প্রস্তুত সিনেমাগুলো মুক্তির বিকল্প ভাবনা

করোনা মহামারির কারণে প্রায় চার মাস বন্ধ দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলো। নতুন সিনেমা মুক্তি দেওয়া নিয়ে দোটানায় আছেন প্রযোজক ও পরিচালকেরা। করোনা থেকে শিগগিরই মুক্তি পাওয়া যাবে না, বর্তমান পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তা–ও বলতে পারছেন না কেউ। নতুন ছবিগুলো নির্মাণ শেষে ফেলে রাখতেও চান না তাঁরা। কারণ, সবকিছু স্বাভাবিক হলেও দর্শক সিনেমা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে যাবেন, এ রকম নিশ্চয়তা নেই। তাই ছবিগুলো মুক্তির জন্য বিকল্প মাধ্যম হিসেবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কথা ভাবছেন অনেকেই।


গত মার্চ মাসে মুক্তির কথা ছিল শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ টু, ঊনপঞ্চাশ বাতাস, জ্বীন, বিশ্বসুন্দরী, নীল মুকুটসহ বেশ কিছু ছবি। একই সঙ্গে মুক্তির জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল পবিত্র ঈদুল আজহার ছবি। করোনা থামিয়ে দেয় সেগুলোকে। ১৮ মার্চ থেকে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি, প্রদর্শক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সমিতিগুলো প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এই পরিস্থিতিতে প্রেক্ষাগৃহে ছবি মুক্তির অনিশ্চয়তার কারণে বিকল্প মাধ্যমে ঊনপঞ্চাশ বাতাস মুক্তির কথা ভাবছেন নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। তিনি বলেন, 'সিনেমা হল কবে খুলবে, আমরা জানি না। হল খুললেই মানুষ হলে যেতে চাইবে না। কিন্তু আমরা চাই অনেক মানুষ জড়ো হয়ে সিনেমা দেখবে। এই মুহূর্তে এ চাওয়া অমূলক। সে জন্য হলের বিকল্প কিছু চিন্তা করেছি। এ নিয়ে এখনই বিস্তারিত বলতে চাই না। তবে ওটিটি (ওভার দ্য টপ) মাধ্যমকে মাথায় রেখেই আমরা এগোচ্ছি।' নাদের চৌধুরী পরিচালিত জ্বীন ছবিটি নিয়ে কী ভাবছেন নির্মাতারা? উত্তরে প্রযোজক আবদুল আজীজ বলেন, 'পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেব। অনলাইনের কথা মাথায় আছে। তবে এই মুহূর্তে ছবি মুক্তি নিয়ে কিছু ভাবছি না।'
রাজধানীর বলাকা ও আনন্দ সিনেমা হলে এখনো ঝুলছে বিশ্বসুন্দরী ছবির ব্যানার। সেখানে লেখা, সিয়াম আহমেদ ও পরীমণি অভিনীত ছবিটি ২৭ মার্চ মুক্তি পাবে। চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত এ ছবি এখনো আটকে আছে মার্চে। তবে মুক্তি প্রসঙ্গে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট মাছরাঙা টেলিভিশনের অনুষ্ঠানপ্রধান আরিফ রহমান বলেন, 'ছবিটি হলে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এখন যেহেতু অনলাইন মার্কেট অনেক বিস্তৃত, সেখানকার ব্যাপারেও আমরা ভাবছি। টাকার চেয়ে আমাদের কাছে আপাতত জরুরি হচ্ছে দর্শক। প্ল্যাটফর্ম পেয়ে গেলে আমরা অনলাইনেই মুক্তি দিতে পারি। তবে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে চাই।'


পবিত্র ঈদুল ফিতরে মুক্তির কথা ছিল শাকিব খান ও বুবলী অভিনীত বিদ্রোহী ছবিটির। বিক্ষোভ নামে আরেকটি ছবির কাজ প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। এ দুই ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সেলিম খান বলেন, 'আমরা সিনেমা বানিয়েছি হলের জন্য। হল চালু হলেই মুক্তির সিদ্ধান্ত নেব। তবে পরিস্থিতি যদি ভালো হয়, তখন পরিস্থিতির শিকার হয়ে বিকল্প মাধ্যম হিসেবে অনলাইনে প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার কথা ভাবতে পারি। কারণ, অনলাইনেও এখন অনেক দর্শক আছেন। সেখানে অনেক ছবিই মুক্তি পাচ্ছে।'

পরিচালক মতিন রহমান মনে করেন, যে ছবিগুলো প্রস্তুত এবং নির্মিতব্য, সেগুলোর লক্ষ্য ছিল প্রেক্ষাগৃহ। তবে করোনার কারণে পরিস্থিতি বদলেছে। ছবি বানিয়ে রেখে ফেলে রাখার চেয়ে বিকল্প পদ্ধতিতে মুক্তির কথা ভাবতে পারে প্রযোজকেরা। তিনি বলেন, 'হল চালু করলেও দর্শক আসবেন কি না, সেটাও দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিকল্প মাধ্যমে যেতে চাইলে যেমন ঝুঁকি আছে, তেমনি সম্ভাবনাও আছে। কারণ, দিন দিন বিশ্বের মানুষ ঘরে বসে সিনেমা দেখায় অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে।