পরিচয়সংকট নিয়ে আকরামের 'দেশ'

বেঙ্গল গ্যালারিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নৃত্যশিল্পী আকরাম খান l ছবি: প্রথম আলো​
বেঙ্গল গ্যালারিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নৃত্যশিল্পী আকরাম খান l ছবি: প্রথম আলো​

আমাদের সামনে যিনি, তিনি আকরাম খান। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নৃত্যশিল্পী ও নির্দেশক। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নিজস্ব নৃত্যভঙ্গি সৃষ্টি করেছেন, যা যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বে সমাদৃত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামী শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি, যার মধ্যে আছেন অস্কারজয়ী ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েত বিনোশ ও সংগীতশিল্পী কাইলি মিনোগ। গতকাল সোমবার দুপুরে ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে আকরাম খানকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দেওয়া হলো কীর্তিমান এই মানুষটির নানা অর্জনের কথা।
লরেন্স অলিভিয়ার অ্যাওয়ার্ড, এসপিএ সম্মাননা, সাউথ ব্যাংক আর্টস অ্যাওয়ার্ড এবং ক্রিটিকস সার্কেল ন্যাশনাল ডান্স অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য সম্মাননা অর্জনকারী এই শিল্পী এবার জাতীয় নাট্যশালায় ‘নৃত্যনাট্য’ পরিবেশন করবেন। ব্রিটিশ কাউন্সিল ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের যৌথ আয়োজনে ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে মঞ্চস্থ হবে নৃত্যনাট্য দেশ। ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কোরিওগ্রাফার আকরাম খান এ পরিবেশনার নির্দেশক ও শিল্পী। একক এ নৃত্যনাট্য প্রযোজনা করেছে আকরাম খান কোম্পানি।
সংবাদ সম্মেলনে আকরাম খান ছাড়াও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী, নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ, ব্রিটিশ কাউন্সিলের পরিচালক (পার্টনারশিপ অ্যান্ড প্রোগ্রাম) রবিন ডেভিস এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী।

আকরাম খান জানান নৃত্যনাট্যটির কথা। সমসাময়িক ঘটনাবলি নিয়ে রচিত দেশ। বর্তমান বিশ্বে সামষ্টিক অতীত ও ব্যক্তিক বর্তমানের পাশাপাশি পরিচয় সংকটকে এ পরিবেশনায় ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। যেখানে থাকবে ভূমির গল্প, জাতির গল্প, প্রতিরোধের গল্প এবং শরীর ও কণ্ঠের ভারসাম্য রক্ষার গল্প, যার মধ্য দিয়ে মানুষ এ পৃথিবীতে নিজ অস্তিত্ব বজায় রাখতে তৎপর। তিনি জানালেন, মূলত যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ ভ্রমণকালে দুই দেশের স্মৃতি, অভিজ্ঞতা ও পৌরাণিক কাহিনির সঙ্গে পরাবাস্তব পৃথিবীর যোগসূত্র স্থাপন করেছেন তিনি। বাংলাদেশের জাতীয় নাট্যশালাকে তাঁর নৃত্যনাট্য পরিবেশনার জন্য যথার্থ উল্লেখ করে আকরাম খান জানান, ভারতেও এ ধরনের মিলনায়তন তিনি পাননি। তাই ভারতে এই শো করা হয়নি।

কথা বলতে বলতে নিজের মা-বাবার কথাও স্মরণ করলেন আকরাম খান। বললেন, ‘আমার মা-বাবার কাছ থেকে শুনে, তাঁদের অনুপ্রেরণা থেকেই আমি এ ধরনের কাজে নিজেকে যুক্ত করতে পেরেছি। এ দেশের মানুষের বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন দেখার ইচ্ছে হয় বারবার। ২০১০ সালে আমি এই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেরিয়েছি। সেই ভ্রমণের সময় ভিডিও করেছি।’ সেই ভিডিও ক্লিপিংস দেখানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

রবিন ডেভিস বলেন, সৃজনশীল কাজের জন্য চাই যোগ্যতা, সেই যোগ্যতা আকরাম খান নিজ গুণে অর্জন করেছেন। নিজের ইচ্ছা এবং মা-বাবার উৎসাহ ও উদ্দীপনা আজ তাঁকে এ পর্যায়ে এনেছে।

লুভা নাহিদ চৌধুরী বলেন, ‘একটা বিষয়কে উপস্থাপন করতে হলে কী পরিমাণ যোগ্যতা, দক্ষতা থাকা প্রয়োজন, তা আকরাম খানের এ পরিবেশনার মাধ্যমে জানতে পারবে মানুষ। যুক্তরাজ্যে বাস করে এবং মাতৃ-পিতৃভূমি বাংলাদেশের বহমান সংস্কৃতিকে বিদেশে বিশেষভাবে প্রচার ও প্রকাশ করার জন্য আকরাম খানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন লুভা নাহিদ চৌধুরী।

নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে আমি মনে করি, এ পরিবেশনাটি দেশের নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফারদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা।’

লিয়াকত আলী বলেন, প্রথমবারের মতো শিল্পকলা একাডেমীতে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের চেতনায় শাণিত আকরাম খানের নৃত্যনাট্য পরিবেশিত হবে, এটা আনন্দের। বাংলাদেশে যাঁরা সৃজনশীল কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাঁদের এ বিষয়টা দেখা উচিত।

আকরাম খান কাজের মধ্য দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের শিল্পদূতের ভূমিকা পালন করবেন—এ আশাও ছিল লিয়াকত আলীর কণ্ঠে।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন ঈশিতা আজাদ।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর নাট্যশালায় দেশ মঞ্চস্থ হবে ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাতটায়। আসনসংখ্যা সীমিত। তাই, নাট্যশালার ভেতরে শুধু আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য আসন নির্ধারণ করা হয়েছে। দর্শকদের সুবিধার্থে নৃত্যনাট্য পরিবেশনাটি সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য ১৯ সেপ্টেম্বর মঞ্চের পরিবেশনাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি করিডরে এবং শিল্পকলা একাডেমীর চারুকলা ভবন চত্বরে বড় পর্দায় সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

এই অনুষ্ঠান সার্থক করতে সহযোগিতা করেছে বেঙ্গল কমিউনিকেশনস লিমিটেড। সঙ্গে আছে দ্য ডেইলি স্টার, প্রথম আলো এবং চ্যানেল আই। আয়োজন সহযোগী হয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী।