যে গানগুলোতে অমর আলাউদ্দীন আলী

আলাউদ্দীন আলী। ছবি: সংগৃহীত
আলাউদ্দীন আলী। ছবি: সংগৃহীত

অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা আলাউদ্দীন আলী। তবে তাঁর শুরুটা হয়েছিল ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে। তিনি চলচ্চিত্রে প্রথম কাজ করেন ১৯৭৪ সালে। মীর মোহাম্মদ হালিম পরিচালিত ওই ছবির নাম ‘সন্ধিক্ষণ’। মুক্তি পায় ১৯৭৬ সালে। কিন্তু না, সাফল্যের জন্য তাঁকে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। ১৯৭৮ সাল। আমজাদ হোসেন তৈরি করেন ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’। এই ছবির জন্য আলাউদ্দীন আলী তৈরি করেন ‘আছেন আমার মোক্তার’ শিরোনামে একটি গান। গানটির গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার আর কণ্ঠ দিয়েছেন সৈয়দ আব্দুল হাদী। গানটি চুম্বকের মতো কাজ করে ওই সময়। শ্রোতারা অবাক হয়ে শোনেন গানটি। একই ছবির আরেকটি গান তখন দারুণ জনপ্রিয়তা পায়, ‘হায় রে কপাল মন্দ, চোখ থাকিতে অন্ধ’। এই গানের গীতিকার আমজাদ হোসেন। দুটি গানই আলাউদ্দীন আলীকে নিয়ে যায় অন্য জায়গায়।

একই বছর মুক্তি পায় ‘ফকির মজনু শাহ’ নামের আরেকটি ছবি। এই ছবির ‘প্রেমের আগুনে’, ‘সবাই বলে বয়স বাড়ে’ আর ‘চোখের নজর এমনি কইরা’ গানগুলো আলাউদ্দীন আলীর ব্যাপারে সবাইকে আগ্রহী করে তোলে।

প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আলাউদ্দীন আলী বলেছিলেন, ‘প্রথম ছবির সংগীত পরিচালনার পর দর্শকের সাড়া খুব একটা ভালো ছিল না। ছবিটি ব্যবসায়িক দিক থেকে তেমন সুবিধা করতে পারেনি। তাতে দুঃখ পাইনি। কিন্তু “গোলাপী এখন ট্রেনে” ছবির মাধ্যমেই আমি যেন সাফল্যের ট্রেনে চড়ে বসি। এর পর থেকে যা-ই করেছি, শ্রোতা–দর্শক আমাকে দুই হাত ভরে দিয়েছেন, আমাকে ভালোবেসেছেন।’

‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ছবির গানের জন্য ‘সেরা সংগীত পরিচালক’ বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। ওই সময় পরপর তিন বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন আলাউদ্দীন আলী। ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ছাড়া অন্য দুটি ছবি হলো ‘সুন্দরী’ আর ‘কসাই’। তিনটি ছবিরই পরিচালক আমজাদ হোসেন। আমজাদ হোসেন ও আলাউদ্দীন আলী জুটি একরকম স্বীকৃতিই পায় ওই সময়।

আলাউদ্দীন আলী। ছবি: প্রথম আলো
আলাউদ্দীন আলী। ছবি: প্রথম আলো

১৯৭৮ সাল থেকেই মূলত আলাউদ্দীন আলীর কর্মযজ্ঞ শুরু। চার দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে প্রতিবছর গড়ে ১০টি ছবির গানের সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন। সুরকার হিসেবে সাতবার এবং গীতিকার হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। শুধু চলচ্চিত্র নয়, টিভি আর বেতারের জন্যও অসংখ্য গানের সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন। তাঁর সৃষ্টি কালজয়ী গানগুলোর মধ্যে আছে, ‘সুখে থাকো,/ ও আমার নন্দিনী/ হয়ে কারও ঘরনি’, ‘সূর্যোদয়ে তুমি,/ সূর্যাস্তেও তুমি,/ ও আমার বাংলাদেশ’, ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম দেখা পাইলাম না’, ‘যেটুকু সময় তুমি থাকো কাছে,/ মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’, ‘এমনও তো প্রেম হয়,/ চোখের জলে কথা কয়’, ‘সবাই বলে বয়স বাড়ে, আমি বলি কমে রে’, ‘আমায় গেঁথে দাও না মাগো,/ একটা পলাশ ফুলের মালা’, ‘আছেন আমার মোক্তার,/ আছেন আমার বারিস্টার’, ‘শত জনমের স্বপ্ন তুমি আমার জীবনে এলে’, ‘কেউ কোনো দিন আমারে তো কথা দিল না’, ‘পারি না ভুলে যেতে,/ স্মৃতিরা মালা গেঁথে’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো’, ‘আমার মনের ভেতর অনেক জ্বালা আগুন হইয়া জ্বলে’, ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়’ ইত্যাদি।

আজ রোববার বিকেলে চলে গেলেন অনেক জনপ্রিয় বাংলা গানের সুরকার ও সংগীত পরিচালক। তিনি চলে গেলেও তাঁর জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষের মনে বেঁচে থাকবেন আজীবন।