তারকা হওয়ার আগে, তারকা হওয়ার পরে

আফজাল হোসেন
আফজাল হোসেন

পরিবারের সঙ্গে
আফজাল হোসেন
ঈদের আনন্দ সর্বজনীন। এই আনন্দ আমার কাছে সব সময় একই রকম। ঈদ এলেই মনে পড়ে ছোটবেলার কথা। তখন ঈদ কাটত গ্রামে। গ্রামে সে সময় ঈদকে ঘিরে তৈরি হতো অন্য রকম এক উৎসবের আমেজ। আনুষ্ঠানিকতাগুলোর মধ্যে ছিল গভীর আবেগ-অনুভূতি ও সারল্য। আর নতুন কিছু পাওয়ার আনন্দ তো ছিলই—সে এক ভাষাহীন আনন্দের ব্যাপার। শহরের যান্ত্রিক জীবনের জাঁতাকলে সেসব এখন আর চোখে পড়ে না—এখন সবকিছুতেই যেন জাগতিক বিষয়ের হাতছানি। ছোটবেলায় ঈদের নতুন জামার গন্ধ খুব ভালো লাগত। ভীষণ যত্ন করে রাখতাম সেই নতুন জামা। এখন সেসব কেমন যেন দুর্লভ হয়ে গেছে। এখন জামার গন্ধের চেয়েও জামার দাম ও সংখ্যাটাই যেন বড় বেশি মুখ্য হয়ে ওঠে। ঈদের আনন্দ এখন শোভা পাচ্ছে যার যার সময় ও সামর্থ্যের মধ্যে। সম্পর্ক আর সামর্থ্যের বিবেচনায় নির্ধারিত হচ্ছে বেড়াতে যাওয়া হবে কার কার বাসায়? অদ্ভুত! চারদিকে মেকি সম্পর্কের প্রলেপ। আড়াল হয়ে যাচ্ছে ঈদের প্রকৃত আনন্দ, আদর্শ ও উদ্দেশ্য। এসব খুবই কষ্ট দেয়।

আমার ক্ষেত্রে ঈদ উদ্যাপনের সঙ্গে তারকা হওয়ার আগে বা পরের মধ্যে কোনো পার্থক্য ঘটেনি। কেননা, তারকা হওয়ার বিষয়টি আমার মধ্যে তেমন কোনো ক্রিয়া করে না। তারকা হওয়া মানে তো জনবিচ্ছিন্ন হওয়া নয়, তাই না? সব সময়ই আমার ঈদ কেটেছে পরিবারের সঙ্গে। এখনো তার ব্যতিক্রম ঘটে না। পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদ করি। ঈদের দিনে স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের বাসায় বেড়াতে যাই। বাসায় বসে বই পড়ি, টেলিভিশনে ঈদের অনুষ্ঠান দেখি, সিনেমা দেখি, আড্ডা দিই—এই তো...।

 তারকা হওয়ার খেসারত!

মোশাররফ করিম
মোশাররফ করিম


 মোশাররফ করিম
আমরা যারা বিনোদন ভুবনের সঙ্গে যুক্ত, সব সময় আমাদের মধ্যে একটা দোটানা কাজ করে—আমরা যেমন দর্শককে চাই, তেমনই নিজের ব্যক্তিগত সময়কেও চাই। ফলে অধিকাংশ সময় আমাদের শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু শ্যাম আর কুল সব সময় কি মেলে? মেলে না। এসব কথা বলছি কারণ, তারকা হওয়ার আগের ঈদ ও পরের ঈদ প্রসঙ্গে অনেক কথাই মনে আসছে। মনে পড়ছে, আহা এখন তো আমার নিজের সময় বলে আর তেমন কিছুই অবশিষ্ট নেই! যদিও ‘তারকা’ বিশেষণে বরাবরই আমার আস্থা কম, তার পরেও বলি, একসময় বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে স্বাধীনভাবে ঈদ কাটাতাম; শৈশবের বন্ধু আওয়াল ও মিজুর সঙ্গে যেভাবে লাগামহীন আড্ডা দিতাম, এখন সেই অবস্থা নেই। ছোটবেলা পেরিয়ে যখন বড়বেলায় প্রবেশ করেছি, তখন ঈদের দিন আমি, আমার বন্ধু অর্ক ও তুহিন মিলে খিলগাঁওয়ে কী ধুন্ধুমার আড্ডাই না মারতাম, গানবাজনা হতো! অথচ এখন ঈদের দিন মানে ঘুম দিবস! বিশেষত ঈদের নাটকের শুটিংয়ের জন্য সারা রোজার মাস হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হয় আমাদের। তাই ঈদের দিন ছুটির অবসরে ঘুম ছাড়া ভালো আর কী হতে পারে! একটা ঘটনা বলি—তখন কেরাম নাটকটি মাত্র প্রচার করা হয়েছে। এর পরপর ঈদের দিন বিকেলে আমি আমার বউ জুঁইসহ রিকশায় বেরিয়েছি ঘুরতে। রিকশা যখন শান্তিনগর মোড়ে, তখন দু-তিনজন ছেলে আমাদের রিকশার দিকে ছুটে এল। আমি ভাবছি, ছিনতাইকারী নাকি; কিন্তু আমাকে অবাক করে তারা বলল, স্লামালেকুম ভাই, আপনার অভিনয় আমাদের খুব ভালো লেগেছে। সেই থেকে আমি কি তারকা হয়ে গেলাম? জানি না। তবে স্বাধীনতা হারিয়েছি। এখনো ঈদের দিনে বা অন্য কোনো ছুটিতে নিরিবিলি নদীর ধারে ব্রিজের ওপর একাকী বসে থাকতে ভালো লাগে। কিন্তু পারি না যে! ‘তারকা’ হওয়ার খেসারত যেন একেই বলে!

নিপুণ
নিপুণ

 দোকানদারেরা এখন বেশি দাম রাখে
 নিপুণ

তারকা হওয়ার আগের ঈদ বেশ মজার ছিল। আগে ঈদ বেশির ভাগ সময়ই কুমিল্লায় নানির বাড়িতে করা হতো। চাঁদরাত বেশি মজার ছিল। চাঁদ দেখা গেলে রীতিমতো হইচই পড়ে যেত। বাজি ফোটানোর ধুম পড়ে যেত। আমি তারাবাতি নিয়ে খেলতাম। সারা রাত ঘুমাতাম না। তার আগে ঈদের শপিং করা নিয়ে বড় বোনের সঙ্গে আমার প্রতিযোগিতা হতো। বড় বোন বেশি পোশাক কিনত। কিন্তু দেখা যেত, ঈদের দিন আমার পোশাকটাকেই সবাই বেশ পছন্দ করেছে। তখন বড় বোন মন খারাপ করে বসে থাকত। বলত, ‘তোর পোশাকটা অন্তত রাতে আমাকে পরতে দিবি।’ সেই সুযোগে বড় বোনের নতুন চার-পাঁচটা পোশাক আমিও একবার করে পরে নিতে ছাড়তাম না। জুতা কেনা নিয়ে আমার বেশ উত্তেজনা কাজ করত। নতুন জুতা কিনে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত স্টিলের আলমারিতে তুলে রাখতাম। ঈদের নামাজ শেষে বড়রা সবাই বাসায় ফিরলে সালামি নেওয়ার ধুম পড়ে যেত। ওই টাকা দিয়ে আমরা রিকশায় করে শহরে ঘুরতাম।
কিন্তু তারকা হওয়ার পর আমার সেই প্রিয় নিউমার্কেট কিংবা গাউছিয়ায় আর যাওয়া হয় না। মনে হয়, ঈদের সময় গাউছিয়া, নিউমার্কেট না গেলে ঈদের আনন্দই বৃথা। এখন শপিংয়ে গেলে তারকা দেখে দোকানদারেরা দাম বেশি রাখে। দরদামও করা যায় না। ঈদের সময় যে আনন্দ করব, তাও খুব একটা হয় না এখন। বিভিন্ন চ্যানেলে সরাসরি অনুষ্ঠান অথবা কোথাও না-কোথাও শো থাকে। তবে এখন ঈদের সময় সালামি দিতে দিতে অস্থির হয়ে যাই। আগের কথা মনে পড়ে। আগে আমরা অল্প টাকা সালামি পেয়ে কত যে খুশি হতাম!

