অতিথি অপর্ণা অতঃপর...

অপর্ণা ঘোষ। ছবি: কবির হোসেন
অপর্ণা ঘোষ। ছবি: কবির হোসেন

অপর্ণা ঘোষ ঢাকায় আসেন ২০০৬ সালে। ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন তিনি। ছিলেন সেরা চারের একজন। তখন তিনি ছিলেন ঢাকার অতিথি। ঢাকায় এসেছেন প্রয়োজনে। কাজ সেরেই ফিরে গেছেন চট্টগ্রামে। অপর্ণা চট্টগ্রামের মেয়ে। চট্টগ্রাম শহরের জিইসির মোড় এলাকায় তাঁর বাসা।
এরপর চিত্রটা ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করে। বছর তিনেক পর তিনি ঢাকায় স্থায়ীভাবে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ, তখন তিনি টিভি নাটকে কাজ শুরু করেছেন। কাজ মানে অভিনয়্।
হ্যাঁ, নিজেকে অভিনয়েই সীমাবদ্ধ রেখেছেন তিনি। এর বাইরে আর কিছু ভাবার অবকাশ নেই। মাত্র পাঁচ বছরে নিজের জন্য বেশ মজবুত অবস্থান তৈরি করেছেন।
তবে ২০১৪ সাল অপর্ণার অভিনয়জীবনের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই বছর অনেকের মাঝ থেকে নিজেকে আলাদা করে তুলে ধরেছেন তিনি। সেটা কীভাবে? আসুন সেই গল্প শোনা যাক অপর্ণার কাছ থেকেই। গত ১৩ জানুয়ারি সকালে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হলো প্রথম আলোর কার্যালয়ে।
গল্পের শুরুতেই চলে আসে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রসঙ্গ। মেঘমল্লার, সরকারের অনুদান পেয়েছে ছবিটি। পরিচালক জাহিদুর রহিম অঞ্জন। মুক্তিযুদ্ধের গল্প। অপর্ণা বলেন, ‘অসাধারণ একটা কাজ! মেঘমল্লার ছবির চিত্রগ্রাহক সুধীর পালসানে। আমি তো অল্প কাজ করেছি। কিন্তু তিনি আমার দেখা সেরা একজন চিত্রগ্রাহক। আমরা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠতাম ভোর পাঁচটায়। মেকআপ নিয়ে ক্যামেরার সামনে গিয়ে দাঁড়াতাম ছয়টায়। ১০টা থেকে বিরতি। একদিন আমি বিরতির সময় ঘুমিয়ে পড়েছি। ঘুম থেকে জেগে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ভাবলাম, এতক্ষণ ঘুমিয়েছি! পরে দেখি শটের জন্য বাড়িজুড়ে এমন আলো সেট করা হয়েছে, ভরদুপুরে মনে হচ্ছে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আর পর্দায় পুরো ছবিটি দেখে অবাক না হয়ে উপায় ছিল না।’
আরও একটি ছবিতে অভিনয় করেছেন অপর্ণা, সুতপার ঠিকানা। ছবিতে তিনিই ‘সুতপা’। পরিচালক প্রসূন রহমান।
অপর্ণা জানান, তাঁর প্রথম ছবি মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার। দ্বিতীয়টি ইফতেখার ফাহমির টু বি কন্টিনিউড মাঝপথে থেমে আছে, আর তৃতীয়টি গাজী রাকায়েতের মৃত্তিকা মায়া।
অপর্ণা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমাকে অনুরোধের ঢেঁকি গিলতে হয়েছে। উপায় ছিল না। তবে এখন থেকে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেব। অবশ্যই ছবির গল্প, আমার চরিত্র আর পরিচালক—সবকিছু দেখে তারপর।’
আর যদি তেমনটি না পাওয়া যায়? অপর্ণা বলেন, ‘তাহলে কাজ করব না। অল্প কাজ করব, ভালো কাজ করব। যাতে সবাই কাজটাকে মনে রাখেন। কাজটা নিয়ে আলোচনা হয়।’
এ তো গেল বড় পর্দার কথা। ছোট পর্দার ব্যাপারেও অপর্ণার একই মত। জানান, গত বছর ভালোবাসা দিবসে ‘ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প’ সিরিজের একটি নাটকে কাজ করেন তিনি। নাম অতঃপর। পরিচালক শাফায়েত মনসুর। অপর্ণার সঙ্গে ছিলেন জন। একই পরিচালকের আরেকটি টেলিছবিতে তিনি কাজ করেছেন। এয়ারটেলের ওই টেলিছবির নাম ভিটামিন টি।
অপর্ণা বলেন, ‘এই টেলিছবি করতে গিয়ে আমি কয়েকজন ভালো বন্ধু পেয়েছি।’
আরও একটি নাটকের কথা আলাদা করে উল্লেখ করলেন অপর্ণা, আশিকুর রহমানের স্বপ্ন সময় সম্ভাবনা। দেখানো হয়েছিল এনটিভিতে।
তবে তিনি দর্শকের অনেক কাছে পৌঁছে যান সোনার ডিম নাটকটি দিয়ে। অপর্ণা বলেন, ‘এই নাটকে আমি মোশাররফ করিমের সঙ্গে অভিনয় করেছি। তিনি তো দারুণ জনপ্রিয়। তাঁর সঙ্গে কাজ করার এই এক সুবিধা, অনেকেই কাজটা দেখেছেন।’
গত কয়েক বছরে ‘মেড ইন চিটাগং’ সিরিজের ছয়টি নাটকে অভিনয় করেছেন অপর্ণা। নাটকটির সংলাপ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায়। অপর্ণা বলেন, ‘আমি চট্টগ্রামের মেয়ে, তাই কোনো সমস্যা হয়নি। অনেকেই নাটকগুলো দারুণ পছন্দ করেছেন। দেশে তো বটেই, দেশের বাইরে থেকেও দারুণ সাড়া পেয়েছি।’
উল্লেখ করলেন কয়েকটি ধারাবাহিকের নাম। এই যেমন: ইচ্ছে ঘুড়ি, রাব্বু ভাইয়ের বউ আর হল্লাবাজি।
ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক করেছেন অপর্ণা। কিন্তু কাজের চাপে স্নাতকোত্তর আর করা হয়নি। বলেন, ‘ইচ্ছে আছে। সুযোগ পেলেই ভর্তি হব।’
সাপ্তাহিক ছুটি এখন নেই বললেই চলে। যদি কাজের ফাঁকে একটু সময় পান, তাহলে বই পড়েন আর সিনেমা দেখেন। আলাদা কোনো পছন্দ নেই। কার্টুন, অ্যানিমেশন থেকে শুরু করে যা কাছে পান, সবই দেখেন। বলেন, ‘আমি শুধু বিনোদন পেতে চাই।’
আর চট্টগ্রামে মা-বাবার কাছে যান, যখন কাজের মাঝে বড় ছুটি পান। বলেন, ‘ওটা আমার খুব শান্তির জায়গা। তখন আর কোনো ভাবনা থাকে না।’