মায়ের মৃত্যুর এক ঘণ্টা আগে শাফিন যা বললেন...

তিন সন্তান তাহসীন, হামিন ও শাফিনের সঙ্গে
তিন সন্তান তাহসীন, হামিন ও শাফিনের সঙ্গে

অ্যাপোলো হাসপাতালের আইসিইউর সামনে নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন শাফিন আহমেদ। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম না। মায়ের এ রকম অবস্থায় কোনো সান্ত্বনাই মানুষকে শান্ত করতে পারে না। তার পরও বললাম, মাকে নিয়ে কিছু বলবেন?
শাফিনই বললেন, ভাবতেই পারছি না আম্মাকে নিয়ে আমাকে এসব কথা বলতে হচ্ছে। অল্প সময়ে আম্মার শরীর দ্রুত খারাপ হয়ে গেল। আর আমাদের এখন অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে, যা আমাদের চিন্তারও বাইরে ছিল। তিনি মাত্র কদিন আগেও নিজের ঘর থেকে বসার ঘরে আসতেন। নিজেই বাসার সব কাজ করতেন।
মা দুর্দান্ত রান্না করতেন। আমাদের দেখলেই আগে জিজ্ঞেস করতেন, ‘কী খাবে? কী রান্না করা হবে?’ অনেক দিন মায়ের হাতের রান্না খাওয়া হয়নি।
দু-তিন বছর আগেও হাসপাতালে এলে হেঁটেই আসতেন তিনি। তবে দু-তিন বছরে আম্মার শারীরিক অবস্থা দ্রুত পরিবর্তন হয়েছে। হুইলচেয়ারে আসতে হতো। বুঝতে পারতাম, আম্মা হুইলচেয়ার নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।
আমি খুব ভাগ্যবান, কলকাতায় কলামন্দিরে একই সঙ্গে আম্মা আর আমি গান গেয়েছিলাম। ‘সুরের ছায়া, চাঁদের দেশে’ এ গানটি আম্মা উর্দুতে গাইলেন, আর আমাকে বললেন বাংলায় গাইতে। মায়ের সে অনুষ্ঠান দেখতে কলামন্দিরে ছিল প্রচণ্ড ভিড়। গানটি ছিল গজল ধরনের, সুর করেছিলেন আব্বা কমল দাশগুপ্ত। পরদিন পত্রিকায় ছাপা হলো, ‘মায়ের গানে মুগ্ধ, ছেলের গানে স্তব্ধ’।
সত্তরের দশকে আম্মা নিয়মিত টেলিভিশনে গানের অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। সেসব একক অনুষ্ঠানে তিনি নজরুলসংগীতের পাশাপাশি আব্বার সুর করা আধুনিক গানও গাইতেন। আব্বাও মায়ের গানের খুব বড় একজন ভক্ত ছিলেন। তিনি খুব প্রশংসা করতেন। আমরা মায়ের কাছ থেকে নজরুলের গান শিখেছি। তবে বেশি সময় ধরে মায়ের কাছ থেকে গান শেখার সুযোগ আমার হয়নি। তার মূল কারণ ছিল ব্যস্ততা। ঠিকমতো শিখতে পারলে আরও ভালো হতো।
অসুস্থ হওয়ার আগেও আম্মা খুব গান গাইতেন। কিছুদিন আগে এবার হাসপাতালে আসার আগে মায়ের শোবার ঘরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে গানের আলাপ করছিলাম। তিনি বেশ আনন্দিত, পুলকিত হয়েছিলেন। তাঁর মন ভালো করার জন্য আমি প্রায়ই এটা করতাম। আমার ফোনের মধ্যে মায়ের কিছু গান ছিল। আমি তাঁকে সেগুলো শোনাতাম। শুনে তিনি মুগ্ধ হতেন। মায়ের গানগুলো তাঁর মতো করে আর কেউ গাইতে পারেননি, পারবেনও না। গানগুলো শুনে মা নিজেও গেয়ে উঠতেন।
মা ওদিকে, আইসিইউর বিছানায় শুয়ে আছেন। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, মা এখনো আমার পাশে শুয়ে গান গাইছেন।