আগে হাত ভরে মেহেদি দিতাম এখন দেওয়া হয় না

মেহজাবিন
মেহজাবিন


মেহজাবিন

লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার দিয়ে আমার যাত্রা শুরু হয়েছে। এই প্রতিযোগিতার পর আমি বাংলাদেশে পুরোপুরি থাকা শুরু করি। ছোটবেলার কিছু বছর কেটেছে ওমানে, কিছু বছর দুবাইয়ে। এখনো বাবা দুবাই থাকেন। মা ও ছোট ভাই থাকে আমার সঙ্গে, বাংলাদেশে।

তারকা মেহজাবিন হওয়ার আগেও ঈদে অনেক আনন্দ করতাম, এখনো করি। খুব বেশি পার্থক্য হয়নি। ঈদের পোশাক আগে হয়তো প্রতিদিন দোকান ঘুরে শেষের দিকে সবচেয়ে ভালোটা কিনতাম। কাজের ব্যস্ততায় সেই সময় আজকাল পাই না। ফলে আমার এক বন্ধু আছে, যে আমার পোশাকের ডিজাইন করে দেয়। তাঁকেই ডিজাইন দিয়ে বলে দিই, সে আমার পোশাক বানিয়ে দেয়। যেহেতু দেশের বাইরে ছিলাম এবং তখন ছোটও ছিলাম, তখন শুধু পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে যেতাম। এখন তো কাজের সুবাদে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু—এ রকম অনেক বন্ধু হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে ঈদের দিন দেখা করতে হয়। কখনো কখনো টিভিতে বা রেডিওতে ঈদের দিন অনুষ্ঠান থাকে, যা তারকা হওয়ার আগে হতো না। আগে ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাত ভরে মেহেদি দিতাম। এখন দেওয়া হয় না। একটু সময় পেলেই মনে হয় মাকে সাহায্য করি। বন্ধুদের সময় দিই। যদিও বাবার কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সালামি নিই আমি, কিন্তু এখন বাড়ির ছোটরা আমার কাছ থেকে সালামি নেয়।

সুমাইয়া শিমু
সুমাইয়া শিমু

আহা রে
সুমাইয়া শিমু
ছোটবেলার ঈদটা ছিল অন্য রকম মজার—তারকা হওয়ার আগের ঈদের কথা বলতে গেলে প্রথমেই মনে পড়ে এ কথা। ছোটবেলায় রোজা শুরুর পর থেকে ঈদ যখন আসি-আসি করছে, সে সময় থেকেই শুরু হতো আমাদের উত্তেজনা। আমাদের মানে আমি, আমার বড় বোন শিল্পী ও বড় ভাই তাপস। পরিবারে আমি সবার ছোট। তাই আহ্লাদ, আবদার ও ঈদের নতুন কাপড়—আমার সবই ছিল বেশি। সাত-আটটা নতুন পোশাক পেতাম। আর ঈদ সালামির কথা কী বলব! ঈদ সালামির চকচকে টাকা রাখার জন্য আগে থেকেই নতুন ব্যাগ ঠিক করে রাখতাম। সারা দিন কাটত ভাইবোন-বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে হইহুল্লোড় করে। তখন ঈদের দিন বাসায় কেউ ঘুমালে আমার বিস্ময়ের সীমা থাকত না। ভাবতাম, ঈদের দিনে পড়ে পড়ে ঘুমায়, এ আবার কেমন মানুষ—বড়ই আজব!কিন্তু এখন আমিই ঈদের দিনে কখনো কখনো ঘুমিয়ে নাক ডাকি। বিশেষ করে সারা বছর
ও ঈদের আগে শুটিংয়ের যে ধকল যায়, ঈদের ছুটিতে সে ধকল থেকে কদিনের জন্য হলেও মুক্তি মেলে—বিছানায় গড়াগড়ি দিয়ে আনমনেই বলা যায়, আহ্ শান্তি!

তরকা হওয়ার আগে ঈদ উপলক্ষে শুধুই পেতাম; কিন্তু এখন সবাইকে দিতে হয়। তবে এখানে এ কথাও বলতে হবে, এই দেওয়ার মধ্যে একটা অন্য রকম আনন্দ আছে। এখন আরেকটি ব্যাপার ঘটে—আগে যেমন ঈদের জামা নিয়ে ভেতরে ভেতরে একটা উচ্ছ্বাস কাজ করত, এখন কাজের জন্য হরহামেশা জামাকাপড় কেনা লাগে বলে ঈদের জামার সেই মজাটা কেন যেন ফিকে হয়ে গেছে। এ জন্য মাঝেমধ্যে খুবই আফসোস হয়—আহা রে...।

 চাঁদরাতে বন্ধুরা মিলে নিউমার্কেটে যেতাম

সজল
সজল


 সজল

ঢাকা কলেজে পড়ার সময় আমাদের ২০ জনের একটা দল ছিল। ঈদের আগের দিন সবাই মিলে আড্ডা দিতে নিউমার্কেটে যেতাম। আর এখন তো ঈদের আগের দিন পর্যন্ত শুটিং করতে হয়। আর ঈদের তিন দিন বাইরের কোনো কাজ করি না। এই সময়টা এখন শুধু পরিবার ও বন্ধুদের জন্য। আগে তো সব সময়ই ওদের জন্য বরাদ্দ ছিল। তবে তারকা হওয়ার পরের ঈদগুলোও উপভোগ করি।

