পর্দার বাইরেও 'হিরো' সোনু

পরিযায়ী দিনমজুরদের বাসে তুলে বিদায় জানাচ্ছেন সোনু সুদ
পরিযায়ী দিনমজুরদের বাসে তুলে বিদায় জানাচ্ছেন সোনু সুদ

শুরুতেই উঠে এল করোনাকালে সোনুর সত্যিকারের ‘হিরো’ হয়ে ওঠার কথা। সরকারের এই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার প্রসঙ্গে সোনু সুদ বলেন, ‘টেলিভিশনের পর্দায় দেখলাম হাজার হাজার মানুষ একপেট খিদে নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে বাড়ি ফিরছেন। বৃদ্ধ বাবা-মা, শিশুদের কোলে নিয়ে তাঁরা রাস্তায় নেমে পড়েছেন। সেই যন্ত্রণাভরা, অসহায় মুখগুলো আমায় দারুণভাবে নাড়া দেয়। মনে হলো, এসব মানুষের দিকে এখনই সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে।’ তাই তো নিজ উদ্যোগে বাস, ট্রেন, এমনকি উড়োজাহাজে করেও এ পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ২০ হাজার পরিযায়ী দিনমজুর ও তাঁদের পরিবারকে বাড়ি পাঠিয়েছেন তিনি।

অভিনেতা সোনু সুদের এই দাতব্যকাজের খবর সবখানে ছড়িয়ে গেছে। ভারতের কোথাও সোনুর ভাস্কর্য গড়ে তোলা হচ্ছে, আবার কোথাও তাঁর নামে রাখা হচ্ছে নবজাতকের নাম। এসবই মানুষের ভালোবাসা, আশীর্বাদ। আর এসব পাথেয় করেই আগামী দিনগুলোতে এগিয়ে যেতে চান সোনু। বললেন, ‘বাড়ি ফিরে অনেকের ফোন পাই। তাঁরা কান্নাভেজা গলায় আমায় বারবার আশীর্বাদ করেন। আমি মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসা পাচ্ছি। আর কী চাই?’

সোনু সুদ
সোনু সুদ

সোনু সুদ কখনোই বলিউডের প্রথম সারির তারকা ছিলেন না। তাঁর চলচ্চিত্রজীবনের শুরুর দিকের অধ্যায় ভীষণ সংগ্রামের। ১৪ বছর নিজের পরিচয় গড়ে তোলার জন্য পরিশ্রমের পর পায়ের তলায় শক্ত মাটি পান তিনি। করোনাকালে হাজার হাজার মানুষের জীবনসংগ্রাম দেখে নিজের সেই অতীতের দিনগুলো আবার সোনুর স্মৃতিতে হানা দেয়।

প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ফিল্ম জগতের বাইরে থেকে এলে মোটামুটি সবাইকে স্ট্রাগলের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এখানে বাইরের কেউ সহজে জায়গা গড়তে পারে না। আমাকেও তাই একটা সুযোগের জন্য অনেক সংগ্রাম-সংঘর্ষ করতে হয়েছে।’

পড়াশোনা করে প্রকৌশলী হওয়ার কথা ছিল সোনুর। স্নাতক-স্নাতকোত্তর করেছিলেন এই বিষয়ে। তাঁর অপেক্ষায় ছিল বাবার সাজানো ব্যবসা। কিন্তু সবকিছু ছেড়ে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের উদ্দেশে মুম্বাইয়ে পাড়ি দেন দাবাংখ্যাত এই অভিনেতা। টেলিফোনিক আড্ডায় উঠে আসে সোনুর বাবা-মায়ের কথা। সোনু বলেন, ‘বাবা-মা আমাকে খুব প্রেরণা ও সাহস দিয়েছেন। বিশেষ করে মায়ের কথা বলব। আমার মা (সরোজ সুদ) স্কুলশিক্ষিকা ছিলেন। আমি যখন মাকে আমার স্বপ্নের কথা বলি। তিনি প্রথমবারেই মেনে নিয়েছিলেন। বলেছিলেন, “যাও নিজের স্বপ্ন পূরণ করো।”’ মায়ের মৃত্যু আজও তাড়া করে সোনুকে। মায়ের প্রসঙ্গ উঠতেই ভিজে গলায় তিনি বলেন, ‘মায়ের মৃত্যুর পর পৃথিবী আমার কাছে অর্থহীন লাগছিল। আশুতোষ গোয়ারিকারের যোধা আকবর ছবিটি মুক্তির আগে মা মারা যান। এই ছবির প্রিমিয়ারের সময় আমার পাশের চেয়ারটা মায়ের জন্য খালি রেখেছিলাম। হয়তো উনি আমার পাশে বসে সিনেমাটা দেখেছেন। মায়ের মৃত্যুর পর আমি সিদ্ধান্ত নিই যে আর অভিনয় করব না। তখন বাবা আমাকে বোঝান, এভাবে সবকিছু ছেড়ে দিলে মা-ই সব থেকে কষ্ট পাবেন।’

আমার মায়ের খুব ইচ্ছে ছিল সোনুর কেনা গাড়িতে চড়বেন। তাই সামর্থ্য অনুযায়ী একটা সেকেন্ডহ্যান্ড গাড়ি কিনেছিলেন। সোনু বলেন, ‘মাকে আনতে গাড়িটা এয়ারপোর্টে পাঠাই। কী যে খুশি হয়েছিলেন মা! সেই গাড়িটা আমি আজও যত্ন করে রেখে দিয়েছি।’

আজও মায়ের দেখানো পথে হাঁটছেন সোনু। মা নাকি তাঁকে বলে গিয়েছিলেন, একজন মানুষ তখনই সফল, যখন তিনি অন্যের বিপদে পাশে দাঁড়ান।