যে জন্য এন্ড্রু কিশোর রাজশাহীতে ছুটে আসতেন

গান করছেন এন্ড্রু কিশোর। ছবি: সংগৃহীত
গান করছেন এন্ড্রু কিশোর। ছবি: সংগৃহীত

এন্ড্রু কিশোর নিয়মিত রাজশাহীতে আসতেন। ২০১১ সাল থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর একবার আসতেন। ওস্তাদ আব্দুল আজিজ বাচ্চুর ছাত্র ছিলেন তিনি। ওস্তাদের নামে রাজশাহীতে ‘ওস্তাদ আব্দুল আজিজ বাচ্চু স্মৃতি সংসদ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। তিনি ছিলেন সেই সংগঠনের সভাপতি। তাঁরই উদ্যোগে নিয়মিত একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য তিনি রাজশাহীতে ছুটে আসতেন। মৃত্যুর আগে যখন তিনি কথা বলতে পারতেন, সে সময় তিনি এই সংগঠনের সভাপতিত্বের দায়িত্ব দিয়ে গেছেন তাঁর বাল্যবন্ধু রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান দ্বীপকেন্দ্রনাথ দাসের ওপরে।

সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে রাজশাহী নগরের মহিষবাথান এলাকায় বোন শিখা বিশ্বাসের বাসায় এন্ড্রু কিশোর শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। এ সময় সেখানে রাজশাহীর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেক মানুষ ছুটে যান। তাঁদের মধ্যে তাঁর বাল্যবন্ধু দ্বীপকেন্দ্রনাথ দাসও উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী মঈনুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। তিনিই জানান, মৃত্যুর আগে এন্ড্রু কিশোর তাঁর সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তর করে গেছেন।

দ্বীপকেন্দ্রনাথ দাস বলেন, তাঁরা দুজনেই রাজশাহীতে ওস্তাদ আব্দুল আজিজ বাচ্চুর ‘সুরবাণী সংগীত বিদ্যালয়’–এর ছাত্র ছিলেন। তারপরে রাজশাহী সিটি কলেজে যখন দুজনেই বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন, তখন দুজনের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। তিনি বলেন, এন্ড্রু চলে যাওয়ায় শুধু বাংলাদেশ নয়, উপমহাদেশের সংগীতাঙ্গনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো, তা আর পূরণ হবার নয়।

মঈনুল ইসলাম জানান, ২০১১ সালে রাজশাহীতে এই সংগঠন তৈরি করা হয়। বর্ষব্যাপী সংগঠনের ত্রৈমাসিক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন থাকত। পরিকল্পনা অনুযায়ী একেকটি অনুষ্ঠানে রাজশাহীর প্রত্যন্ত এলাকার একটি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হতো। প্রতিটি অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব উপস্থিত থাকতেন। গান শুরুর আগে ওস্তাদ আব্দুল আজিজ বাচ্চুর ওপরে আলোচনা হতো। মঈনুল ইসলাম বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সংগীতের প্রতিভা অন্বেষণের জন্য বছরব্যাপী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। এতেই ছুটে আসতেন এন্ড্রু কিশোর। তিনি বলতেন, ওস্তাদ আব্দুল আজিজ বাচ্চু সংগীতের মাধ্যমে মানুষ গড়ার কাজ করতেন।

সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে গত ২০ জুন এন্ড্রু কিশোর রাজশাহীতে তাঁর বোন শিখা বিশ্বাসের বাসায় ওঠেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু। রাজশাহীতে আসার পর থেকেই তিনি আর ভালো করে কথা বলতে পারেননি। গত রোববার থেকেই এন্ড্রু কিশোরের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। রাতে তাঁর মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজের হিমঘরে রাখার কথা রয়েছে। খবর পেয়ে ছেলে ও মেয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে রওনা দিয়েছেন।

মঈনুল ইসলাম জানান, ছেলেমেয়ে ফিরলেই রাজশাহীর কালেক্টরেট মাঠে যেখানে খ্রিষ্টানদের কবরস্থান রয়েছে, সেখানে বাবা-মায়ের কবরের পাশেই এন্ড্রু কিশোরকে সমাহিত করা হবে।