এখন যেমন অনেক ভক্ত উপহার দেয়, মুঠোফোনে শুভেচ্ছা জানায়, এসব তো আগের সজলকে কেউ করত না। আগে দেখা যেত রমজান মাসজুড়েই আনন্দ করতাম, কবে ঈদ আসবে। সালামির জন্য অপেক্ষা। সেই দিনগুলো নেই। ঈদের দিনে নিজের জন্য একটু সময় রাখি। একটু বিশ্রাম নিই। আগে শুধু কাজিনরা ছিল, এখন তো তাদের ছেলেমেয়ে হয়ে গেছে। সবাইকেই সালামি দিতে হয়। অবশ্য ওদের এই আনন্দ দেখে নিজেরও আনন্দ হয়।

বাঁধন
বাঁধন

মনে পড়ে চাঁদনীচক
বাঁধন

ঈদ নিয়ে কত স্মৃতি—কোনটার কথা বলব! এই যেমন ঈদের মৌসুম এলেই চোখে ভেসে ওঠে ঢাকার চাঁদনীচক মার্কেট—এই মার্কেটের কোনো দোকানে বসে দোকানির সঙ্গে ধুমসে দরদাম করছি আমি। ২০০৬ সালের আগে। তখন আমি সবে ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হয়েছি। এ সময় আমার জানিদোস্ত সুরাইয়া ইকবালকে নিয়ে চাঁদনীচকে যাওয়া ছিল আমার নিয়মিত রুটিন—মন ভালো থাকলেও যেতাম, মন খারাপ থাকলেও যেতাম; আর ঈদের সময় এই মার্কেটে আমার পা তো অবশ্যই পড়ত। আমি ভালো দামদর করতে পারি, তাই ঈদের কেনাকাটায় আমার এই প্রতিভা কাজে লাগত বেশ। কিন্তু কপালের কী লিখন—কেমন করে যেন ‘তারকা’ হয়ে গেলাম! তারপর অনেক প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে কিছু বিপত্তিও ঘটল—এখন ঈদের সময় এই মার্কেটে কেনাকাটা করতে গেলে দামদর তো করতে পারিই না, উল্টো বেশি দিতে হয়। যে দোকানেই যাই, দাম হাঁকানোর পর দোকানির এক কথা, ‘আপা, আপনি খুব সুন্দর, আপনার অভিনয় আমার খুব ভালো লাগে। আপনি যদি দামাদামি করেন তো অন্যরা কী করবে, বলেন তো?’ মুখের ওপর কেউ এত প্রশংসা করলে সেখানে আর কি কোনো কথা বলা যায়? দোকানি যা চায়, মুখ বুজে তা-ই দিয়ে নীরবে চলে আসতে হয়। এ জন্য কেনাকাটার ক্ষেত্রে এখন একদরের দোকানই আমার প্রধান ভরসা। তবে প্রতিবছর ঈদ এলেই মনে পড়ে চাঁদনীচকের কথা। তারকা হওয়ার আগে-পরের ঈদ এবং আমার এই দুই জীবনের ঈদের মধ্যে যে ফারাক, সে সম্পর্কে বলতে গেলে অবশ্যই এ কথা বলতে হবে, আমার দরদাম করার প্রতিভাটি এখন নষ্ট হচ্ছে! বুকের ভেতর থেকে মাঝেমধ্যে তাই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে...হা হা হা।

সিদ্দিকুর রহমান
সিদ্দিকুর রহমান

 পরিপূর্ণ ঈদ এবার হাহ হাহ হা

সিদ্দিকুর রহমান

তারকা হওয়ার আগে ঈদের আলাদা আনন্দ ছিল। ঈদের আগেই জানতাম কার কাছে গেলে সালামি পাওয়া যাবে। সেই অনুযায়ী তালিকা করে রাখতাম। একই সঙ্গে ঈদের দিন সিনেমা দেখার পরিকল্পনাও করে রাখতাম। ঈদের দিন ঘুম থেকে উঠে ফিটফাট হয়ে তিন ঘণ্টা আগেই মাঠে গিয়ে বসে থাকতাম। সামনের সারিতে বসা চাই-ই চাই। নামাজ শেষে সালামি নিয়ে উপজেলা সদরের দিকে রওনা হতাম। সিনেমা দেখতেই হবে। টাঙ্গাইলের মাধবী, সাথী ও কল্লোল সিনেমা হল—এই তিন হলে পাঁচ শো মেরে তারপর রাতে বাড়িতে ফিরতাম।

