আলাউদ্দীন আলীর জন্য প্রার্থনা করছেন সুমন

আলাউদ্দীন আলী। ছবি: সংগৃহীত
আলাউদ্দীন আলী। ছবি: সংগৃহীত

লাইফ সাপোর্টে থাকা বরেণ্য গীতিকার ও সুরকার আলাউদ্দীন আলীর জন্য প্রার্থনা করছেন ভারতের খ্যাতিমান শিল্পী কবীর সুমন। আজ শনিবার ভোরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আলাউদ্দীন আলীকে। অবস্থা বিবেচনায় তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। এক বন্ধুর মাধ্যমে তাঁর অসুস্থতার খবর জানতে পারেন কবীর সুমন। ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘এক বন্ধু জানালেন, বাংলাদেশের অসামান্য সুরকার আলাউদ্দীন আলী খুব অসুস্থ, লাইফ সাপোর্টে আছেন। আসুন, তাঁর জন্য প্রার্থনা করি।’

আলাউদ্দীন আলী প্রসঙ্গে এক প্রতিক্রিয়ায় কবীর সুমন বলেন, বাংলাভাষী দুনিয়ায় আলাউদ্দীন আলীর মতো সুরকার খুব কম এসেছেন গত ৩০-৪০ বছরে। সম্প্রতি সংগীতশিল্পী আসিফের গাওয়া নিজের লেখা ও সুরে ‘লুকানো মানিক’ শিরোনামের একটি গান ফেসবুকে শেয়ার করে কবীর সুমন লেখেন, ‘বাংলাদেশের শুধু নয়, সমকালীন দুনিয়ার এক অসামান্য সুরকার আলাউদ্দীন আলীর সুরশৈলীর সঙ্গে এই সুরের মিল আছে। বাংলার সুর। যদিও আমার চেয়ে অনেক বড় সুরকার আলাউদ্দীন আলী।’


আলাউদ্দীন আলীর শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোরে তাঁর স্ত্রী আমাকে ফোনে জানান, আলাউদ্দীন আলীর শরীর খুব খারাপ করেছে। রক্তচাপ খুব কমে গেছে। তখন আমি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে তাঁকে হাসপাতালে আনার ব্যবস্থা করি। আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেন, অক্সিজেনের মাত্রা খুব কম। তাঁর তীব্র শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। এ অবস্থায় তাঁকে ভেন্টিলেটরে নেওয়া হয়। তবে এখনো রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক নয়। সব মিলিয়ে বলা যায়, তাঁর অবস্থা মোটেও ভালো নয়। আগামী ২৪ ঘণ্টা তাঁর জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ।’

আলাউদ্দীন আলী ফুসফুসের প্রদাহ ও রক্তে সংক্রমণের সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০১৫ সালের ৩ জুলাই চিকিৎসার জন্য তাঁকে ব্যাংকক নেওয়া হয়েছিল। সেখানে পরীক্ষার পর জানা যায়, তাঁর ফুসফুসে একটি টিউমার রয়েছে। এরপর তাঁর অন্যান্য শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি ক্যানসারের চিকিৎসাও চলছিল। এর আগে বেশ কয়েক দফা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘদিন তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। বাংলাদেশ ও ব্যাংককে তাঁর চিকিৎসা করা হয়েছে। সাভারে সেন্টার ফর রিহ্যাবিলিটেশন অব প্যারালাইজডেও চিকিৎসা নিয়েছেন দীর্ঘদিন।

আজ সন্ধ্যায় আলাউদ্দীন আলীর স্ত্রী ফারজানা আলী প্রথম আলোকে জানান, তাঁর অবস্থা অপরিবর্তিত। চিকিৎসক জানিয়েছেন, রক্তচাপ স্বাভাবিক হলে অন্যান্য ট্রিটমেন্ট শুরু করবেন। এদিকে অসুস্থতার খবরে অনেকে ফোনে খবর নিচ্ছেন। সাবিনা ইয়াসমীন, রুনা লায়লা, লীনু বিল্লাহ, মইনুল ইসলাম খানসহ অনেকে ফোনে খবর নিচ্ছেন।

কবীর সুমন। ছবি: সংগৃহীত
কবীর সুমন। ছবি: সংগৃহীত

আলাউদ্দীন আলী বাংলা গান, বিশেষ করে বাংলা চলচ্চিত্রে অসংখ্য শ্রোতৃপ্রিয় গান তৈরি করেছেন। তিনি একই সঙ্গে সুরকার, সংগীত পরিচালক, বেহালাবাদক ও গীতিকার। গান লিখে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। গুণী এই মানুষের জন্ম ১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামে। তাঁর বাবা ওস্তাদ জাদব আলী। মায়ের নাম জোহরা খাতুন।

দেড় বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকার মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে চলে আসেন আলাউদ্দীন আলী। তিন ভাই ও দুই বোনের সঙ্গে সেই কলোনিতেই বড় হন এই গুণী শিল্পী। সংগীতে প্রথম হাতেখড়ি ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছে। পরে ১৯৬৮ সালে বাদ্যযন্ত্রশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রজগতে পা রাখেন। শুরুটা শহীদ আলতাফ মাহমুদের সহযোগী হিসেবে, পরে প্রখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজের সঙ্গে কাজ করেন দীর্ঘদিন।

লোকজ ও শাস্ত্রীয় গানের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা আলাউদ্দীন আলীর সুরের নিজস্ব ধরন বাংলা সংগীতে এক আলাদা ঢং হয়ে উঠেছে প্রায় চার দশক ধরে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বহু স্বনামধন্য শিল্পী তাঁর সুরে গান করে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছেন।