নিজ আঙিনায় চাষবাস

>নতুন স্বাভাবিক অবস্থায় বদলে যাচ্ছে কাজের ধরন, জীবনযাপন। তারকাশিল্পীদের অনেকেই এখনো কাজে নিয়মিত হননি। লকডাউনের সময় পাওয়া লম্বা অবকাশ একেকজনের কেটেছে একেক রকম। কয়েকজন তারকা অখণ্ড অবসরে বাড়ির আঙিনায় মন বসিয়েছেন। নিজ উঠানে, ছাদে কিংবা বারান্দায় গড়ে তুলেছেন ফল ও সবজির বাগান। লিখেছেন মনজুরুল আলম
ববিতা। ছবি: আনন্দ
ববিতা। ছবি: আনন্দ

নিজের বাগানের শাকসবজি খান ববিতা

গ্রামের বাঁশঝাড়, পাখি, চারপাশের সবুজ খেত মুগ্ধ করত এই অভিনেত্রীকে। কৃষকদের দেখে কতবার যে ভেবেছেন, ‘ইশ্‌ যদি কৃষক হতাম!’ শৈশব থেকেই গ্রামীণ কৃষির প্রতি প্রবল আগ্রহ খ্যাতিমান অভিনেত্রী ববিতার। সেই ইচ্ছা থেকেই ববিতা ঢাকার গুলশানে নিজ বাড়ির আঙিনায় গড়ে তোলেন ফুল, ফল আর সবজির বাগান। সেগুলোর নিয়মিত পরিচর্যা করা তাঁর দিনের প্রধান কাজগুলোর একটি।

প্রতিদিন ঘুম থেকেই উঠেই কানাডাপ্রবাসী ছেলে অনীকের সঙ্গে কথা বলেন ববিতা। এই সময় হেঁটে হেঁটে ভিডিওতে ছেলেকে বাগান, পাখি আর নিজ হাতে ফলানো সবজিগুলো দেখান। করোনার কারণে বাইরে বের হওয়ার উপায় নেই। এখন এ অভিনেত্রীর বড় সঙ্গী এই বাগান। ফোনে কথা বলার সময়ও ববিতা তাঁর ছাদবাগানের পরিচর্যা করছিলেন। মুঠোফোনে বলেন, ‘শৈশব থেকেই কৃষির প্রতি আমার অসম্ভব টান। কাজের ফাঁকে একটু সময় পেলেই বাসায় ফুলের বাগান করতাম, সবজি চাষ করতাম। সেগুলোই এখন নেশায় দাঁড়িয়েছে। আমার বাগান থেকেই এখন প্রায় দিনই শাকসবজি, ফল খাওয়া হয়।’

কুমার বিশ্বজিৎ। ছবি: সংগৃহীত
কুমার বিশ্বজিৎ। ছবি: সংগৃহীত

কুমার বিশ্বজিতের ছাদে থোকায় থোকায় আঙুর

থোকা থোকা আঙুর ঝুলে আছে। তার চারপাশে জাম্বুরা, আমড়া, ডুমুর, চেরি, মালবেরি, সফেদাসহ বেশ কিছু ফলের গাছ। তার পাশেই শোভা বাড়াচ্ছে লাল, গোলাপি, হলুদসহ বিভিন্ন রকমের ফুল। এই সব নিয়েই ঢাকার উত্তরায় সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের ছাদবাগান। এই গায়ক বলেন, ‘নিয়মিত আমার বাগান থেকে ফল খাই। এ বছর ২০টির বেশি আম খেয়েছি। প্রচুর আঙুর ফল ধরেছে। কয়েক বছর ধরে লেবু, কাঁচা মরিচ, পুদিনাপাতা কিনতে হয় না। সময় কাটানোর জন্যও যেমন ভালো, তেমনি আমার ক্রিয়েশনের জন্যও যদি বলি, তাহলে প্রকৃতি আমাকে অনেক কিছু শেখায়।’

ছেলেবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল নিজ বাড়িতে বাগান করবেন। ঢাকায় ভাড়া বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাটে মনমতো বাগান করা হয়ে উঠছিল না। পরে একসময় নিজের বাড়ি হলে এই গায়ক বাসার ছাদসহ এক কাঠার মতো জায়গায় ফল ও সবজির বাগান করেছেন। করোনায় চারপাশের মানুষের যখন গৃহবন্দী অবস্থায় সময় কাটছে, তখন এই গায়ক নিয়মিত রেওয়াজের পাশাপাশি বড় একটা সময় কাটিয়ে দিচ্ছেন চাষবাসে।