অভিনয়ে পরিচিতি পাওয়ার পর পুরো উল্টো হয়ে গেছে সবকিছু। এখন আর তিন ঘণ্টা আগে ঈদের মাঠে যাওয়া লাগে না। যখনই যাই, সবাই সামনের সারিতে বসার ব্যবস্থা করে দেন। আর এখন সালামি নেওয়া তো দূরের কথা, দিতে দিতে হাঁফ ধরে যায়। বোনের, ভাইয়ের, চাচাতো বোন-ভাইয়ের একপাল ছেলেমেয়ে। ঈদের দিন আমার ঘরে নতুন টাকা হাতে নিয়ে বসি। পিচ্চিরা সবাই সারিবদ্ধ হয়ে আমাকে সালাম করে, নতুন টাকা হাতে পেয়ে কী যে খুশি হয়! এখন তো আর সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখা হয় না। ঈদে বাড়িতে গেলে নিজ উপজেলা তো আছেই অন্যান্য উপজেলার লোকজনও আমাকে দেখার জন্য বাড়িতে ভিড় করে। তবে বলে রাখি, এত দিন ব্যাচেলর ঈদ উদ্যাপন হতো। এবার থেকে পরিপূর্ণ পরিবার নিয়ে পরিপূর্ণ ঈদ শুরু হতে যাচ্ছে। হাহ হাহ হা।

এই বেশ ভালো আছি

সুমন পাটোয়ারী
সুমন পাটোয়ারী


 সুমন পাটোয়ারী
আমাদের ছোটবেলায় ঈদ কাটত গ্রামের বাড়িতে। তখনকার আনন্দটা ছিল অন্য রকম। নতুন পোশাক নিয়ে ভাইবোনদের মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়ে যেত। বাবা হাসিমুখে আমাদের ভাইবোনদের এই আনন্দ দেখতেন। এখন বাবা নেই। তাঁকে খুব মিস করি। ওই সময় বন্ধুদের নিয়ে সারা দিন ঘুরে বেড়াতাম। তখন অবশ্য এখনকার মতো এতটা ‘স্বাস্থ্যবান’ ছিলাম না। ঘুরতে খুব মজা লাগত। কিন্তু হায়! এখন সেই ঘোরার সুযোগ হাওয়া। তা ছাড়া আমার বাসা উত্তরায়। মূল রাজধানী থেকে একটু দূরেই। তাই ঈদের দিন সারা দিনই বাসায় থাকি। বন্ধু বা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যাওয়া হয় কম। এখন ঈদের দিনের বেশির ভাগ সময়ই রিমোট হাতে টিভির সামনে বসে থাকি—চ্যানেলের তালিকার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাই, আবার ফেরত আসি। মজার ব্যাপার হলো, ঈদের সময় মানুষ ফোন করে এবং দেখা হলেই জানতে চায়, কয়টা নাটক যাচ্ছে এবারের ঈদে? বিশেষ করে আমার মা খুব আগ্রহ নিয়ে আমার নাটক দেখেন। ঈদের দিন বন্ধুরা বেড়াতে আসে বাসায়। সম্ভব হলে তাদের নিয়ে নিজের অভিনীত নাটক দেখি। আড্ডা দিই। সন্ধ্যার দিকে সবাই মিলে বের হয়ে আশপাশের কোথাও ঘুরতে যাই। এই আরকি! তবে আমার কাছে তারকা হওয়ার আগে বা পরের ঈদের মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। আমি আগে যেমন ছিলাম, এখনো তেমনই আছি—এই বেশ ভালো আছি।

নতুন লুঙ্গি ছাড়া আমার ঈদই হয় না!

শরিফুল

আমার একটা সাইকেল আছে। ছোট আর পুরোনো। চিন্তা করেছি, এই ঈদে একটা বড় সাইকেল কিনব। আমি অবশ্য এখনো বড় হইনি, তবে বড় হচ্ছি তো! তাই এখন থেকেই বড় সাইকেল চালানোর অভ্যাস করা উচিত। আরও কিনব পাঞ্জাবি-পাজামা, স্যান্ডেল আর লুঙ্গি। নতুন লুঙ্গি ছাড়া আমার ঈদই হয় না!