'কী বলব ভাই, হাতে চার আনাও নাই'

কাঙালিনী সুফিয়া। ছবি: প্রথম আলো
কাঙালিনী সুফিয়া। ছবি: প্রথম আলো

কয়েক বছর হলো শরীরটা ভালো যাচ্ছে না লোকশিল্পী কাঙালিনী সুফিয়ার। সংসার চালাতে সেই অসুস্থ শরীর নিয়েই গাইতে যাচ্ছেন নানা জায়গায়। করোনায় সেসবও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে কয়েক মাস ধরে চরম টানাপোড়েন যাচ্ছে তাঁদের। খাবার নেই, ফুরিয়ে এসেছে ওষুধ। এই সংকটকাল কীভাবে পাড়ি দেবেন, ভেবে আকুল এই শিল্পী।

ঈদে পরিবার নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন রাজবাড়ির রামদিয়ায়। গাড়িভাড়ার টাকাও হাতে নেই। ‘কোনবা পথে নিতাইগঞ্জ যাই’, ‘বুড়ি হইলাম তোর কারণে’ গেয়ে যে পরিচিতি ও মানুষের ভালোবাসা তিনি পেয়েছিলেন, সেটাই এত দিন তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছে। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া মাসিক অর্থসহায়তা। সুফিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনায় ক্যামনে সন্তান নাতি-নাতনি নিয়ে বাঁচব বুঝতে পারতেছি না। আগে কুষ্টিয়া থাকতে কিছু সাহায্য পাইছি। দেড় মাস হইলো করোনার মধ্যে সাভার আইলাম। কেউ গানের জন্য ডাকে না। কেউ সাহায্যও করে না। হাতে টাকাও নাই। লকডাউনে বাইরেও বের হবার পারি না। খাবার কষ্টে থাকতে হয়। সামনে ঈদ আসতেছে, পরিবারের কারও মুখে ফিরনি তুলে দেবার মতো সামর্থ্য নাই। কী বলব ভাই, হাতে চার আনাও নাই যে কুষ্টিয়াতে যাব।’

দুস্থ শিল্পী হিসেবে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কাঙালিনী সুফিয়া পেতেন পাঁচ হাজার টাকা। ২০১৪ সাল থেকে সে অঙ্ক বেড়ে হয় দ্বিগুণ। এই টাকার সঙ্গে যোগ হয় তাঁর গান গেয়ে আয় করা টাকা। মেয়ে, নাতিদের নিয়ে তাঁর ছয়জনের সংসারে টানাপোড়েন লেগেই থাকত। তিনি বলেন, ‘১৪ বছর বয়স থেকে গান গাই। চার–পাঁচ শর বেশি গান গেয়েছি। দেশের আনাচে-কানাচে মানুষ এখনো আমার গান গায়, শোনে। মানুষের এই ভালোবাসা আমার ভালো লাগে। কিন্তু জীবনে কখনো ভাবি নাই, শেষ সময়টা এতটা খারাপের মধ্যে যাবে। তোমরা আমার বাঁচি থাকার জন্য দোয়া করিও। সরকারকে বলো আমার জন্য আরেকটু করতে। একটা জনম যেন আমার ভালোভাবে শেষ হয়।’ কথা আর কান্নার বিরতিতে তিনি আবারও বলেন, ‘আমার গান দিয়ে কত মানুষ কত কিছু করল, নেটে লাখ লাখ মানুষ আমার গান শোনে। আমি কেমন আছি জানতে কেউ খবর নেয় না। আমার দিকে কেউ তাকায় না।’

কাঙালিনী সুফিয়া। ছবি: সংগৃহীত
কাঙালিনী সুফিয়া। ছবি: সংগৃহীত

কাঙালিনী সুফিয়ার জন্ম ১৯৬১ সালে। গ্রামের অনুষ্ঠানগুলোয় গান গেয়ে শৈশব থেকেই মানুষের নজর কেড়েছিলেন তিনি। একসময় বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে অন্তর্ভুক্তি পান। তাঁর গানের গুরু ছিলেন গৌর মহন্ত ও দেবেন খ্যাপা। হালিম বয়াতির কাছেও গান শিখেছিলেন তিনি। এ পর্যন্ত ৩০টি জাতীয় ও ১০টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন এই শিল্পী। নিজেও লিখেছেন বহু গান।