নিঃসঙ্গতার সঙ্গী নীরব ভালোবাসা

ঘরে বসে দেখতে পারেন এই তিন সিনেমা। ছবি: সংগৃহীত
ঘরে বসে দেখতে পারেন এই তিন সিনেমা। ছবি: সংগৃহীত

প্রেম যে চারপাশে সাড়া ফেলে দেবে, এলাকায় থেকে থেকে সেই প্রেম নিয়ে রব উঠবে, বন্ধুমহলের আড্ডার বিষয় হবে, নিদেনপক্ষে সহকর্মীরা ফিসফাস করবে বা ইনবক্সে টুংটাং করে সেই প্রেম নিয়ে কথা চালাচালি হবেই—এমন কিন্তু কোনো শর্ত নেই। এমনও হতে পারে যে প্রেমটা হলো, কিন্তু তার কোনো আওয়াজই আপনার কান ছুঁতে পারল না। শুধু আপনি কেন, শহরের একটি কাকও জানল না!

২০১৮ সালের তেমনি তিনটি নীরব ভালোবাসার গল্প আপনাকে কানে কানে চিৎকার করে বলবে, ঝংকার শুনতে পাননি, তাতে কী, এখানেও হৃদয়ে সমান তীব্রতায় জলোচ্ছ্বাস আছড়ে পড়ে, এ পাড়–ও পাড় ভেঙে একাকার হয়ে যায়। দেড় কোটি মানুষের শহর মুম্বাইয়ে বড় পর্দার এক সফল তারকার খ্যাতি, অর্থ, সম্মান, সন্তান—সব আছে। অ্যাকশন-কাট আর ক্লিক ক্লিক শেষ হয়ে গেলেই তাঁকে যেন তাড়া করে বেড়ায় নামহীন এক একাকিত্ব। অমর কুমার নামের সেই বেঁচে থেকেও জীবনকে খুঁজে ফেরা মানুষকে বড় পর্দায় জীবন্ত করেছেন নীরাজ কবি।

‘ওয়ানস অ্যাগেইন’ সিনেমার একটি দৃশ্য। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
‘ওয়ানস অ্যাগেইন’ সিনেমার একটি দৃশ্য। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

অন্যদিকে বিধবা উদ্যোক্তা তারা শেঠিকে পর্দায় রক্ত–মাংসের শরীর দিয়েছেন শেফালি শাহ। তারার রান্না করা খাবার স্পর্শ করে অমরের হৃদয়। তারপর মিষ্টি ফোনালাপ থেকে দেখা, টিফিন ক্যারিয়ারের ভেসে আসা গন্ধ থেকে শরীরের গন্ধ, স্পর্শ। আর একদিন সব এলোমেলো হয়ে যায় ঝোড়ো হাওয়ায়। তারপর? ‘ওয়ানস অ্যাগেইন’ নামের এই সিনেমার বিশেষত্ব হলো এখানে অনেক কথাই বলা হয় না। অনেক কিছুই থেকে যায় আবছা, অধরা। কথায় বলে, ভালোবাসা হলে নাকি সেই সুর, গন্ধ বাতাসে ভাসে। সেটা তখন অনুভব করতে হয় সবটা সত্তা দিয়ে। ভারতীয়-জার্মান পরিচালক কানওয়াল শেঠি তাই অনুভবটা ক্যামেরাবন্দী করার চেষ্টা করেছেন। বাকিটা ছেড়ে দিয়েছেন দর্শক, মানে আপনাদের ওপর।

প্রতিদিন সকালে ৫৭ বছর বয়সী ছাপোষা সরকারি চাকরিজীবী মিঠি কুমারের বুকটা কেঁপে ওঠে। ট্রেনস্টেশনে এক অজানা ঘোষক যেন তাঁকেই উদ্দেশ্য করে প্রতিদিন কত কথা বলে চলে। কিন্তু খুঁজতে চাইলে আর দেখা মেলে না। চিঠিতে সেই অজানা মানুষকেই মিঠিরূপী সোনি রাজদানের কাগজে–কলমে স্পষ্ট হয় হৃদয়ের গোপন কুঠুরিতে পরম যত্নে তুলে রাখা কত কথা। তারপর সেসব কথা পৌঁছে যায় এক ঠিকানায়। মাঝেমধ্যেই পঙ্কজ ত্রিপাঠি হাজির হয়ে আপনাকে চমকে দেবে। আর মাত্র একটা দৃশ্যে হিসেব এলোমেলো করতে দেখা দিয়েছেন সোনি রাজদানের সত্যিকারের জীবনসঙ্গী মহেশ ভাট। ‘ইয়োরস ট্রুলি’ নামের এই সিনেমা একাকিত্বের এক নতুন মানে নিয়ে হাজির হবে আপনার সামনে। সিনেমা শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু মনের এক কোণে খামোখাই লেপ্টে থাকবে একাকিত্বের সুবাস।

‘ন্যুড’ সিনেমার অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীরা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
‘ন্যুড’ সিনেমার অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীরা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

মারাঠি ভাষার ছবি ‘ন্যুড’। মূল দুই চরিত্রের দুজনই নারী, আর সম্ভবত তাঁদের কাউকেই আপনি চেনেন না। আক্কার স্বামী পরকীয়া, স্ত্রীকে মারধোর করা—এসব নিজের অধিকার মনে করে। ছেলেকে নিয়ে একদিন পালিয়ে যায় আক্কা। ছেলের পড়াশোনার খরচ মেটাতে একটা একাডেমিতে ন্যুড চিত্রশিল্পীর মডেল হিসেবে কাজ শুরু করে সে। আক্কার ছবি এঁকে খুব ভালো ফল করে শিক্ষক হয়ে যায় ওখানকারই এক ছাত্র জয়রাম। সে জানে, সে যতটা না ভালো আঁকিয়ে, তার মডেল হিসেবে আক্কা তার চেয়ে ঢের বড়। আর তাই শিল্পী হিসেবে সে–ও তার বেশখানিক ভাগ পেয়েছে। জয়রাম আর আক্কার সম্পর্কটা যে ঠিক কী, আপনি যেন ধরতে গিয়েও ঠিক ধরতে পারবেন না। এর ভেতর নাসিরউদ্দিন শাহ আপনার ভাবনার জগৎকে জোরে একবার ধাক্কা দিয়েই চলে যাবে। মূলত থিয়েটারের শিল্পী কল্যাণী মুলেকে আপনি হয়তো আগে চিনতেন না, কিন্তু এই সিনেমা শেষ করার পর তাঁকে ভুলতে আপনার সময় লাগবে।

একাকিত্বের দিনগুলোতে নীরব ভালোবাসার সুর খুঁজতে ঘরে বসে দেখে নিতে পারেন এ তিন সিনেমা।