'অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পেলেন সোনিয়া নিশাত আমিন

সো​নিয়া নিশাত আমিনের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন তাসমিমা হোসেন, ​সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ও সেলিনা হোসেন
সো​নিয়া নিশাত আমিনের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন তাসমিমা হোসেন, ​সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ও সেলিনা হোসেন

দেশের গবেষণা ও প্রবন্ধ সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার ১৪২২’ পেলেন বিশিষ্ট গবেষক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন। আজ ধানমন্ডির শংকরে সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র ছায়ানট ভবনের অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর হাতে এই পুরস্কারের পদক ও সম্মাননা অর্থ ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ও বিশেষ অতিথি ছিলেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন।
অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে আবৃত্তি করেন আবৃত্তিশিল্পী তামান্না ডেইজি এবং সংগীত পরিবেশন করেন দেশের দুই জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী চন্দনা মজুমদার ও মেহরীন।
শনিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানটি শুরু হয় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। পুরস্কার প্রদান পর্বে পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও গবেষক সোনিয়া নিশাত আমিনকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন ও সনদ তুলে দেন সেলিনা হোসেন, তাঁর হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, পুরস্কারের ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন তাসমিমা হোসেন।
পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও গবেষক ড. সোনিয়া নিশাত আমিনকে নিয়ে সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি আজকের অনুষ্ঠানের মধ্যমণি, পুরস্কৃত লেখক সোনিয়ার শিক্ষক। এই কারণে এটা আমার জন্য বিরল সৌভাগ্য। পাক্ষিক অনন্যাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। গুণিমানুষের মূল্যায়ন করলে সমাজ এগিয়ে যায়। আর সেটি না করতে পারলে সমাজ অন্ধকারের দিকে চলে যায়। এ কারণে এই ধরনের পুরস্কারের গুরুত্ব অনেক।’
সোনিয়া নিশাত সম্পর্কে বলতে গিয়ে সেলিনা হোসেন বলেন, ‘এটি খুব সম্মানীয় পুরস্কার। অনেকে এই পুরস্কার পেতে চান, তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে। সোনিয়া এই পুরস্কারের যোগ্য দাবিদার বটে।’
লেখকের কাজ নিয়ে সেলিনা হোসেন বলেন, ‘পুরুষনির্মিত ইতিহাসে নারীর ইতিহাস বরাবরই উপেক্ষিত হয়েছে। যদি “হিস্ট্রি সারভাইভাল অব ফাক্টস” হয়, তাহলে নারীর ইতিহাস ছাড়া সেটি সম্পূর্ণ হতে পারে না। সোনিয়া মননশীলতা ও সৃজনশীলতা এক করেছেন তাঁর গবেষণার কাজে। ‘বাঙালি মুসলিম নারীর আধুনিকায়ন’ শীর্ষক তাঁর যে গবেষণা গ্রন্থ, সেখানে সোনিয়া ভিন্নধর্মী বিশ্লেষণ দিয়ে নারীর বিবর্তনের ইতিহাস তুলে এনেছেন। ১৮৭৬ সাল থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত-এই দীর্ঘ সময়ে নারীর ইতিহাসের নানা দিক, নানা অনুষঙ্গ তুলে এনেছেন। ইতিবাচক পরিবর্তন কীভাবে ইতিহাস গ্রহণ করেছে, সেটি সোনিয়া তাঁর গবেষণার মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করেছেন। এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে সোনিয়ার ‘ঢাকার নগরজীবনে নারী’ শীর্ষক একটি সম্পাদিত গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। চার শ বছরে নারীর বিবর্তনমূলক ইতিহাস তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন।’
সোনিয়া নিশাত আমিন তাঁর অভিব্যক্তি প্রদান করতে গিয়ে বলেন, ‘আজ আমার ভেতর তিনটি অনুভূতির মিথস্ক্রিয়া ঘটছে—গর্ব, আনন্দ ও বিনয়। গর্ব-আনন্দ এই কারণে যে, দীর্ঘ ২৫ বছর আমার গবেষণা জীবনের একটা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেলাম। আর বিনয় এই জন্যে যে, যাঁরা এই পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁদের নামের পাশে নিজের নাম উচ্চারিত হওয়াটা সৌভাগ্যের। নিজে বরাবরই নিভৃতে কাজ করেছি। পুরস্কার পাওয়ার কথা ভাবনায় আসেনি। আমি কাজ করেছি, আমার দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যবোধ থেকে। আমি দেখেছি, ইতিহাসে নারীর অর্জন, নারীর বিবর্তন নানাভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। কখনো সেটি ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। আমি সেই কারণে, নারীর বিবর্তনমূলক ইতিহাস নিয়ে কাজটি করেছি।’
সভাপ্রধানের বক্তব্যে তাসমিমা হোসেন বলেন, ‘আজ অনন্যার ২১তম সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হলো। প্রথম পেয়েছিলেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। তিনি আজ উপস্থিত আছেন। আমাদের কার্যক্রম খুব ছোট পরিসরে হলেও, কাজটি গুরুত্ব দিয়ে করতে চেয়েছি। প্রতিবছরের মতো এবারও আমরা পুরস্কার দেওয়ার জন্য অনেকের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সোনিয়ার নামটি আসাতে আমি নিজে তার বইগুলো সংগ্রহ করে পড়েছি। আমি নিজে ঋদ্ধ হয়েছি। তিনি বলেন, আমরা নারীরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে হোঁচট খাচ্ছি। কিন্তু সেটি তো কোনোভাবে কাঙ্ক্ষিত নয়। তাই কোনো না কোনোভাবে আমাদের বক্তব্য বা প্রতিবাদ নিয়ে দাঁড়াতে হয়। সোনিয়া দাঁড়িয়েছে।’
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে মেহরীন গেয়ে শোনান রবীন্দ্রসংগীত। চন্দনা মজুমদার করেন লালনের গান।