চারজনের দলটা ভেঙে যাচ্ছে...

‘তিনি আমার চোখে ভারতীয় উপমহাদেশে একজন শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক।’ এভাবেই প্রয়াত সংগীত পরিচালক, গীতিকার আলাউদ্দীন আলীর মূল্যায়ন করলেন গায়িকা সাবিনা ইয়াসমীন। কথা বলার সময় এই প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পীর কণ্ঠ জড়িয়ে আসছিল। ফোনের এ পাশ থেকে বোঝা যাচ্ছিল, কতটা ভেঙে পড়েছেন তিনি। শোকাহত কণ্ঠেই এই সংগীত পরিচালককে নিয়ে স্মৃতিচারণা করলেন এই গায়িকা।

আলাউদ্দীন আলী ও সাবিনা ইয়াসমীন। ছবি: সংগৃহীত
আলাউদ্দীন আলী ও সাবিনা ইয়াসমীন। ছবি: সংগৃহীত

এই সংগীত পরিচালকের সঙ্গে কত গান গেয়েছেন, তার সঠিক হিসাব নেই সাবিনা ইয়াসমীনের কাছে। তবে এটা নিশ্চিত, গানের সংখ্যা হাজারের বেশি। তাঁদের পরিচয় মুক্তিযুদ্ধের আগে। তখন কিশোর আলাউদ্দীন আলী বেহালা বাজাতেন। রেডিওতে যন্ত্রসংগীত শিল্পী ছিলেন। সেই থেকেই পরিচয়। তারপর প্রথম তাঁরা একসঙ্গে একটি চলচ্চিত্রের জন্য দেশের গান করেছিলেন। গানটির শিরোনাম ছিল ‘ও আমার বাংলা মা তোর আকুল করা রূপের সুধায়’। সেই ছবি অবশ্য মুক্তি পায়নি। পরে গানটি এই গায়িকা টেলিভিশন ও রেডিওতে পরিবেশন করলে দ্রুততম সময়ে গানটি শ্রোতাদের মুখে মুখে ফিরতে থাকে। তারপর তাঁরা উপহার দিয়েছেন শত শত জনপ্রিয় গান। স্মৃতিচারণা করে এই গায়িকা বলেন, ‘তাঁর সুর, সংগীত পরিচালনায় আমি হাজার হাজার গান গেয়েছি। আমাদের অনেক গান জনপ্রিয়। এমন হাসিখুশি, নিরহংকার মানুষ খুব কম দেখা যায়। তাঁর চলে যাওয়ায় খালি জায়গাটা কখনোই পূরণ হবে না। আলাউদ্দীন আলীরা যুগে যুগে আসেন না। এলে হয়তো এত দিনে চোখে পড়ত, জানতে পারতাম।’

অভিনেতা, পরিচালক, গীতিকার আমজাদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
অভিনেতা, পরিচালক, গীতিকার আমজাদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

অসংখ্য গানের রেকর্ডিং করার অসময়ের স্মৃতি মনে পড়ছে। এক দিনের কথা মনে পড়ে বারবার। এই গায়িকা বলেন, ‘একবার একটি গানের রেকর্ডিংয়ের সময় আমার জন্মদিন পড়ে গেল। ওই রাতেই তিনি শেরাটনে লোক পাঠিয়ে কেক আনিয়ে গভীর রাতে স্টুডিওতে আমার জন্মদিন পালন করলেন। কেক কেটে সবার সঙ্গে খুবই হইচই করলেন। তিনি সব সময় খুবই আনন্দে থাকতে পছন্দ করতেন। নিজে খাওয়ার চেয়ে অন্যকে খাওয়াতে তিনি খুবই পছন্দ করতেন। তাঁর আতিথেয়তা ছিল নিদর্শনীয়।’ এ সময় তিনি জানান, তিনি একা কখনো খেতে পারতেন না। অনেক সময় স্টুডিওতেই খাবারের আয়োজন করতেন প্রয়াত সংগীত পরিচালক। ‘আলাউদ্দীন ভাই, আব্দুল হাদী ভাই, আমজাদ হোসেন ভাই, আমরা ছিলাম একটা টিম। ওই সময়ে যে ছবিতে গান গেয়েছি, তখনই বেশি চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। আমাদের চারজনের বোঝাপড়া ছিল সবচেয়ে ভালো। সেই টিম প্রকৃতির নিয়মে ভেঙে যাচ্ছে।’ কথা শেষ করে শোকে ভেঙে পড়েন এই গায়িকা। তিনি জানান, একটা শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতে তাঁর চলে যাওয়ায় শোকে বিহ্বল সংগীত অঙ্গন।

সৈয়দ আব্দুল হাদী। ছবি: সংগৃহীত
সৈয়দ আব্দুল হাদী। ছবি: সংগৃহীত

গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয় আলাউদ্দীন আলীকে। গত রোববার বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে মারা গেছেন তিনি। গুণী এই মানুষের জন্ম ১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামে। তাঁর বাবা ওস্তাদ জাদব আলী। মায়ের নাম জোহরা খাতুন।