চারুকলায় পৌষপার্বণ উৎসব

চারুকলা ইনস্টিটিউটের মুক্তমঞ্চে পৌষ‍পার্বণ উৎ​সবে নাচ পরিবেশন করেন শিল্পীরা l প্রথম আলো
চারুকলা ইনস্টিটিউটের মুক্তমঞ্চে পৌষ‍পার্বণ উৎ​সবে নাচ পরিবেশন করেন শিল্পীরা l প্রথম আলো

পৌষের শুরুতে নেমে এসেছে কনকনে শীত। এই শীত উপেক্ষা করে নারীরা বর্ণিল শাড়ি ও শাল আর পুরুষেরা পাঞ্জাবি পরে হাজির হয়েছিলেন। নগরের চারুকলায় পৌষপার্বণ উৎসবে ঢল নেমেছিল সাধারণ মানুষের। দল বেঁধে এসেছিলেন তরুণ-তরুণীরাও। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে না হতেই পৌষপার্বণ উৎসবে যেন রূপ নিল মেলায়। সেলফি তুলতে তুলতে চলছিল শীতের পিঠা-পুলি ও মুড়ি–মুড়কি খাওয়া।
২০ ডিসেম্বর চারুকলা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম ব্যাচ ‘অর্ধবৃত্ত’–এর আয়োজনে ‘পৌষপার্বণ উৎসব’ উপলক্ষে দিনব্যাপী কবিগান ছাড়াও ছিল নানা আয়োজন। গান, নাচ, আবৃত্তি আর কথামালায় কেটেছে দিনটি। সবার কণ্ঠে ছিল লোকজ সংস্কৃতিচর্চার প্রত্যয়। সকালে ঢাকের তালে তালে শিক্ষার্থীদের আনন্দ-উল্লাসে মুখরিত হয়ে ওঠে চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণ। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ‘পৌষপার্বণ উৎসব’। উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক নাসিমা আখতার। উৎসব উদ্বোধনের পরই কুলা, রঙিন মুখোশ ও ফেস্টুন নিয়ে বের হয় শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রা শেষে শুরু হয় কথামালা। পৌষপার্বণ উৎসবে শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানান অধ্যাপক ঢালী আল মামুন, শাহরুল হায়দার, সহকারী অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া ও প্রভাষক রুহুল করিম।
কথামালার পরই শুরু হয় শিক্ষার্থীদের হাতে বানানো পিঠা নিয়ে পিঠা উৎসবের। এরপর চারুকলার শিক্ষক খন্দকার জামিল ইকবাল আজাদের স্মরণে ১৮ ডিসেম্বর আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পুরস্কার বিতরণের পরপরই শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চারুকলা প্রাঙ্গণে রবীন্দ্র, নজরুল, আধুনিক ও লোকগানের সুরের মূর্ছনায় বিমোহিত হন দর্শকেরা। গানের ফাঁকে ছিল কথামালা। ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে’ ও ‘শীতের হাওয়ার লাগল নাচন’ সমবেতভাবে পরিবেশন করেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। সংগীত পরিবেশন করেন মেহের নিগার, লিয়ানা মাহফুজ, মুক্তা মণি শিকদার, সঙ্গীতা জয় ধর, ফাতেমা জান্নাত, সৈয়দা আরাফা, সৌরভ সাহা, শুভ দাশ ও ইফতেখার সরদার। এরপর লালনগীতি পরিবেশন করেন কৃষ্ণা দাশ। গানের পরপরই ছিল দলীয় নাচ। নাচ পরিবেশন করেন তন্বী দাশগুপ্তা, মাধবী দাশ, নিশাদ কামাল, সৌমি, অথৈ। এ ছাড়া একক নৃত্য পরিবেশন করেন এনি, বর্ষা, মুক্তা, ইমন, এখিং ও মৃন্ময়ী।
রফিক আজাদের ‘প্রতীক্ষা’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী জন মোহাম্মদ। ‘ইউনিভার্সিটি’ নামের কবিতা আবৃত্তিটি পরিবেশন করে আরেক শিক্ষার্থী নূসরাত জাহান, যা অনুষ্ঠানে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্বে সঞ্চালনায় ছিলেন উম্মে কুলসুম ফারহানা ও ফারিয়া ফাইরুজ। সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বালন ও ফানুস ওড়ানোর পর ‘বাংলা সংস্কৃতির একাল–সেকাল’ নিয়ে কবিগান পরিবেশন করেন কবিয়াল কল্পতরু ভট্টাচার্য ও কংশরাজ দত্তের দল।
পৌষপার্বণ উৎসব আয়োজক ৫০তম ব্যাচ অর্ধবৃত্তের সমন্বয়ক জুয়েল চাকমা বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার চিরায়ত গ্রাম বাংলা, এই গৌরবময় ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ ও চর্চার করার লক্ষ্যে মনেপ্রাণে বাঙালি হয়ে ওঠার প্রেরণা নিয়েই আমরা আয়োজন করেছি উৎসবের’।