শেষ ছবি, শেষ স্মৃতি

দিল বেচারা ছবির শুটিং সেটে পরিচালক মুকেশ ছাবড়া, অভিনেত্রী সানজানা সাংঘি ও অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত
দিল বেচারা ছবির শুটিং সেটে পরিচালক মুকেশ ছাবড়া, অভিনেত্রী সানজানা সাংঘি ও অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত

সময়টা স্বাভাবিক হলে হয়তো প্রচলিত রীতিতেই মুক্তি পেত দিল বেচারা। সুশান্ত সিং রাজপুতের শেষ ছবি বড় পর্দায় দেখার জন্য হয়তো ভারতের সিনেমা হলগুলোয় দর্শকের ঢল নামত। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে প্রেক্ষাগৃহে ছবি মুক্তির সুযোগ নেই। অকালপ্রয়াত বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের শেষ ছবি দিল বেচারা তাই আগামীকাল ২৪ জুলাই মুক্তি পাচ্ছে ডিজনি-হটস্টার নামের ওটিটি মাধ্যমে। বিনা মূল্যে ছবিটি দেখতে পাবেন সারা বিশ্বের দর্শক। ছবিটি এবং সুশান্তের সঙ্গে প্রথম ও শেষবারের কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছেন নবাগত পরিচালক মুকেশ ছাবড়া ও অভিনেত্রী সানজানা সাংঘি। 

জনপ্রিয় উপন্যাস ও একই নামে তৈরি হওয়া হলিউড ছবি দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস অবলম্বনে তৈরি হয়েছে বলিউডের ছবি দিল বেচারা। এই ছবি পরিচালনার মধ্য দিয়ে বলিউডের প্রখ্যাত কাস্টিং ডিরেক্টর মুকেশ ছাবড়ার অভিষেক হলো চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে। এর আগে এই কাস্টিং ডিরেক্টরের হাত ধরেই কাই পো ছে ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত। শুরু করেছিলেন স্বপ্নের বলিউডযাত্রা, যেই যাত্রা শেষ হয় গত ১৪ জুন। সেদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যান সুশান্ত। মুম্বাইয়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় সুশান্তের ঝুলন্ত মরদেহ। 

অনেক তর্ক–বিতর্ক, সন্দেহ, কৌতূহল ও প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে। আপাতত সব বিতর্কে খানিক বিরতি পড়েছে। এখন আলোচনা সুশান্তের শেষ ছবি দিল বেচারা ঘিরে। নির্মাতা মুকেশ ছাবড়াও চাইছেন, আলোচনা হোক সুশান্তের অভিনয় নিয়ে, কাজ নিয়ে। তিনি বললেন, ‘সুশান্তের শেষ ছবি সবাই উদ্​যাপন করুন। সুশান্ত শুধু ওর প্রতিভার জোরে এত দূর এসেছিল। তাই সুশান্তের প্রতিভাকে সম্মান করুন।’ 

কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করতে করতেই চলচ্চিত্র পরিচালনার প্রতি আগ্রহ জন্মায় মুকেশের। সেটাকে আরও উসকে দিয়েছিলেন সুশান্ত। মুকেশ বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে সিনেমা বানানোর ইচ্ছা আমাকে তাড়িত করে। সুশান্ত সাহস জুগিয়েছিল। তাই তিন-চার বছর আগে সিদ্ধান্ত নিই সিনেমা আমি বানাবই।’

মুকেশ আর সুশান্ত ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সুশান্তের প্রথম ছবি কাই পো ছে থেকে বন্ধুত্বের শুরু। সেই স্মৃতি মনে করে মুকেশ বলেন, ‘আট শতাধিক শিল্পী কাই পো ছে ছবির জন্য অডিশন দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্য থেকে সুশান্তকে নির্বাচন করা হয়েছিল। ও দুর্দান্ত এক অভিনেতা। খুব হাসিখুশি, প্রাণবন্ত, আমুদে মানুষ ছিল ও। সুশান্ত শুধু স্বপ্ন দেখত না, স্বপ্ন পূরণও করতে জানত।’ বন্ধু মুকেশ যখন তাঁর প্রথম ছবির চিত্রনাট্য নিয়ে গিয়েছিলেন সুশান্তের কাছে, তখন নাকি তা না দেখেই ছবিতে অভিনয়ের জন্য রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। মুকেশ সেই দিনের গল্পটাও শোনালেন, ‘আমাদের সম্পর্ক ছিল ভালোবাসা আর বিশ্বাসে ভরা। সুশান্ত আমাকে আগেই বলে রেখেছিল যে আমি কোনো ছবি বানালে ও তাতে অভিনয় করবে। তাই ২০১৮ সালে আমার হাতে চিত্রনাট্য আসার সঙ্গে সঙ্গে সুশান্ত বলে দেয়, “ভাই, আমি ছবিটা করব।” আমি ওকে আগে চিত্রনাট্যটা পড়তে বলি। ওই সময়ে একগাল হেসে সুশান্ত বলেছিল, “আমি কি পাগল যে আপনার চিত্রনাট্য পড়ব!”’

তারপর শুরু হয় দিল বেচারার শুটিং। নতুন পরিচালকের প্রথম সিনেমায় যুক্ত হন নতুন নায়িকা সানজানা সাংঘি। তাঁকেও উদার মনে স্বাগত জানান সুশান্ত। সানজানা তাঁর প্রথম ছবির নায়ককে নিয়ে বলেন, ‘মুকেশের অফিসে সুশান্তের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়। আমাদের পছন্দ-অপছন্দের অনেক মিল ছিল। সুশান্তের সঙ্গে দেখা হলে কীভাবে সময় কেটে যেত, বুঝতেই পারতাম না। সুশান্ত আমাকে কখনোই অনুভব করতে দেয়নি যে আমি বলিউডে নতুন। সব সময় ওর কাছ থেকে সম্মান পেয়েছি।’ 

সুশান্তকে ঘিরে সানজানার প্রিয় স্মৃতি সম্পর্কে জানতে চাই। সানজানা বলেন, ‘একবার সারা রাত জেগে আমাকে একটা দৃশ্যে একা চার পাতার সংলাপ বলতে হয়েছিল। সুশান্ত জানত, আমি রাত জেগে কাজ করতে পারি না। রাত তিনটা নাগাদ আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তখন ও আমাকে জাগিয়ে রাখার জন্য আমার পছন্দের কফির ব্যবস্থা করেছিল। হাত ধরে আমাকে নিয়ে পায়চারি করেছিল। এই মুহূর্তগুলো আমার সঙ্গে চিরজীবন রয়ে যাবে। সুশান্ত যে আমাদের জীবনে শুধু স্মৃতি থেকে যাবে, তা এখনো বিশ্বাস করতে পারি না। ও নেই, এটা মেনে নিতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।’

দিল বেচারা ছবিটি এ বছরের মার্চে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি মহামারি আকার ধারণ করলে ছবির মুক্তি স্থগিত করা হয়। তখন ছবিটি মুক্তি পেলে হয়তো সুশান্তও বলে যেতে পারতেন ছবিটি ঘিরে তাঁর আবেগ আর অনুভূতির কথা। কিন্তু তা আর হলো কই।