জয়া আহসান। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
জয়া আহসান। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

বাগানের আম পেড়ে খান জয়া আহসান

কী নেই অভিনেত্রী জয়া আহসানের বাসার ছাদবাগানে। চালকুমড়া, মরিচ, শজনে, কতবেল, সফেদা, বেরি ও ভেষজ, নানা রকম গোলাপগাছ থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শাকসবজি, ফল ও ফুলগাছে ছেয়ে গেছে তাঁর বাগান। এই শহরে উঁচু উঁচু দালানের মধ্যে জয়ার ইস্কাটনের বাসার এই এক টুকরা ছাদবাগান যেন তাঁর স্বস্তির আশ্রয়।

দীর্ঘদিন ধরে একটু একটু করে বাড়ির ছাদে এই বাগান গড়েছেন জয়া ও তাঁর মা। অনেক আগে থেকেই প্রকৃতির সঙ্গে সখ্য এই অভিনেত্রীর। শুটিংয়ে গেলে গাছ আনতে ভোলেন না। নিজেই মালি এ বাগানের। নিয়মিত দুই ঘণ্টার বেশি সময় বাগানের পরিচর্যা করেন। যেদিন আবাদ ভালো হয়, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবাইকে জানাতে ভোলেন না। কোনো দিন শাক, তো কোনো দিন শসা-লেবু—নিজ হাতে ফলানো এসব সবজি, ফলমূল যেন এক পরম পাওয়া!

বাগানের পরিচর্যা নিজে করতেই পছন্দ করেন এই অভিনেত্রী। বাগানের সবজি নিজেরা যেমন খান, তেমনি অন্যদেরও উপহার হিসেবে পাঠান জয়া। এ বছর সবচেয়ে ভালো আম নিজের গাছ থেকেই খেয়েছেন তিনি। কোন গাছে কী লাগবে, কত দিনের মধ্যে ফল দেবে, সেগুলোও এখন জয়া আহসান বলে দিতে পারেন। জয়া বলেন, ‘সবুজের মাঝে থাকতে ভালো লাগে। আমার বাগান অন্যদের মতো সাজানো–গোছানো না। বাগান থেকে কোনো আগাছা, গাছের পাতা, ডাল ফেলতেও কষ্ট লাগে। আমি শপিং করি না। গাছ কিনি। গাছ উপহার পেতেও আমার ভালো লাগে। বাগানের অনেক গাছ দেশ-বিদেশের অনেক জায়গা থেকে সংগ্রহ করা। লকডাউনের সময় বাগানটা আমাকে রিফ্রেশ করে।’

মৌসুমী। ছবি: সংগৃহীত
মৌসুমী। ছবি: সংগৃহীত

ফলে ফলে মৌসুমীর ছাদ

ঢালিউডের জনপ্রিয় ওমর সানী ও মৌসুমী দম্পতি তাঁদের গুলশান লেকপাড়ের ডুপ্লেক্স বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ছাদবাগান। সেখানে আম, লেবু, পেয়ারা, কামরাঙাসহ বেশকিছু ফলের গাছ রয়েছে। সকাল থেকে দিনের বিভিন্ন সময় গাছগুলোর পরিচর্যা করে করোনার সময়টা বেশ কেটে যাচ্ছে এই অভিনেত্রীর। ব্যস্ততা আর করোনা পরিস্থিতির কারণে সেভাবে গ্রামে যেতে না পারলেও এই বাগান থেকেই শান্তির খোঁজ করেন তিনি।

মৌসুমী মনে করেন, মানুষের প্রতি ভালোবাসা এখান থেকেই শুরু হতে পারে। প্রকৃতি মানুষকেই নয়, পুরো বিশ্বকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তিনি বলেন, ‘নিজের এবং অন্যের জন্য হলেও গাছ লাগানো জরুরি। আমরা কেউই থাকব না, কিন্তু গাছ থেকে যাবে। আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে ছায়া দেবে, ফল দেবে।’