নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক...

শুভ। ছবি: কবির হোসেন
শুভ। ছবি: কবির হোসেন

‘নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক
পায়েলখানি বাজে
মাদল বাজে সেই সংকেতে
শ্যামা মেয়ে নাচে...’
স্ত্রী মীরা দেববর্মনের লেখা গানটিতে সুর করেন শচীন দেববর্মন। পরে গানটি শচীন দেববর্মনের কণ্ঠেই জনপ্রিয় হয়। আজকের প্রজন্ম কি জানে সেই কথা? অনেকেই মনে করেন, গানটির শিল্পী শুভ। সবার কাছে তিনি পরিচিত ‘ডি রকস্টার’ শুভ নামে।
শুভ বললেন, ‘সব অনুষ্ঠানেই আমাকে গানটি করতে হয়। গাওয়ার আগে অবশ্যই আমি সবাইকে শচীন দেববর্মনের কথা মনে করিয়ে দিই।’
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নতুন জার্সি শিগগিরই উন্মোচন করা হবে। জার্সির এবারের ভাবনা ‘সুন্দরবন’। জার্সির পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে একটি গান। গানটির শিরোনাম ‘ওরা আসছে’। লিখেছেন মেজবাউর রহমান সুমন ও অনম বিশ্বাস, সুর করেছেন শুভ, সংগীত পরিচালনা করেছেন আমজাদ হোসেন। শিগগিরই গানটিতে কণ্ঠ দেবেন চন্দনা মজুমদার, শফি মণ্ডল ও শুভ। শুভ জানালেন, গানটির পৃষ্ঠপোষক লিঙ্কন ও টেক্সওয়েব।
১৮ জানুয়ারি প্রথম আলো কার্যালয়ের নিচে কথা হয় শুভর সঙ্গে। তাঁর চোখে-মুখে হাসির ছোঁয়া। কারণ হিসেবে বললেন, ‘ঢাকায় থাকতে পারছি, তাই। এই যে যানজট, হট্টগোল—এগুলো সিডনিতে খুব মিস করি। যখন মন খারাপ হয়, টুম্পাকে (শুভর স্ত্রী) নিয়ে চলে যাই সমুদ্রের পাড়ে।’
হ্যাঁ, শুভ এখন থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে অস্ট্রেলিয়া ইনস্টিটিউট অব মিউজিকে (এআইএম) মিউজিক প্রোডাকশন বিষয়ে পড়ছেন তিনি। গান করেন বিভিন্ন কনসার্টে। আর সেসব কনসার্টের আয়োজক প্রবাসী বাঙালিরা।
কিছুদিনের জন্য শুভ এসেছেন ঢাকায়। জানালেন, ঢাকায় তাঁকে একপ্রকার টেনে আনা হয়েছে।
মানে? বললেন, ‘২০১৪ সালের গোড়া থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আছি। এই কয়েক মাসে দেশে ফেরার জন্য মনটা কেমন যেন অস্থির হয়ে পড়েছিল। এরই মধ্যে ২০টি কনসার্টে গান গাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পাই। ২৬ অক্টোবর থেকে পুরো উত্তরবঙ্গ, ঢাকা, টাঙ্গাইল, ভৈরব, যশোর, ময়মনসিংহ আর সিলেটে গান করেছি। কনসার্টগুলোর আয়োজন করেছে গ্রামীণফোন। আমি ফুয়াদ অ্যান্ড ফ্রেন্ডসের সদস্য। তারও কিছু কাজ ছিল। ১৪ অক্টোবর দেশে এসেছি। অস্ট্রেলিয়ায় কবে যাব, তা এখনো ঠিক করিনি।’
কেন? আর কী কাজ বাকি আছে? শুভর চোখ আর মুখের আনন্দ কোথায় যেন হারিয়ে যায়। বললেন, ‘বাবা (এইচ এম নজরুল ইসলাম) বারডেম হাসপাতালে ভর্তি। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। ছিলেন নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে। এখন কেবিনে আনা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে কয়েক দিনের মধ্যেই বাবার অস্ত্রোপচার করা হবে।’
শুভ হাসপাতালে যাবেন। বাবার পাশে থাকতে হবে তাঁকে। শুভর সঙ্গে কথা বলতে বলতে শাহবাগে বারডেম হাসপাতালে পৌঁছে যাই। কেবিনের বিছানায় শুয়ে আছেন শুভর বাবা।
শুভ বললেন, ‘বিছানায় শোয়া এ মানুষটিই আমার প্রথম গুরু। সরাসরি তাঁর কাছে গান শিখিনি। কিন্তু আমার সংগীতশিল্পী হয়ে ওঠার পেছনে পরোক্ষভাবে ভূমিকা রয়েছে তাঁর।’
শাহবাগে যাওয়ার পথে নানা বিষয় নিয়ে কথা হয় শুভর সঙ্গে। তাঁর কাছে জানতে চাই, তাঁর নামের আগে কেন এখনো ‘ডি রকস্টার’ ব্যবহার করা হয়? বললেন, ‘২০০৬ সালে আমি ডি রকস্টার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হই। তার আগে ২০০৩ সালে বেনসন অ্যান্ড হেজেস স্টার সার্চ প্রতিযোগিতায়ও সেরা হয়েছি। তবে সেই যে শুরু থেকে আমার নামের আগে ‘ডি রকস্টার’ ব্যবহার শুরু হলো, তা এখনো হচ্ছে। আমি কিন্তু ব্যাপারটি দারুণ উপভোগ করি।’
শুভ গান করছেন ১৯৯৮ সাল থেকে। বেরিয়েছে তিনটি অ্যালবাম শুভস রকারস ইন করপোরেট (২০০৭), অনেক কিছু (২০১১) ও অনেক স্বপ্ন (২০১৪)।
শুভকে অনেক কনসার্টেই হাত-মাইক নিয়ে গান করতে দেখা যায়। শুভ বললেন, ‘২০০৭ সালে ফুয়াদ আল মোক্তাদিরের সঙ্গে কাজ শুরু করি। তখন গানে টেলিফোনি কণ্ঠের ব্যবহার ছিল। একদিন রাস্তায় ইঁদুর মারার বিষ বিক্রেতাকে দেখলাম, মেগাফোনে (হাত-মাইক) কথা বলছেন। ব্যাপারটি আমার ভালো লাগে। পরে তা গুলশানের একটি কনসার্টে প্রথম ব্যবহার করি। শ্রোতারাও তা পছন্দ করেন।’
আবার ‘নিটোল পায়ে’ গানের প্রসঙ্গ। বাংলাদেশে শচীন দেববর্মনের গানটির কয়েকটি সংস্করণ শোনা যায়। ফুয়াদ আল মোক্তাদির, রাজীব আর শান্তর পর গেয়েছেন শুভ। শুভ বললেন, ‘কলকাতায় সাউথ এশিয়া সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় এই গানটি গেয়েছিলাম। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সংগীতশিল্পী উষা উত্থুপ। তখন তিনি খুব প্রশংসা করেছিলেন। প্রতিযোগিতায় আমিই সুপারস্টার হয়েছিলাম।’
হাসপাতালের কেবিনে কিছুক্ষণ পর পর আসছেন চিকিৎসক আর সেবিকারা। এখানে কোনো আলাপ নয়। বাবার শারীরিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি কামনা করে বিদায় নিই শুভর কাছ থেকে।