ঈদের দিন শুটিং করবেন তাঁরা

‘ভুল’ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের দৃশ্যে মৌসুমী হামিদ ও নির্মাতা রওনক হাসান। ছবি সংগৃহীত
‘ভুল’ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের দৃশ্যে মৌসুমী হামিদ ও নির্মাতা রওনক হাসান। ছবি সংগৃহীত

গতকাল ২৩ মে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের দৃশ্য ধারণে অভিনেতা রওনক হাসানের ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি টেনশনে অভিনয় থেকে সরে দাঁড়ান। করোনায় শুটিং স্থগিত থাকায় ৬২ দিন পর ক্যামেরার সামনে আসতে রীতিমতো ভয়ই লাগছিল এই অভিনেতার। 

রওনক হাসান বলেন, ‘শুটিং শুরুর আগে প্রথমে মৌসুমী (মৌসুমী হামিদ) আমাকে একটা দৃশ্য করতে বলেছিল। তখন আমি নিজেই টেকনিক্যালি অ্যাভয়েড করেছি। কারণ অনেক দিন অভিনয়ের চর্চাই নাই। শুটিং করি না, সে জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে নার্ভাস লাগছিল। নিজেকে শুটিংয়ে ইউজ টু করার জন্য মৌসুমীকে ব্যবহার করেছি। ওর শর্ট দিয়ে প্রথমে শুরু করেছি।’ কথাগুলো শেষ করেই বেশ কিছু সময় ধরে হাসেন এই অভিনেতা। শুটিংয়ের জন্য ক্যামেরা বা লাইট কোনো বাধা হয়নি। মোবাইল ক্যামেরা এবং ঘরের কিছু এক্সট্রা লাইটের ওপর একমাত্র ভরসা করেই প্রথম দিনের শুটিং রাত ১২ টার দিকে শেষ করেছেন।


ফ্ল্যাটের চিলেকোঠায় ভাইকে নিয়ে থাকেন অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ। করোনায় শুটিং স্থগিত। বাইরের জগতের সঙ্গে দুই মাসের বেশি কোনো যোগাযোগ নেই। পরিচিতজনদের মধ্যে অভিনেতা রওনক হাসানের সঙ্গে তাঁর প্রায়ই দেখাসাক্ষাৎ হয়। তার কারণ, এই অভিনেতা পরিবার নিয়ে এই ভবনেই চিলেকোঠার ঠিক নিচে থাকেন। দেখা হলেই বর্তমান নাটক, সিনেমা, করোনা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়। কিন্তু না বলা থেকেই যায় মনের কোণে জমে থাকা আফসোস। আফসোস শুটিংয়ের, শুটিং করতে না পারার। একদিন চারপাশে তাঁদের অনেক সহকর্মীর শুটিংয়ের কথা বলতে গিয়ে দুজনই বলেন, আমাদেরও কিছু করা উচিত। যেই কথা সেই কাজ। একবাক্যে রাজি হয়ে যান এই দুই তারকা। সেদিনই দুজন গল্প শেয়ার করেন। রওনক হাসানের কাছে মৌসুমীর গল্পটি বেশ পছন্দ হয়। পাণ্ডুলিপি এই অভিনেতা নিজেই করেন। এভাবেই শুরু হয় ‘ভুল’ নামের স্বল্পদৈর্ঘ্যের প্রি-প্রোডাকশন।


