করোনার থাবায় হিমশিম খাচ্ছেন শুটিংবাড়ির মালিকেরা

অনুমতি মিললেও শুটিংবাড়িগুলোতে নাটকের শুটিং হচ্ছে কম। ছবিটি সময়ের গল্প ধারাবাহিকের শুটিং চলাকালে তোলা। ছবি: সংগৃহীত
অনুমতি মিললেও শুটিংবাড়িগুলোতে নাটকের শুটিং হচ্ছে কম। ছবিটি সময়ের গল্প ধারাবাহিকের শুটিং চলাকালে তোলা। ছবি: সংগৃহীত

করোনার কারণে ২১ মার্চ থেকে মে মাসের শেষ পর্যন্ত শুটিং স্থগিত ছিল। এতে প্রায় কোটি টাকার মতো লোকসান গুনতে হয়েছে ঢাকার শুটিং হাউসগুলোকে। গত ১ জুন থেকে শুটিংয়ের অনুমতি মিললেও সেভাবে শুটিংয়ের সাড়া মিলছে না। যে কারণে শুটিংবাড়ির মালিকেরা বাড়িভাড়া ও অন্যান্য খরচ বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন। ইতিমধ্যে বাড়িভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় কয়েকটি শুটিংবাড়ি বন্ধ হয়ে গেছে।

শুটিং হাউসের মালিকদের সংগঠন শুটিং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের ভাষ্য, প্রায় তিন মাস শুটিং বন্ধ। এ সময়ে তাঁদের প্রত্যেকের প্রতি মাসে শুটিংবাড়ির ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন বাবদ চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা গুনতে হয়েছে। উত্তরার আপনঘর শুটিংবাড়ির মালিক ও সংগঠনের সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, ‘করোনার মধ্যে আমার চারটি শুটিংবাড়ির মধ্যে একটি বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি তিনটি বাড়িতে আগের মতো শুটিংয়ের ব্যস্ততা নেই। গত এক মাসে আপনঘর-১ নামে শুটিংবাড়িতে কাজ হয়েছে ১৮–২০ দিন। আপনঘর-২ ও ৩ নম্বর বাড়িতে তিন দিন করে শুটিং হয়েছে। এদিকে করোনার পর আমাদের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এত কম কাজ দিয়ে শুটিংবাড়ি টিকিয়ে রাখা কঠিন। গত তিন মাসে প্রায় ১২ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছি।’

ঈদের পরে চ্যানেলগুলোতে এক ঘণ্টার নাটকের আগ্রহ অতটা থাকবে না। ছবি: সংগৃহীত
ঈদের পরে চ্যানেলগুলোতে এক ঘণ্টার নাটকের আগ্রহ অতটা থাকবে না। ছবি: সংগৃহীত

বিগত বছরগুলোতে ঈদের আগে দিন–রাত সমান তালে ব্যস্ত থাকত উত্তরার শুটিংবাড়িগুলো। দেড়–দুই মাস ধরে চলত টানা শুটিং। মাসের অন্য সময়ে সেভাবে কাজ না থাকলেও ঈদের মৌসুমে মালিকেরা পুষিয়ে নিতেন। কিন্তু গত ঈদে শুটিংই হয়নি, আর এ ঈদেও তেমন শুটিং হচ্ছে না।

করোনাকে মাথায় রেখে অনেক নাটকের শুটিং হচ্ছে পুবাইলে কিংবা ঢাকার বাইরে। অনেক নির্মাতা ও প্রযোজক ব্যক্তিগত বাসায় কিংবা বাগানবাড়িতে গিয়ে টানা দুই–তিন দিন শুটিং করে নাটক নির্মাণ করছেন। অনেকেই আবার শুটিংবাড়ি এড়িয়ে যাচ্ছেন খরচ কমানোর জন্য। ঢাকার মধ্যে নিজেদের বাড়ি বা অফিস ব্যবহার করে শুটিং শেষ করছেন। স্বপ্নীল ৫, স্বপ্নীল ৬ শুটিংবাড়ির মালিক ও শুটিং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম বলেন, ‘করোনার কারণে শুটিং বন্ধ থাকার সময়ে প্রতি মাসেই প্রায় চার লাখ টাকা খরচ বহন করতে হয়েছে। এখন ঈদের সময়েও শুটিংয়ের জন্য শুটিংবাড়ি খুব একটা বুকিং হচ্ছে না। কীভাবে চলব, কূলকিনারা করতে পারছি না।’

কিন্তু গত ঈদে শুটিংই হয়নি, আর এ ঈদেও শুটিং হচ্ছে কম। ছবি: সংগৃহীত
কিন্তু গত ঈদে শুটিংই হয়নি, আর এ ঈদেও শুটিং হচ্ছে কম। ছবি: সংগৃহীত

তিনি আরও জানান, ঈদের পরে অনেক শুটিংবাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ, ঈদের পরে চ্যানেলগুলোতে এক ঘণ্টার নাটকের আগ্রহ অতটা থাকবে না। ধারাবাহিক নাটকেরও আগ্রহ কমছে আগের চেয়ে। ঈদের পরে হাউসগুলোতে শুটিং শতকরা ১০ ভাগে নেমে আসবে।

শুটিংবাড়ির লোকসানের কথা স্বীকার করে ডিরেক্টর গিল্ডের সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘এটা ঠিক যে শুটিংবাড়িগুলোতে এত দিন শুটিং হয়নি। বাড়িগুলো তাঁদের নিজেদের না। ভাড়া দিতে হয়। শুটিং না থাকায় কোনো আয় ছিল না, কিন্তু কর্মচারীদের বেতন, বাড়িভাড়া দিতে হয়েছে। সামনে ঈদ। আশা করছি, অনেক শিল্পীই শুটিংয়ে ফিরবেন। শিগগিরই বাড়িগুলোর শিডিউল বাড়বে, আবারও প্রাণচঞ্চলতায় ভরে উঠবে।’