বৃষ্টিস্নাত বিকেলে সুশান্তের শেষকৃত্য, কাঁদছে মুম্বাই

সুশান্তের সঙ্গে একটা ছবি পোস্ট করে শাহরুখ লিখেছেন, ‘ও আমাকে খুব পছন্দ করত।’ ছবি: ফেসবুক থেকে
সুশান্তের সঙ্গে একটা ছবি পোস্ট করে শাহরুখ লিখেছেন, ‘ও আমাকে খুব পছন্দ করত।’ ছবি: ফেসবুক থেকে

দিল্লি টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পড়তেই থিয়েটারের দিকে ঝোঁকেন তিনি। নাচও শেখেন। অভিনয়ের জন্য ‘বিদায়’ বললেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংকে। গেলে মুম্বাই। গেলেন, দেখলেন ও জয় করলেন। অল্প কয়েক বছরে বিহারের রাজধানী পাটনার ছেলে সুশান্ত সিং রাজপুত হয়ে যান বলিউডে উজ্জ্বল এক তারা। রোববার হঠাৎ সেই তারা খসে পড়ল। বড় অসময়ে চলে গেলেন ৩৪ বছরের তরুণ। সোমবার মুম্বাই শহরেই হলো সুশান্ত সিং রাজপুতে শেষযাত্রা। অসময়ে খসে যাওয়া তারার বেদনায় যেন মুম্বাইয়ের আকাশও কেঁদেছে। ঝমঝমে বৃষ্টি। কেঁদেছে অগণিত মানুষ, ফেলে যাওয়া সহশিল্পী, বন্ধু-স্বজনেরা।


সোমবার বৃষ্টিস্নাত বিকেলে মুম্বাইয়ের ভিলে পার্লেতে পবনহংস শ্মশানে শেষকৃত্য হলো অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের। সোমবার মুম্বাইয়ের স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটা নাগাদ তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। শেষকৃত্যের যাবতীয় নিয়মকানুন পালন করেন সুশান্তের দুই বোন ও বাবা। করোনা-সতর্কতায় সুশান্তের শেষকৃত্যে হাজির থাকার জন্য ২০ জনকে অনুমতি দিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। সূত্র: এনডিটিভি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইন্ডিয়ান টাইমস, মুম্বাই মিরর

সুশান্ত সিং রাজপুত। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
সুশান্ত সিং রাজপুত। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

ছেলের শেষ বিদায় দেওয়া এবং শেষকৃত্যের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতার জন্য সোমবার সকালেই মুম্বাইয়ে এসে পৌঁছান সুশান্তের বাবা কৃষ্ণকুমার সিং ও পরিবারের সদস্যরা। মুম্বাইয়ে নেমেই হাসপাতালে পৌঁছে যান সুশান্তের পরিবারের সদস্যরা। রোববার রাতেই মুম্বাইয়ের ড. আর এন কুপার মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয় সুশান্তের। সোমবার সকালে প্রতিবেদন দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শেষকৃত্যের আগপর্যন্ত হাসপাতালেই রাখা ছিল তাঁর মরদেহ।

বিকেলে হাসপাতাল থেকে পবনহংস শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয় সুশান্তের মরদেহ। তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য হাজির বলিউডের অনেকেই। ছিলেন শ্রদ্ধা কাপুর, রণবীর সুরি, বিবেক ওবেরয়, কৃতি স্যানন, একতা কাপুর, বরুণ শর্মাসহ অনেকেই। কিন্তু তাঁদের শ্মশানের ভেতরে যেতে অনুমতি দেওয়া হয়নি।

শিল্পা শেঠির সঙ্গে। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
শিল্পা শেঠির সঙ্গে। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

শ্মশানের ভেতরে যেতে অনুমতি না মিললেও বাইরে থেকে এবং শবযাত্রায় থেকে শেষবারের মতো অকালে ঝরে যাওয়া তরুণটিকে বিদায় জানান বলিউডের সহশিল্পী, বন্ধুরা। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সুশান্তকে নানাভাবে স্মরণ করেছেন বলিউডের নানা প্রজন্মের তারকারা। এক ভিডিও বার্তায় ‘ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’তে ধোনিরূপী সুশান্ত সিং রাজপুতের বাবা চরিত্রে অভিনয় করেন অনুপম খের। ভিডিওতে তিনি সুশান্তের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আর বলেন, ‘যখন একাকিত্ব, বিষণ্ণতা আমাদের চেপে ধরে, তখন অর্থ, সাফল্য কোনো কিছুরই কোনো মানে থাকে না। আসুন, আমরা অন্যকে বুঝি, অন্যের কথা মন দিয়ে শুনি। অন্যের দুঃখকে নিজের দুঃখ মনে করি। মানুষের জীবনে দুঃখ, বিষণ্ণতা ভাগ করার মানুষ সবচেয়ে জরুরি। সবকিছুর আগে জরুরি।’

একটি চলচ্চিত্রের দৃশ্যে সুশান্ত সিং। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
একটি চলচ্চিত্রের দৃশ্যে সুশান্ত সিং। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

সুশান্তের সঙ্গে একটা ছবি পোস্ট করে শাহরুখ লিখেছেন, ‘ও আমাকে খুব পছন্দ করত। ওর অভাব আমরা সবাই বোধ করব। ওর এনার্জি, ওর হাসিমুখ, ওর চটপট কথা বলা—এগুলো সহজে ভোলা যাবে না। ওর আত্মার শান্তি কামনা করছি।’ সুশান্তের একটা ছবি পোস্ট করে আনুশকা শর্মা লিখেছেন, ‘আমি আজ দুঃখী। সুশান্ত এক তরুণ আর দুর্দান্ত অভিনেতার নাম। আমি শুধু একটা কথা ভেবেই চলেছি যে যে মানসিক সংকটের ভেতর দিয়েই যাক না কেন, ও কারও কোনো সাহায্য পায়নি! এটা কেমন সময়?’ অভিনেত্রী জ্যাকলিন ফার্নান্দেজ একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে সুশান্ত ও জ্যাকলিন নাচের অনুশীলন করছেন। দেড় ঘণ্টা টানা অনুশীলনের পরও সুশান্ত বেশ হাসিখুশিভাবেই মজা করে সাক্ষাৎকার দিলেন। জ্যাকলিন লিখেছেন, ‘এটা কী শুনলাম, সুশ! আমি কেবল এই চঞ্চল, পরিশ্রমী, উদ্যমী, হাসিখুশি, এনার্জিটিক, সেটে মজা করা সুশান্তকে মনে রাখতে চাই, সারা জীবন।’ বরুণ ধাওয়ান লিখেছেন, ‘সুশান্তের মতো গুণী আর পরিশ্রমী শিল্পী খুব কম জন্মে। আমরা খুব ভালো বন্ধু ছিলাম। এই মুহূর্তে কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই। সৃষ্টিকর্তা তাঁকে শান্তিতে রাখুন। তাঁর পরিবারকে শক্তি আর ধৈর্য দিন।’

সুশান্ত সিং রাজপুত। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
সুশান্ত সিং রাজপুত। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

করণ জোহরের মন্তব্য ছিল অন্য রকম। তিনি লিখেছেন, ‘সুশান্তের মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী। আমরা দায়ী। আমি গত কয়েক বছর ওর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করার জন্য অপরাধবোধে ভুগছি। হতাশা, বিষণ্ণতা, দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার অভাবে আজ এমন হলো। আমি আর এই ভুল করব না। আসুন, আমরা সবাই সবাইকে বুঝি।’