নতুন এক পিয়া

পিয়া। ছবি: আনন্দ
পিয়া। ছবি: আনন্দ

আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। ঝুম্বৃষ্টিটা মাঘের শীতকে বাড়িয়ে দিল শতগুণ। বাথটাবের শীতল ধারায় ডুবন্ত মেয়েটির চোখজোড়া অভিমান। টানা পাঁচ ঘণ্টা শাট্ শাট্ করে উঠেছে ক্যামেরার এক একটি ফ্ল্যাশ। ঠান্ডায় জ্বর চলে এলেও রেহাই মেলেনি। বাথটাব থেকে মুক্তি পাওয়ার পর শুনতে পেল এর পরের শটটা নেওয়া হবে সুইমিংপুলে। এবার শীতের ভয়ে সংজ্ঞা হারাল মেয়েটি। বলছিলাম চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর-এ প্রচারিত পার্থ সরকার পরিচালিত টু বি অর নট টু বি টেলিছবির মিলার গল্প। যাঁরা টেলিফিল্মটি দেখেছেন, তাঁরা এতক্ষণে নিশ্চয়ই চিনে নিয়েছেন গল্পের এই মিলা কে।
মডেল ও অভিনেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস, কিন্তু সবাই তাঁকে পিয়া নামেই চেনেন। পিয়া অভিনীত ও প্রথম প্রচারিত টেলিছবি ছিল এটি। তখন একই সময় চলছিল চোরাবালি চলচ্চিত্রের শুটিং। তবে প্রথম প্রচারিত টেলিফিল্ম-এ অভিনয় করার সময়কার নানান অভিজ্ঞতা তাঁকে পরবর্তী সময়ে অনেকটা পরিণত হতে সাহায্য করেছে। ‘আমার মঞ্চে অভিনয়ের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। আমি কেবলই মডেল। অভিনয়ের কিছু জানি না। আমাকে দিয়ে হবে না। টু বি অর নট টু বি-এর শুটিংয়ের সময় এ কথা বহুবার বলেছি। তবে পার্থ ভাই ও সজল ভাইয়ের সহযোগিতায় অভিনয় বিষয়টি সত্যিই খুব উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল আমার কাছে। আর আমি বিশ্বাস করি, ভুল করতে করতেই মানুষ শিখতে পারে।’—বলেন পিয়া। এরপর দর্শক পিয়াকে দেখতে পান বড় পর্দায়। রেদওয়ান রনির চোরাবালি ছবিতে। চোরাবালিতে অভিনয়ের দক্ষতা দেখিয়ে অর্জন করে নেন ‘মেরিল-প্রথম আলো ২০১২ পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী সমালোচক পুরস্কারের মনোনয়ন। পিয়া বলেন, ‘অভিনয়ের জগতে পা দেওয়ার পর পর এ মনোনয়ন ছিল আমার জন্য একটি অপ্রত্যাশিত সুসংবাদ। আমার ছোট্ট অভিনয়জীবনে এই বড় স্বীকৃতিকে আমি আমার জীবনের অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়েছি।’ প্রথম টেলিছবি ও প্রথম চলচ্চিত্রে পিয়ার অভিনীত চরিত্র দুটিই ছিল নেতিবাচক। পর্দার এ উচ্চাকাঙ্ক্ষী, উচ্চাভিলাষী মেয়েটি আসলে বাস্তবে মোটেও সে রকম নন। বন্ধুমহল আর পরিবার-পরিজনের মধ্যে ‘মিষ্টি মেয়ে’ হিসেবে সুখ্যাতি আছে তাঁর। সে কারণেই কিন্তু বাড়িতে তাঁকে কেউ পিয়া বলে ডাকে না। দাদি আর ফুফুরা ডাকেন ‘পিউ’ বলে। আর বাবার কাছে তিনি বাবার প্রিয় মেয়ে ‘পিউরানী’। মিডিয়াজগতে নেতিবাচক চরিত্রের মাধ্যমে তাঁর আবির্ভাবের পেছনে আর একটি কারণও থাকতে পারে, যেটি শুনলে রীতিমতো চমকে যাবেন কেউ কেউ। মডেল ও অভিনেত্রী পিয়ার ছোটবেলা থেকেই জীবনের লক্ষ্য ছিল ব্যারিস্টার হওয়ার। মিডিয়াজগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি তেমনভাবে ভাবেননি কখনো। রহস্যটা তবে এবার ভাঙা যাক। অভিনয়ের বাইরে পিয়া পড়ালেখা করছেন আইন নিয়ে। আইন পড়ছেন ভবিষ্যতে নির্বাচনে দাঁড়াবেন বলে। লন্ডন কলেজ অব লিগ্যাল স্টাডিসের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। আইনের পড়া পড়তে গিয়ে অপরাধ আইন (ক্রিমিনাল ল) অংশটি পড়তেই বেশি আকর্ষণ বোধ করেন। এ কারণেই হয়তো নেতিবাচক চরিত্র দিয়েই অভিনয়জগতে প্রথম পদচারণ তাঁর। তবে পিয়া মনে করেন, আমরা জীবনে উচ্চাভিলাষী হয়ে, টাকা-পয়সার পেছনে ছুটতে ছুটতে ভুলে যাই জীবনের মূল্যবোধ, মানবিকতা।  এ মাসেই চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর-এ আসছে সাইফুল ইসলাম মান্নু পরিচালিত নাটক গল্পের মতো, এনটিভিতে আসছে তুহিন অবন্ত পরিচালিত কর্পোরেট। তবে বড় পর্দা নিয়েই বেশি ব্যস্ততা তাঁর। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নিয়ে কথাবার্তা চলছে। এর মধ্যে আলী আহমেদ মণ্ডল পরিচালিত প্রবাসে প্রেম চলচ্চিত্রও রয়েছে। এ চলচ্চিত্রের নায়িকা ‘মম’ চরিত্রের শুটিংয়ের জন্য সামনের মাসেই দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমাবেন তিনি। এবার পিয়াকে দেখা যাবে নতুন রূপে। ‘মম’ রূপী পিয়া এখানে একেবারেই মিষ্টি মেয়ে! প্রবাসে প্রেম-এর শুটিং করতে গিয়ে পিয়া কিন্তু মোটেও প্রবাসে প্রেমে পড়বেন না। আগেই তা ঘোষণা দিয়েছেন। কারণ, প্রেমের পাট চুকিয়ে ফেলেছেন পাঁচ বছর আগেই। এবার ভাবছেন বিয়ের কথা। সামনের বছরের শেষের নাগাদ সে সুসংবাদটা হয়তো সবাই পেয়ে যাবেন। এ পর্যন্ত বলে এখন আপাতত বিদায় নিলাম।