নিকোলাস সিমনের সঙ্গে কিছু সময়

ট্রান্সফরমারস ৩
ট্রান্সফরমারস ৩

‘হতে চেয়েছিলাম সাংবাদিক। ইতিহাস বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে সাংবাদিকতা শুরু করেছিলাম। কিন্তু একসময় বুঝলাম লেখালিখির কাজ আমার জন্য না। তখন আমি ভিয়েতনামে। ফ্রান্স থেকে একটা টিম এসেছে শুটিং করতে। তাদের সঙ্গে পরিচয় হলো, আর আমি ভিড়ে গেলাম তাদের দলে। বুঝলাম, আমার ভালোবাসার টান সাংবাদিকতায় না, ফিল্মে। যদিও ফিল্মের ব্যাপারে আমার আগের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু কাজ করতে করতেই একসময় হয়ে উঠলাম ফিল্ম প্রডিউসার।’ বললেন নিকোলাস সিমোন।
৩ জুন বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি। আর দেশে পৌঁছার কয়েক ঘণ্টা পরেই আমেরিকান দূতাবাসের আমন্ত্রণে তিনি ধানমন্ডির ইএমকে সেন্টারে চলে আসেন। তাঁর অভিজ্ঞতা আর অনুভূতি শোনার জন্য হলভর্তি দর্শক অপেক্ষায় ছিলেন সেখানে। নিকোলাস সিমোন প্রায় পনেরো বছরের বেশি সময় ধরে যুক্ত আছেন ফিচার, ফিল্ম ও টেলিভিশনের বাণিজ্যিক ধারার প্রডাকশনের কাজে। তিনি মূলত আমেরিকান হলেও তাঁর আন্তর্জাতিক মানের কোম্পানি ইন্দোচায়না প্রডাকশন থাইল্যান্ডে। তাঁর প্রডাকশন কোম্পানি কাজ করছে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, লাওস, ফিলিপাইন, মিয়ানমারসহ আরও নানা দেশে। ট্রান্সফরমারস ৩, অ্যাক্ট অব ভ্যালোর, র৵াম্বো, স্ট্রিট ফাইটার—এমন দারুণ সব ছবির সঙ্গে যুক্ত আছে ইন্দোচায়না প্রডাকশন। এ ছাড়া বিউটিফুল কান্ট্রি, স্টেপ ইনটু লিকুইড, সিটি অব ঘোস্ট, বেস্ট অ্যান্ড দি ব্রাইটেস্ট ও আরও অনেক সিনেমার তিনি প্রযোজক ছিলেন।

নিকোলাস সিমন
নিকোলাস সিমন

শুধু ফিল্মেই নয়, টিভি প্রোগ্রাম, ডকুমেন্টারি ও বিজ্ঞাপনচিত্রেও তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা কম নয়। হলভর্তি দর্শকের সঙ্গে নিজের কাজের ব্যাপারে কথা তো বললেনই, পাশাপাশি নানাজনের নানা প্রশ্নের উত্তরও দিলেন ধৈর্যের সঙ্গে। বললেন, ‘একজন প্রডিউসারের জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজ হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিত্বের মানুষকে একসঙ্গে করে তাঁদের কাজের মধ্যে সমন্বয় করা। এ ক্ষেত্রে ছবি তৈরির কাজটা ছবি আঁকার মতো না একদমই। অনেক মানুষকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হয়। আর কেবল একজনের হাতে গুরুভার থাকে, যার কথা মেনে সবাইকে চলতে হয়, তিনি হলেন নির্দেশক। আরেকটা চ্যালেঞ্জ হলো টাকার ব্যবস্থা করা। অনেক ফাউন্ডেশন আছে যারা এসব কাজের জন্য টাকা দিয়ে থাকে। বিশেষ করে ফ্রান্সের কথা তো না বললেই নয়। আমেরিকাও বেশ খরচ করে এ খাতে। প্রযোজকের মাথায় চিন্তা থাকে, কাজের গুণগত মান ভালো করতে হবে, আবার টাকাও বাঁচাতে হবে। তাই আমরা পোস্ট প্রডাকশন থাইল্যান্ডে করি। এটা একদিকে যেমন সাশ্রয়ী, অন্যদিকে তেমনি বিশ্বমানের।’
তিনি তাঁর প্রডাকশন কোম্পানি থেকে করা বেশ কিছু কাজ দেখালেন এবং বললেন, এখনকার তরুণ প্রজন্মের জন্য তো এখন অনেক সুবিধা—ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইট আছে, ইউটিউব আছে। তবে ভালো কাজ করার জন্য ছবি দেখতে হবে, স্ক্রিপ্ট পড়তে হবে, কেন ভালো লাগছে বা খারাপ লাগছে সেটা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। ফিল্ম তৈরি করার জন্য আইন পেশার মতো কোনো ডিগ্রি দরকার হয় না, আন্তরিকতা ও সততা নিয়ে কাজ করাটাই গুরুত্বপূর্ণ৷ নিজেকেই নিজের জন্য সুযোগ তৈরি করে নিতে হবে এবং কী করতে চাই, কেন করতে চাই, সেসব বিষয়ে ধারণা স্পষ্ট হতে হবে। আর কাজের ক্ষেত্রে গ্রাফিক্স ও গুণগত মানটা ভালো রাখা খুব জরুরি।
বাংলাদেশের সঙ্গে কি কাজ করার ইচ্ছা আছে?
একগাল হেসে তাঁর জবাব, ‘অবশ্যই আছে। বাংলাদেশের অনেক সৌন্দর্য আছে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার মতো, এক ধরনের স্বকীয়তা রয়েছে। আর এ দেশের ইতিহাস তো ভীষণ গৌরবময়। এখানকার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আর দেশটা সম্পর্কে ভালোভাবে জানা ও বোঝার জন্যই আমার আসা।’