আরিফের আখ্যান

রেজা আরিফ
রেজা আরিফ

তাঁর কাছে থিয়েটার প্রথাবদ্ধ কিছু নয়, বরং থিয়েটারে নানা কিছুর মিশ্রণ ঘটাতে চান তিনি। ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে যে থিয়েটারে অভ্যস্ত—খানিকটা সংলাপ, একটু মুভমেন্ট, অ্যাকশন-রিঅ্যাকশন। এর বাইরেও করার মতো অনেক কিছু আছে মঞ্চ নাটকে। থিয়েটার হলো সামগ্রিক বিষয়ের উদ্যাপন।’—রেজা আরিফের মুখে এই কথাগুলো শুনে ভাবনা জাগে, খানিকটা ধন্দও—থিয়েটার তাহলে কী?
আবার মুখ খুললেন আরিফ, ‘থিয়েটারকে তো যে যার মতো করেই দেখবেন। এটা আসলে দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার।’
এ সময়ের তরুণ নির্দেশক রেজা আরিফের সঙ্গে কথা হচ্ছিল আমাদের। রহুচণ্ডালের হাড়, কেরামতমঙ্গল, সে রাতে পূর্ণিমা ছিল, কারবালার জারি-এমন বেশ কয়েকটি প্রযোজনার নির্দেশনা দিয়ে নাটকপাড়ায় বেশ আলোচিত হয়েছেন তিনি।
প্রথম আলো কার্যালয়ে সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, জানালেন, নাটকের সঙ্গে যে গাঁটছড়া বাঁধবেন, এমন ভাবনা মাথায়ই ছিল না। বেড়ে উঠেছেন কুষ্টিয়ায়। সেখানে বড় ভাই আওয়াল রেজা যুক্ত ছিলেন ‘পরিমল থিয়েটার’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে। সেই সূত্রে ওই সংগঠনে যাতায়াত শুরু হয় তাঁরও। এরপর বড় ভাইয়ের মাধ্যমেই ঢাকার নাটকপাড়ার লোকজনের সঙ্গে সংশ্রব। সেসব বহু আগের কথা। তবে এই যে কুষ্টিয়ার ‘পরিমল থিয়েটার’ থেকে ঢাকার নাটকপাড়া—এভাবেই কি থিয়েটারের প্রতি প্রেম?
‘না।’—কথাটি আরিফ বললেন বেশ দৃঢ়ভাবেই, ‘এইচএসসি পাসের পর ১৯৯৭ সালে ভর্তি হলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যতত্ত্ব বিভাগে। সেলিম আল দীনকে পেলাম শিক্ষক হিসেবে। তাঁর নির্দেশনায় কাঁদো নদী কাঁদোসহ কয়েকটি নাটকে কাজ করলাম। মূলত তিনিই বদলে দিয়েছেন আমাকে।’
আরিফ একটু থেমেছেন। এবার বুঝি তাঁর বদলে যাওয়ার গল্পগুলো আরও বিশদ করে বলবেন। কিন্তু না, আরিফের কথায় কথায় আবারও সেলিম আল দীন, ‘স্যারের কাছেই আমার নির্দেশনায় হতেখড়ি। তাঁর নির্দেশনা দেখেই থিয়েটার নিয়ে একটু ভিন্নভাবে ভাবার সাহস পেয়েছি। সেলিম আল দীন অনেক বড় নাট্যকার; কিন্তু বড় নির্দেশকও ছিলেন তিনি।’
এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগেই শিক্ষকতা করছেন। এর বাইরে গড়ে তুলেছেন নাটকের দল ‘আরশিনগর’। নাট্যতত্ত্ব বিভাগ ও নিজের দল মিলিয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন বেশ কয়েকটি নাটকের। এর মধ্যে বেশির ভাগই বিভিন্ন উপন্যাসের নাট্যায়ন। ‘আমাদের দল থেকে সামনে অভিজিৎ সেনের রাজপাট ধর্মপাট মঞ্চে আনতে চাই।’ বললেন নিজের পরিকল্পনার কথা।
আরিফের সঙ্গে কথা যে মুহূর্তে শেষ হচ্ছে, জানতে ইচ্ছে হলো, স্বতন্ত্র নাটক থাকতেও মঞ্চে বারবার কেন উপন্যাসকে তুলে আনতে চান তিনি?
‘আসলে শিল্পের তো কোনো ভেদ নেই। তা ছাড়া উৎকৃষ্ট সাহিত্যকর্মের বর্ণনার মধ্যে যে সৌন্দর্য থাকে, বর্ণনার মধ্যে যে কবিতা থাকে, কেন জানি না, মঞ্চে সেটা দৃশ্যমান করতে খুব ভালো লাগে আমার।’
রেজা আরিফ কথা বলেন, আর আমরা ভাবি, তবে কি মঞ্চে বড় কোনো কবিতা লেখার অপেক্ষায় আছেন এই তরুণ তুর্কি?