কথা রেখেছিলেন মান্না ভাই

একই ছবিতে মান্না ও পূর্ণিমা
একই ছবিতে মান্না ও পূর্ণিমা

মান্না ভাইয়ের তখন অনেক নাম-ডাক। তাঁকে নিয়ে ছিল নানা গুজব। পরিচিত কয়েকজন নিষেধ করছিলেন, তাঁর সঙ্গে যেন কাজ না করি। একজন নতুন শিল্পীর ভেতরে এভাবে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হলো।
তত দিনে আমার খানিকটা পরিচিতি তৈরি হয়েছে। রুবেল ভাইয়ের সঙ্গে যোদ্ধা ছবিটা ব্যবসাসফল। যদিও কোনো রোমান্টিক ছবি তখনো ব্যবসাসফল হয়নি। রিয়াজ-শাবনূর-ফেরদৌস তখনকার হিট রোমান্টিক নায়ক-নায়িকা। শাকিব খান দ্বিতীয় সারির নায়ক। আমি কাজ করলাম তাঁর সঙ্গে। একপর্যায়ে মান্না ভাইয়ের সঙ্গে এফ আই মানিকের সুলতান ছবিতে কাজের সুযোগ হলো। কাজ করতে গিয়ে বুঝলাম, পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ মানুষটির সঙ্গে কাজ করছি। এত দিন লোকমুখে যা শুনে এসেছি, সব ভুল। মান্না ভাইয়ের সঙ্গে যাতে জুটি তৈরি করে না ফেলি, সে জন্যই ওসব বলা।
প্রথম কাজেই তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। তিনি যে একজন বড় তারকা, সেটা তিনি কখনোই বুঝতে দেননি। তিনিই আমাকে আরও কয়েকটি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন। পরে তো প্রযোজক-পরিচালকেরাও আমার ব্যাপারে সুপারিশ করতে থাকলেন।

.
.


মান্না ভাইয়ের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধ ছবি শুরু হবে। শাবনূর আপু প্রধান চরিত্রে। আমাকে দেওয়া হলো স্যাক্রিফাইজ চরিত্র। এ নিয়ে মান্না ভাইয়ের ওপর ভীষণ অভিমান হলো। তাঁকে বললাম সে কথা। তিনি বোঝালেন, এই ছবিটা শেষ করে আমাকে নিয়ে তাঁর অন্য ভাবনা আছে। বললেন, ‘বাবা, তুমি আমার ওপর রাগ কইরো না। এই ছবিটা কইরা দাও। তোমারে আমার ছবির একক নায়িকা বানাব।’
আমি জানতাম, মান্না ভাই প্রযোজিত ছবিতে এই ঘটনা কখনোই ঘটবে না। কারণ, তাঁর ছবিতে সব সময় দুজন নায়িকা থাকেন। আমি তাঁকে বলি, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে লাভ নেই। তখন মান্না ভাই বললেন, ‘আমি মরার আগে হলেও তোমার জন্য এই নিয়ম বদলাব, কথা দিলাম। এই ছবিটা শেষ করে দাও।’
স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ ছবিটি করার সময় তিনি আমাকে একটি নকিয়া ১১০৮ মডেলের মুঠোফোন কিনে দিলেন। খুব সাধারণ সেট। কথা বলা আর স্নেক গেম খেলা যায়। ব্যাপারটা কেউ জানত না। স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধ ছবির শুটিং সেটে একদিন দেখি, মান্না ভাই শাবনূর আপুকে চরিত্র বুঝিয়ে দিচ্ছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে যাচ্ছেন তাঁর সঙ্গে, অথচ আমার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেন না। ভীষণ রাগ আর ঈর্ষা হচ্ছিল আমার। মনে হলো আমাকে পাত্তা দিচ্ছেন না! শুধু শুধু মিথ্যা মায়া দেখান, বাবা বাবা বলেন। এখন শাবনূর আপুকে পেয়ে আমার কথা ভুলে গেছেন। রাগ করে আমি মুঠোফোনটা আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলি।
কিন্তু মান্না ভাই তাঁর কথা রেখেছিলেন। আমাকে একক নায়িকা করে মনের সাথে যুদ্ধ ছবিটি বানিয়েছিলেন। ছবিটি বেশ প্রশংসিত হয়। আমরা একসঙ্গে ২৫টি ছবিতে কাজ করেছি।
মান্না ভাইয়ের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। তাঁর মৃত্যুসংবাদ শুনে আমি বিশ্বাসই করিনি। তাঁর সঙ্গে আমার শেষ দেখাটাও হয়নি। এখন সবাই শুধু টাকা বানানো নিয়ে ব্যস্ত। মান্না ভাই টাকা রোজগার ছাড়াও চলচ্চিত্রশিল্পকে নিয়ে ভাবতেন।
মান্না ভাই সম্পর্কে অনেকে অনেক কিছুই বলত, আমি সেসব দিকে যাব না। শুধু বলব, তিনি খুব ভালো একজন মানুষ ছিলেন। আমাকে অনেক আদর করতেন। কোনো সমস্যার কথা জানালে সমাধান করার জন্য তিনি রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়তেন।
১৭ ফেব্রুয়ারি ছিল তাঁর মৃত্যুদিন। এই দিনটিতে খুব মনে পড়ছে মান্না ভাইকে।
অনুলিখন: মনজুর কাদের