স্বল্পদৈর্ঘ্যের শুটিং গতকাল থেকে শুরু হয়েছে মৌসুমী হামিদের বাসায়। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শুটিং বিরতির ফাঁকে কথা হয় এই শুটিংয়ের কলাকুশলীদের সঙ্গে। এই দলে রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ এবং রওনক হাসানের স্ত্রী। রওনক লাইটসজ্জায়, ক্যামেরা এবং নির্দেশনায় মোবাইল ক্যামেরার সামনে ছিলেন মৌসুমী হামিদ। প্রতিদিন মোবাইল ক্যামেরার সামনে আসা হলেও এই প্রথম মোবাইল ক্যামেরার সামনে অ্যাকশন শুনলেন এই অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘৬৩ দিন পর শুটিংয়ে ফিরলাম। নিজের কাছে খুবই ভালো লাগছে। দীর্ঘদিন পর নিজের জগতে ফেরা। লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন শুনে আমি খুবই এক্সাইটেড। মনে হচ্ছে ফিল্মের শুটিং করছি। এই শুটিং নিয়ে আমি সত্যি এক্সাইটেড। তা ছাড়া আমার গল্পে প্রথমবারের মতো নির্দেশনা দিচ্ছেন রওনক ভাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি আর রওনক ভাই একই বিল্ডিংয়ে থাকি। প্রায় সব সময় ভাইয়ের সঙ্গে হয়। ছাদে আমরা কথা বলি। যখন দেখছিলাম চারপাশে অনেকেই বাসায় শুটিং করছেন, তখন আমাদের মনে হয় কিছু একটা করতে হবে। আমি এবং রওনক ভাই মিলে গল্প ভাবতে থাকি। আমি একটা গল্প বললে রওনক ভাই এবং ভাবির খুবই পছন্দ হয়।’

মৌসুমী হামিদ। ছবি সংগৃহীত
মৌসুমী হামিদ। ছবি সংগৃহীত

তিন দিন ধরে চলবে এই শুটিং। শেষ হবে ঈদের দিন। এই প্রসঙ্গে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আমরা তো চাইলেও ঈদের দিন বের হতে পারব না। আমাদের আত্মীয়স্বজন থাকলেও কারও সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারব না। এটাই সবার জন্য নিরাপদ। ঈদের দিন বাসায় আমরা আমরাই থাকব, খাব, ছাদে ঘুরব। এবারের ঈদটা সবার জন্য আলাদা। এই ফাঁকেই ঈদের দিন শুটিং করব। আমাদের তো এখন কোনো কাজ নেই।’

এর আগে তিনটি কাজের নির্দেশনা দিলেও এবারই প্রথম মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে শুটিং করছেন রওনক হাসান। তিনি আরও বলেন, ‘দুই মাস ধরে কোনোমতেই মানসিকভাবে স্থির থাকতে পারছিলাম না। লেখালেখির চেষ্টা করেছি কিন্তু হয়নি। মাঝেমধ্যে ছাদে গেলেই মৌসুমীর সঙ্গে দেখা হতো। আমাকে দেখে ও বলত, পরিচালক পরিচালক। তখন হঠাৎ দুজন মিলেই সিদ্ধান্ত নিই কিছু একটা করব। এভাবেই শুরু করে দিই।’ স্বল্পদৈর্ঘ্যেটিতে অভিনয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমি এখানে একজন ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করছি। পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেতা। পুরো গল্পটি মৌসুমীকে নিয়ে।’

রওনক হাসান। ছবি সংগৃহীত
রওনক হাসান। ছবি সংগৃহীত

করোনায় বাসায় একা থাকা একটি মেয়ের একাকিত্বের গল্প নিয়ে এই চলচ্চিত্র। একটি দৃশ্য ছিল জোরে মৌসুমীর গলা চেপে ধরতে হবে। শুটিংয়ে লোক না থাকায় দৃশ্যটি মৌসুমী হামিদের ভাইকে দিয়ে করানো হয়। তাঁর ছোট ভাই কোনোভাবেই বোনের গলা জোরে চেপে ধরতে পারছিল না। এই প্রসঙ্গে রওনক বলেন, ‘সে এত আদর নিয়ে বারবার বোনের গলাটা ধরেছিল, মনে হচ্ছে রোম্যান্টিক দৃশ্য। কোনোভাবেই জোরে গলা চেপে ধরা হচ্ছিল না। পরে তাকে ধমক দিলে সে ভয়ে জোরে গলা চেপে ধরে।’
গল্পটি লেখার প্রসঙ্গে অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ বলেন, ‘করোনার এই সময়ে শুটিং করতে হবে, তাই চরিত্রগুলো এমনভাবে ভাবা, যেন তাদের কাছে এসে কথা বলতে না হয়। চরিত্রদের যেন ঘনিষ্ঠ হতে না হয়। সে জন্য আমার গল্পের চরিত্রদের সামাজিক সম্পর্কই দূরত্বের।’