করোনা জয় করে ফিরলেন পরিচালক ও চিকিৎসক স্ত্রী

করোনাভাইরাসের চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার সময় পরিচালক আকরাম খান ও তাঁর চিকিৎসক স্ত্রী লায়লা আফরোজ। ছবি: সংগৃহীত
করোনাভাইরাসের চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার সময় পরিচালক আকরাম খান ও তাঁর চিকিৎসক স্ত্রী লায়লা আফরোজ। ছবি: সংগৃহীত

‘সবার কাছে ফিরে আসতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। সবার ভালোবাসা ও দোয়া আমাকে আরও বেশি কৃতজ্ঞ করেছে।’ করোনা জয় করে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে এভাবেই বললেন পরিচালক আকরাম খান।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৯ মে ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন পরিচালক আকরাম খান ও তাঁর স্ত্রী চিকিৎসক লায়লা আফরোজ। হাসপাতালে চিকিৎসার ১২ দিনের মাথায় আজ মঙ্গলবার বিকেলে তাঁরা দুজন বাসায় ফিরেছেন।

সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে আকরাম খান বলেন, ‘হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রথম দিন বিকেলে শ্বাসকষ্ট বেড়েছিল। পরে আবার ঠিক হয়ে যায়। তবে শরীরটা দুর্বল ছিল, এখনো দুর্বল। খাওয়াদাওয়া বাড়াতে হবে। প্রোটিন–জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। তবে সুস্থ হয়েছি—এটাই সবচেয়ে বেশি আনন্দের।’

আকরাম খান জানান, ‘আমার স্ত্রী লায়লা আফরোজ আমার মতো অতটা দুর্বল নয়। সে মানসিকভাবেও ভীষণ শক্ত। আমার কেন জানি মনে হয়, আমাদের দেশের নারীদের জীবন পুরুষের চেয়ে অনেক সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিক।’

এই করোনা অভিজ্ঞতায় আকরাম খানের কিছু উপলব্ধিও হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে চিনি খাওয়া পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। লবণ খাওয়া একেবারে কমিয়ে দিতে হবে। সুন্দর সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করতে হবে। প্রকৃতির কাছে থাকাটাও জরুরি।’

হাসপাতাল থেকে ফিরলেও আগামী এক সপ্তাহ আকরাম খান ও তাঁর স্ত্রীকে আইসোলেশনে থাকতে হবে। দুই সন্তান মা-বাবার সঙ্গে থাকলেও আপাতত দেখাসাক্ষাৎ দূর থেকে হবে। করোনায় আক্রান্ত হলেও ভয় পাওয়া যাবে না। মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে বলে জানালেন আকরাম খান। তিনি বলেন, ‘মানসিক শক্তিটা রাখতে হবে। জ্বর মনে হলেই টেস্ট করে নিশ্চিত হতে হবে, আদৌ করোনা কি না। সতর্ক থাকতে হবে। মাথাব্যথা, জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাবেন, চারবেলা ভ্যাপার নিতে হবে, চারবার হালকা কুসুম গরম চা পান করতে হবে। ঘাবড়ানোর কিছু নেই। শুধু একটাই সমস্যা, যদি মনে হয় শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কিংবা বেশি খারাপ লাগছে, তখনই হাসপাতালে যেতে হবে কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ ছাড়া ঘাবড়ানোর কোনো কারণ নেই। আমি মনে করি, জন্ডিস এর চেয়েও কঠিন অসুখ। আমার বিশ্বাস, করোনা বেশি দিন থাকবে না।’

আকরাম খান জানান, রোজার ঈদের কয়েক দিন আগে থেকে জ্বর ও সারা শরীর ব্যথা। ব্যথার অবস্থা এমন যে পা ফেলতে পারছিলেন না। এরপর মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে স্ত্রী, মেয়েসহ তিনজনের করোনা পরীক্ষার নমুনা দিয়ে আসেন। ২৮ মে জানতে পারেন, স্বামী-স্ত্রী দুজন করোনা পজিটিভ।

পরিচালক আকরাম খানের স্ত্রী লায়লা আফরোজ সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক। এই করোনায় তাঁকে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। আকরাম খান জানান, স্ত্রী লায়লা আফরোজ অনেক সাবধান ছিলেন। সব ধরনের সুরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে, পিপিই পরে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, করোনায় আক্রান্ত হতে হয়েছে।

কথায় কথায় আকরাম খান জানিয়ে রাখলেন, নতুন একটি ছবির কাজ শুরুর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছেন। সব ঠিকঠাক হয়ে গেলে ‘নকশিকাঁথার জমিন’ ছবির শুটিং আগামী অক্টোবরে শুরু করতে চান।

১৯৯৬ সালে বানিয়েছিলেন প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘অধ্যায়’। এরপর বানিয়েছেন শতাধিক টেলিভিশন নাটক। পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ঘাসফুল’ ও ‘খাঁচা’ বানিয়ে প্রশংসা যেমন কুড়িয়েছেন, তেমনি অর্জন করেছেন একাধিক সম্মাননাও।