আবুল হায়াতের শুটিংয়ে চিত্রগ্রাহক তাঁর স্ত্রী

আবুল হায়াত ও তাঁর স্ত্রী মাহফুজা শিরিন। ছবি: সংগৃহীত
আবুল হায়াত ও তাঁর স্ত্রী মাহফুজা শিরিন। ছবি: সংগৃহীত

নাটকের চিত্রগ্রাহক হিসেবে দেখা দিলেন আবুল হায়াতের স্ত্রী মাহফুজা শিরিন। ‘স্বপ্ন নয়’ শিরোনামের এই নাটকের পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী। নাটকে আবুল হায়াতের অংশের সব দৃশ্য ধারণ স্ত্রী করে দিয়েছেন। শুধু নাটক নয় এই করোনায় আবুল হায়াতের যে কয়টি সচেতনতামূলক কাজের ভিডিও চিত্র দেখা যায়, সবগুলোর চিত্রগ্রাহক ছিলেন স্ত্রী মাহফুজা শিরিন।

পরিচালকের চাওয়া গল্পে আবুল হায়াতকেই দরকার। কিন্তু করোনায় যে তিনি ঘর থেকে বের হন না। উপায় কী? তারপরও পরিচালক চেয়েছিলেন শুধু চিত্রগ্রাহককে অভিনয়শিল্পীর বাসায় নিয়ে গিয়ে দৃশ্যধারণ সেরে নেবেন। এই উদ্দেশ্য সফল হলো না। আবুল হায়াত জানিয়ে দিলেন, তিনি নিজেই দৃশ্য ধারণ করে পাঠিয়ে দেবেন। সেভাবেই কাজটি হয়েছে।

স্ত্রী মাহফুজা শিরিন চিত্র গ্রহণের কাজটি বেশ উপভোগ করেছেন বলে জানালেন আবুল হায়াত। শুধু তা–ই নয়, বেশ দক্ষতার সঙ্গে এ কাজটি করেছেন বলেও জানালেন অভিনয়শিল্পী, নাট্যকার ও পরিচালক আবুল হায়াত। আর পুরো কাজটিতে তিনি মুগ্ধও হয়েছেন। প্রথম আলোকে শনিবার দুপুরে আবুল হায়াত বললেন, ‘শর্ট ডিভিশন করে নিয়েছিলাম। আমার স্ত্রী মোবাইল ক্যামেরায় দৃশ্য ধারণের কাজ নিখুঁতভাবে, নিপুণ হাতে করেছে, এটা অনেক বড় ব্যাপার। তা ছাড়া ক্যামেরা নড়চড় করেনি।’

ঘরে একজন ক্যামেরা পারসন পেয়ে গেলেন। পরিচালক আবুল হায়াতের কাছে জানতে চাই, কেমন করেছেন তিনি, ‘তার চেষ্টা, ভালো লাগাটা আমার ভালো লেগেছে। কাজ করার সময় মনে হয়েছে, সেও বেশ উপভোগ করছে। ক্যামেরায় তাকিয়ে সে আমার পজিশন ঠিক করেছে, তারপর প্রপস ঠিক আছে কি না সেগুলো দেখেছে, একজন পেশাদার চিত্রগ্রাহকের মতোই আচরণ করেছে। সংলাপ শুরু আর শেষে শুধু বলেছি, আর ক্যামেরার রেকর্ড বার্টনে টিপে দেবে, এটা তো করেনি। সবই করেছে, আশপাশের সবই খেয়াল করেছে। আমাকে এও বলেছে, তোমার এই জায়গাটা অন্ধকার লাগছে, লাইটটা জ্বালিয়ে দিই? আমি বলছি দাও। তার মানে আমি শুধু ফ্রেমটা বলে দিয়েছি, আর সেভাবেই ধরে রেখেছে, তা নয়। এটাকে টাইমলি অন করা এবং পারফেক্টলি ধরে রাখা, এটা সত্যিই খুব ভালো করেছে। আমরা তো ফিক্সড ফ্রেমে কাজ করি, এটাও সেভাবেই করেছে। সব মিলিয়ে কাজটা সে সুন্দরভাবে করেছে।’

আপনার ঘরে অভিনয়শিল্পী, নাট্যকার, পরিচালক সবই ছিল, সিনেমাটোগ্রাফার মনে হয় ছিল না। এবার কি তা–ও পেয়ে গেলেন? প্রশ্ন শুনে হাসলেন আবুল হায়াত। বললেন, ‘একদম তাই। আমি ভাবলাম, যা অবস্থা পরিবারের সবাই মিলে ঘরের মধ্যে একটা নাটক বানিয়ে ফেলতে পারি। এখানে আমি আছি, ওখানে শাহেদ-নাতাশা আছে, আমেরিকাতে বিপাশা আছে, ডিওএইচএসে তৌকীর আছে, তাদের ছেলেমেয়েরা আছে—একটা নাটক কিন্তু বানিয়েই ফেলা যায়। বানিয়েও ফেলতে পারি।’

আবুল হায়াত ও তাঁর স্ত্রী মাহফুজা শিরিন। ছবি: সংগৃহীত
আবুল হায়াত ও তাঁর স্ত্রী মাহফুজা শিরিন। ছবি: সংগৃহীত

কথা হয় আবুল হায়াতের স্ত্রী মাহফুজা শিরিনের সঙ্গে। চিত্রগ্রাহক হওয়ার অনুভূতি কেমন ছিল? ‘খুব গরম। এক দিকে ঘামছি, আরেক দিকে ক্যামেরা চালাচ্ছি। এর মধ্যে হয়তো আবার শুনতে হচ্ছে, এটা হচ্ছে না, এভাবে করো, সেভাবে করো। আমি তো কোনো দিন করিনি, তবে সুন্দর একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে।’

মাহফুজা শিরিন বললেন, ‘শুটিংয়ের এসব তো দেখতে দেখতে বুড়া হয়ে গেলাম, ভালোই লাগে, আমার খারাপ লাগে না। এই কাজটা করতে বেশ ভালো লেগেছে। আমি খুব উপভোগ করেছি। মোবাইলের ক্যামেরা এমনি চালাই সেটা এক জিনিস, কিন্তু যখন নাটকের জন্য চালাচ্ছিলাম তখন মনে হচ্ছিল, একটা কাজ করছি, অন্য রকম অভিজ্ঞতা। গতকাল যখন এনটিভিতে নাটকটি দেখলাম ভালোই লাগল। এ রকম সুযোগ যদি আসে, আরেকটা করতে পারি। সত্যি খুব ভালো লেগেছে, ওই সময়টা খুব ভালো কেটেছে।’

‘স্বপ্ন নয়’ নাটকটি এনটিভির বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তৈরি হয়। গতকাল তা প্রচারিত হয়। এই নাটকে আবুল হায়াত ছাড়াও জাকিয়া বারী মম, আনিসুর রহমান মিলন, ইরফান সাজ্জাদ অভিনয় করেছেন।