পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশায় ডাবিংশিল্পীরা

করোনাকালে খুব একটা কাজ নেই কণ্ঠ-অভিনয়শিল্পীদের। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশায় তাঁরা। ছবি: সংগৃহীত
করোনাকালে খুব একটা কাজ নেই কণ্ঠ-অভিনয়শিল্পীদের। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশায় তাঁরা। ছবি: সংগৃহীত

দেশে ডাবিংশিল্প বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে কণ্ঠ–অভিনয়শিল্পী হিসেবেও একটি পেশা তৈরি হয়েছে। বিদেশি সিরিয়াল, কার্টুন, অ্যানিমেশন, বিদেশি সিনেমা, বিজ্ঞাপন, সিনেমাসহ ডাবিং কিংবা কণ্ঠ অভিনয়-সংশ্লিষ্ট নানা কিছুর সঙ্গে কাজ করছেন তাঁরা। গত মার্চ মাস থেকে করোনা বিস্তারের পরে তাঁদের যেমন পড়তে হয়েছে চ্যালেঞ্জের মুখে তেমনি ধীরে ধীরে সেটি উতরে ওঠারও চেষ্টা করছেন তাঁরা।

এই করোনার সময়ে দীপ্ত টেলিভিশনে হোম কোয়ারেন্টিন পদ্ধতি মেনে ‘বাহার’ নামে একটি বিদেশি সিরিজে কণ্ঠ দেওয়ার কাজ চলেছে। সিরিজটি ১১ জুলাই প্রচার শুরু হবে। সব নিরাপত্তা মেনেই তাঁরা এ কাজটি করেছেন বলে জানিয়েছে দীপ্ত টিভির ডাবিং বিভাগ। এই বিভাগের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দর্শকদের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই মূলত আমরা এই করোনার সময়েও অফিস কোয়ারেন্টিন মেনে কাজ করে যাচ্ছি। এতে কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হয়তো আমরা হচ্ছি কিন্তু দর্শকের ভালোবাসার কাছে তা কিছুই না। আমরা মনে করি, আমরা দর্শককে এই অস্থির সময়ে কিছুটা হলেও ভালো কিছু উপহার দিতে পারব।’
দুরন্ত টিভিও কণ্ঠ–অভিনয়ের কাজ করছে খুবই স্বাস্থ্যসম্মতভাবে। এই সময়ে কাজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে এ কে আজাদ বলেন, ‘স্টুডিওতে কাজ করতে গেলে একটা রিস্ক থাকে। তবে আমি এখন পর্যন্ত দুরন্ত ও দীপ্ত দুই জায়গায় কাজ করেছি, তাদের নিরাপত্তাব্যবস্থা ভালো ছিল। আমাকে বাসা থেকে পিক করছে।’ তবে তিনি মনে করেন, গত তিন মাসে কণ্ঠ অভিনয়শিল্পীদের জন্য মূল চ্যালেঞ্জের জায়গায়াটা হয়েছে টিকে থাকা। কারণ, গত তিন মাসে তেমন কোনো কাজ হয়নি। অনেকে ঘরে বসে নানাভাবে কণ্ঠ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তা খুব একটা সুফল বয়ে এনেছে, এমনটি নয়।

বাংলাদেশে কেউ চাকরিভিত্তিক আবার কেউ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কণ্ঠ দিয়ে থাকেন। কেউ আবার এটাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন। সারা মাসে কণ্ঠ দিয়ে যে আয় হয় তাতেই চলে যায় সংসার। যাঁদের এটাই একমাত্র পেশা তাঁদের জন্য বিষয়টা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জের। ফ্রিল্যান্সার কণ্ঠ–অভিনয়শিল্পী মেহেজাবীন মুমু বলেন, ‘পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কাজে আসলে নামছি না। তবে আমাদের মধ্যে যাঁদের এই কাজটা না করলেই নয়, মানে যাঁদের ফ্রিল্যান্সিং করেই সংসারটা চলে, তাঁদের জন্য একটু চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়াচ্ছে।’

বাংলাদেশে কণ্ঠ অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে একট বিশাল অংশ থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত। এখানে যেহেতু এখনো থিয়েটার পেশাদার নয়, তাই থিয়েটার করার পাশাপাশি তাঁরা অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য অনেকেই কণ্ঠ অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। চ্যালেঞ্জের মুখে তাঁরাও। থিয়েটারকর্মী ও কণ্ঠ–অভিনয়শিল্পী রামিজ রাজু বলেন, ‘সবচেয়ে যেটা বড় ক্রাইসিস, সেটা হলো আমরা যাঁরা এই কাজটা করে টিকে থাকি, বিশেষ করে থিয়েটারকর্মীরা, তাঁরা টিকে থাকার সংগ্রামে অনেকটা পিছিয়ে গেছি। অনেকের জন্য এই সময়টা খুবই ক্রাইসিস হিসেবে সামনে এসেছে।’

আবার স্টুডিওগুলো ভয়েস অ্যাক্টরদের কণ্ঠে মুখর হয়ে ওঠার অপেক্ষায়। ছবি: সংগৃহীত
আবার স্টুডিওগুলো ভয়েস অ্যাক্টরদের কণ্ঠে মুখর হয়ে ওঠার অপেক্ষায়। ছবি: সংগৃহীত

এস আর কে স্টুডিওসের ভয়েস অ্যাক্টিং বিভাগের ডিরেক্টর ও থিয়েটারকর্মী সামিউল জীবন বলেন, ‘গত আড়াই–তিন মাস কাজ বন্ধ থাকার কারণে ভয়েস অ্যাক্টররা খুব সংকটময় সময় পার করছেন । কাজ না থাকার কারণে জীবিকা নির্বাহ যেমন কঠিন হয়ে পড়েছে, তেমনি শিল্পচর্চাটাও হুমকির মুখে। কারণ, আয়ের বিকল্প আর কোনো পথ নেই। তা ছাড়া আমাদের কাজগুলো অনেক অ্যারেঞ্জমেন্ট করে করতে হয়। করোনার এই পরিস্থিতিতে এতটা অ্যারেঞ্জমেন্ট করে কাজ করাটা কঠিন।’

ডাবিংয়ের স্টুডিওগুলো কেবল খোলা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ বিকল্প ব্যবস্থার কথাও ভাবছেন। তবে সাউন্ড রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রে স্টুডিওভিত্তিক অ্যারেঞ্জমেন্ট একটা বড় ব্যাপার। এটা কীভাবে বাড়িতে বসে করা সম্ভব? তা নিয়ে আছে চিন্তাভাবনা। কিন্তু এই করোনার সময় ভয়েস অ্যাক্টরদের সামনে এসেছে চ্যালেঞ্জ হিসেবে। টেলিভিশন ও প্রডাকশন হাউসগুলো ভালোভাবে কাজ শুরু করলে এই খারাপ সময় কেটে যাবে বলে তাঁদের আশা।