ফিলিস্তিন থেকে লেবাননে এসে বসত গড়া প্রতিবেশী ইয়াসের আবদুল্লাহর মধ্যে মান–অপমান করা নিয়ে মামলা–মোকদ্দমা। এই ছবির নাম 'দ্য ইনসাল্ট'।


গল্পটি শেষ পর্যন্ত দেশের মানুষের মূল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। জিয়াদ দৌরিনি অসাধারণ চরিত্রায়ণের ছবিটি জিতে নেয় কানের সেরা অভিনেতার পুরস্কার। ছবিটি অস্কারেও বিদেশি ভাষার ছবি বিভাগে মনোনয়ন পায়। ড্রামা এবং থ্রিলার জনরার এই ছবি ২০১৭ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে পামদর পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পায়।

`দ্য ইনসাল্ট` ছবির একটি দৃশ্যে অপমান নিয়ে মামলা-মোকাদ্দমার পর মুখোমুখি দুজন। ছবি সংগৃহীত।
`দ্য ইনসাল্ট` ছবির একটি দৃশ্যে অপমান নিয়ে মামলা-মোকাদ্দমার পর মুখোমুখি দুজন। ছবি সংগৃহীত।


জাফর পানাহিকে বলা হয় ইরানিয়ান সিনেমার বিদ্রোহী কবি। প্রতিটি ছবিতে তিনি দেশের অসামঞ্জস্য বিষয়গুলো তুলে ধরেন। ২০০৬ সালে তুলে ধরেন তেমনই একটি গল্প। দেশের মাটিতে ফুটবল খেলা হবে। ইরান ও বাহরাইনের মধ্যে খেলা। দেশে যখন বইছে স্টেডিয়ামে খেলা দেখা নিয়ে উত্তেজনা, তখন মেয়েদের মন বিষণ্ন। কারণ, ইরানের মাটিতে নারীদের জন্য খেলা দেখা নিষিদ্ধ। তরুণীদের একটি দল এই খেলা সরাসরি দেখতে চায়। মেয়েদের সেই খেলা দেখার গল্প নিয়েই পাহানি ২৫০০ ডলারে বানিয়েছেন 'অফসাইড' ছবি।

`অ্যা ফ্যান্টাস্টিক ওমেন` ছবির এই দৃশ্যটি নির্মাতা রূপক অর্থে দেখিয়েছেন। ছবি সংগৃহীত।
`অ্যা ফ্যান্টাস্টিক ওমেন` ছবির এই দৃশ্যটি নির্মাতা রূপক অর্থে দেখিয়েছেন। ছবি সংগৃহীত।


একটি ডিজিটাল ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে ৩৯ দিন ধরে শুটিং করেন নির্মাতা। ছবিটি মুক্তির পর জাফর পানাহির অন্য ৪টি ছবির মতো অফসাইড ছবির ওপরও সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ছবিটিতে ইরানে নারীদের বৈষম্য তুলে ধরাই নির্মাতার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ছবিটি ইরানের বক্স অফিসের সব রেকর্ড ভেঙে দেওয়ার দিকে এগোচ্ছিল। এমন সময় ছবির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মাত্র দুই দিন পর ছবিটি ডিভিডিতে বের হয়। সনি পিকচারস, ইউএস ডিস্ট্রিবিউটর ইরানের সরকারকে ছবিটি মুক্তি দিতে অনুরোধ করে।
বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল থেকে সেরা ছবিসহ চারটি পুরস্কার জিতে নেয়। এরপর থেকেই আলোচনায় চলে আসে ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া আরেকটি ছবি 'দ্য ফ্যান্টাস্টিক ওমেন'। ২০১৮ সালে অস্কারে বাজিমাত। বিদেশি ভাষার ছবির বিভাগে জিতে নেয় সেরা ছবির পুরস্কার। চিলি থেকে প্রথমবারের মতো এই সম্মান এনে দেয় ছবিটি। ছবিটি পরিচালনা করেছেন সেবাস্তিয়ান লেলিও। ছবিটির গল্প ট্রান্সজেন্ডার মেরিনাকে কেন্দ্র করে। একাকী অর্লেদ্রের জীবনে আসে এই ট্রান্সজেন্ডার মেরিনা। তার একমাত্র এই সঙ্গীর সঙ্গেই বেশি সময় কাটতে থাকে। হঠাৎ একদিন রাতে বাসার সিঁড়িতে পড়ে মাথায় আঘাত পায় অর্লেদ্র। মেরিনা হাসপাতালে নিয়ে বুঝতে পারে সে মারা গেছে। একাকী ভয়ে নিরীহ মেরিনা রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। পুরো গল্পে মেরিনাকে চিলির কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়। ছবিটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার অনেক কিছুকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।