জীবনে মরণ কেন আসে...

আজম খান
আজম খান

মুক্তিযুদ্ধের পর এক অন্য ধরনের গান শুনে চমকে উঠল বাংলাদেশ। ‘এত সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে নারে!’ একই সঙ্গে চমকের পর চমক: ‘হাইকোর্টের মাজারে কত ফকির ঘোরে’, ‘আলাল দুলাল’, ‘সালেকা মালেকা’, ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে...’। শ্মশ্রুমণ্ডিত দীর্ঘকায় হ্যাংলা এক যুবকের হাত ধরেই ‘পপ’ ঘরানার গানের সঙ্গে পরিচিত হলো দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা। কেউ তাচ্ছিল্য করল, কেউ বলল, কালের গহ্বরে হারিয়ে যাবে এসব সৃষ্টিছাড়া গান। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের তরুণেরা যেন হ্যামিলিনের বংশীবাদক হিসেবে পেলেন এই যুবককে, তাঁর পেছনে বইতে থাকল তরুণদের স্রোত। বাড়তে থাকল পপ-রক শিল্পীদের সংখ্যাও। এবং, আজ, দীর্ঘদিন পেরিয়েও সেই হ্যাংলা তরুণ, আজম খান যেন তারুণ্যের অমর প্রতীক হয়েই রইলেন। ২০১১ সালের এই দিনে তাঁর নশ্বর দেহটি হয়তো সমাধিস্থ হয়েছে, কিন্তু আজম খান কালের গহ্বরে হারিয়ে যাননি।
১৯৭১ সালে একুশ বছর বয়সে আজম খান চলে গেছেন লড়াইয়ের ময়দানে। রিকয়েললেস রাইফেল পাশে রেখে সতীর্থ মুক্তিযোদ্ধাদের শুনিয়েছেন গান। সে গান প্রেরণা হিসেবে পেয়েছেন যোদ্ধারা। তারপর দেশের জন্য জীবনবাজি রেখে নেমেছেন দেশকে শত্রুমুক্ত করতে। যুদ্ধ শেষে গানই ছিল তাঁর প্রাণ। নিরহংকার লোকটি পেয়েছেন ‘পপসম্রাট’ অভিধা। মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশে প্রজন্মের পর প্রজন্মের শিরায় শিরায় তাই আজম খান রয়েই গেছেন, পুরোনো হননি।
‘লোকে ভুলে যেতে চায়, সহজেই ভোলে’—কথাটা সত্যি, কিন্তু কেউ কেউ আছেন, যাঁদের ভোলা যায় না। সংগীত-অঙ্গনে একটি যুগের প্রবর্তক তিনি। আজ, মৃত্যুদিনে তাঁকে বলি, আপনার গানেই পেয়েছি, ‘জীবনে মরণ কেন আসে’ পংক্তিটি। আপনাকে জানিয়ে রাখি, আপনি মারা গেছেন সত্য, কিন্তু আমরা ভুলিনি আপনাকে, ভুলব না।
আজম খান স্মরণে তাঁরা
আজ আজম খানের মৃত্যুবার্ষিকী। আজ গানে গানে আজম খানকে স্মরণ করবেন তাঁর কাছের মানুষজন। আরটিভির লাইভ স্টুডিও কনসার্ট ‘ওয়ালটন মিউজিক স্টেশন’-এ গান করবেন লাবু রহমান, দুলাল জোহা, আরিফ, নিলু, ফুয়াদ নাসের বাবু, হাবলু পিয়াল, রেভেল প্রমুখ। প্রচারিত হবে রাত ১১টা ২০ মিনিটে। এদিকে আজম খানের মেয়ে ইমা খান জানিয়েছেন, আজ বিকেলে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের মসজিদে এক দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি ‘শিল্পী আজম খান ফাউন্ডেশন’ থেকে গরিব ও ছিন্নমূল শিশুদের সাহায্য করা ছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।