লবিংবাজদের কারণে মেধাবীরা পিছিয়ে যাচ্ছে

ডলি সায়ন্তনী। ছবি: সংগৃহীত
ডলি সায়ন্তনী। ছবি: সংগৃহীত
সংগীতে নিয়মিত হচ্ছেন একসময়ের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী। নিজের ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ১০টি গান প্রস্তুত করেছেন তিনি। তিন মেয়েকে নিয়ে তিনি গেয়েছেন ‘পারিনি ভুলতে’ শিরোনামে একটি গান। কথা হলো তাঁর সঙ্গে।

তাহলে গানে আবার নিয়মিত হচ্ছেন?
ঠিক, এখন থেকে নিয়মিত থাকব। সৃষ্টিকর্তা যদি আমাকে সুস্থ রাখেন, আগের মতো কাজ করে যাব। আমার ১০টা গান এরই মধ্যে তৈরি আছে।

গান থেকে একটু দূরে সরে গিয়েছিলেন কেন?
সত্যি বলতে, কিছু খারাপ লাগা ছিল। বেশ কিছু কারণ ছিল, কিছু মানুষের ওপর অভিমান ছিল; যে কারণে গান থেকে দূরে ছিলাম। এমনও ভাবছিলাম, গান-বাজনা আর করবই না। সংগীতাঙ্গনে আমি নানা নোংরা রাজনীতির শিকার হয়েছি। আমি গান করতে এসেছিলাম, রাজনীতির ধার ধারিনি। সেটা আমি বুঝতামও না। সেসবে তাল মিলিয়ে চলতে পারাটা মুশকিল।

কাদের নোংরা রাজনীতির শিকার হয়েছিলেন?
শিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক—কমবেশি সবারই। আমার কাজ করতে না পারার আরেকটা কারণ হলো সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে না পারা। তৃতীয় পক্ষের ষড়যন্ত্রে শওকত আলী ইমনের মতো সংগীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে হলো অর্ধযুগ পর।

এত দিন পর উদ্যম ফিরল কীভাবে?
অনেকেই উৎসাহ দিয়েছে। বড় অনুপ্রেরণা ছিল আমার ভক্ত-শ্রোতাদের। ফ্যানপেজ আমি নিজেই চালাই। করোনার এ সময়ে নিজের গাওয়া একটি গান এমনিই শেয়ার করেছিলাম। এরপর থেকে সবাই এত মেসেজ করেছে... সবাই বলছিল, অনেক বছর পর আপনার গান শুনলাম, আপনাকে নতুন করে পেলাম। তখন ভেতর থেকে একটা উৎসাহ পাই। মনে হলো ভক্তরা তো আমাকে ভোলেনি। তখন থেকে ভাবলাম, নতুন কিছু গান গাওয়া উচিত।

আপনার সঙ্গে যা কিছু ঘটেছে, তা এখন কীভাবে দেখছেন?
আমি বলব, যোগ্যতাই হোক শিল্পী মূল্যায়নের মাপকাঠি। যোগ্যতাকে মূল্যায়ন করার মানুষগুলোও কিন্তু কমে যাচ্ছে, লবিংবাজিটাই বেড়েছে। কতটুকু গাইতে পারেন, কতটা যোগ্যতা আছে, সেটা যেন ম্যাটার করে না, পিআর মেইনটেইন করাই যেন বড় যোগ্যতা হয়ে গেছে।

ইউটিউবে চ্যানেল খুলেছেন ডলি সায়ন্তনী। ছবি: সংগৃহীত
ইউটিউবে চ্যানেল খুলেছেন ডলি সায়ন্তনী। ছবি: সংগৃহীত

শুধু লবিংই চলছে, নাকি মেধাবীরাও আছেন?
মেধাবীরা আছেন, কিন্তু লবিংবাজদের কারণে মেধাবীরা পিছিয়ে যাচ্ছে বলেও মনে হয়।

সংগীতাঙ্গন কোন দিকে যাবে?
করোনার কারণে দেশের প্রতিটি সেক্টরের সবাই সব ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত। আমাদের পরের প্রজন্ম স্টেজ শো–নির্ভর। এখন যেটা হচ্ছে, এই তরুণেরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এই পরিস্থিতি কত দিন থাকে, সেটাই বোঝা মুশকিল। কেন যেন মনে হয়, যে সময় পার করছি, এটা দু-তিন বছরও লাগতে পারে। একটা বিষয় ভালো লাগছে, সবাই এখন নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে, এখানে নিজের স্বাধীনমতো কাজ করার সুযোগও থাকছে। আগে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দিত, কাজ করতাম। এখন তা নেই। নিজের কাজ নিজের প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করলে শ্রোতার কাছে যেমন বেশি যাওয়া যায়, তেমনি ব্যবসায়িকভাবেও লাভবান হওয়া যায়। এখন সবাইকে চর্চার মধ্য দিয়ে কিছু শ্রোতাদের কাছে গান পৌঁছে দেওয়ার কাজটাই করে যাওয়া উচিত। সুন্দর সময় নিশ্চয়ই আসবে।