শাকিব-মিশার কানাকানি

শুটার ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে শাকিব খান ও মিশা সওদাগর। ছবি: লেখক
শুটার ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে শাকিব খান ও মিশা সওদাগর। ছবি: লেখক
‘এটা মিশা সওদাগরের আস্তানা। নায়কের জানা প্রয়োজন এমন এক সত্য কথা জানার জন্যই আস্তানায় এসে মিশাকে পেটাচ্ছেন শাকিব।

রাত আটটা। এফডিসির ৩ নম্বর স্টুডিওর মূল ফটক তখন বন্ধ। ভেতর থেকে আলো এসে ছড়িয়ে পড়েছে বাইরে। লোকজনের আনাগোনায় বোঝা যাচ্ছিল, ভেতরে কিছু একটা চলছে। হঠাৎ কানে আসে ‘ঢিশুম ঢিশুম ... ইয়া ঢিশুম ...!’ পাশেই দাঁড়ানো একজন বলে ওঠেন, ‘ফাইটিংয়ের শুটিং চলে।’

কোন ছবির ‘ফাইটিংয়ের শুটিং’ জানতে ইচ্ছা হয়। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলে সামনে পড়ে একটা বিরাট গুদামঘর। ক্রেন, ছড়ানো-ছিটানো কতগুলো ড্রাম। ভেতরেও লোকজন আছে। একজন মৃদু হেসে বললেন, ‘এইটা ভিলেনের আস্তানা!’ কারা মারপিট করছে দেখার জন্য যেতে হলো আরও একটু ভেতরের দিকে।
দুপাশে দুটি ক্যামেরা চলছে। সেগুলোর মুখ তাক করা শাকিব খান ও মিশা সওদাগরের দিকে। একে অন্যকে কী মারটাই না মারছেন! এদিক-ওদিক চোখ বুলালে চোখে পড়ে বিচ্ছিন্ন কতগুলো দৃশ্য, আবারও হঠাৎ কানে আসে, ‘কাট, কাট...।’ মনিটরের পেছন থেকে উঠে আসতে দেখা যায় পরিচালক রাজু চোধুরীকে। তিনি দৃশ্যটায় সন্তুষ্ট নন। আরও একবার মারপিট করতে হবে ওই দুজনকে। কিন্তু এ কী! শাকিব ও মিশা সওদাগর বের হয়ে গেলেন সেট থেকে।
মারপিটের এই দৃশ্যটি নিয়ে আরও জানতে যাই পরিচালকের কাছে। তিনি বললেন, ‘এটা মিশা সওদাগরের আস্তানা। নায়কের জানা প্রয়োজন এমন এক সত্য কথা জানার জন্যই আস্তানায় এসে মিশাকে পেটাচ্ছেন শাকিব।’ আমি একটু বিস্মিত হই। ভাবি, বাহ্, সত্য বের করার জন্য এমন ধোলাই!
পরিচালক একে একে ছবির গল্পটাই বলে দিলেন। এটিই নাকি শেষ দৃশ্যগুলোর একটি। কিন্তু কোথায় দৃশ্যধারণ! সেট থেকে বেরিয়ে ফ্লোরের এক কোণে আড্ডা দিতে বসে গেছেন নায়ক শাকিব ও ভিলেন মিশা। আশপাশে আরও কয়েকজন। শাকিবকে নিজের ঠোঁটের কাছে কান পাততে ইশারা করেন মিশা। ফিসফিস করে খানিকক্ষণ কথা বলেন দুজন। অন্য কারও কান পর্যন্ত পৌঁছায় না সেসব কথা। নায়ক-খলনায়কের এমন কানাকানি দৃশ্যের দেখা কিন্তু পর্দায় মিলবে না। ক্যামেরার সামনে দুজন দুজনার দুশমন হলেও বাস্তব জীবনে তাঁরা একে অপরের পরম বন্ধু। মিশা সওদাগর বললেন, ‘আমি আর শাকিব একসঙ্গে অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছি। একত্রে এত সময় কাটাতে হয়েছে যে আমরা ভালো বন্ধু হয়ে গেছি।’
আবার শুটিং শুরু হবে। দুই বন্ধুকে আবারও শত্রু শত্রু খেলতে হবে। আড্ডা ভেঙে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন দুজন। দুজনের চেহারার অভিব্যক্তি গেল বদলে। স্টুডিওর ভেতরের লোকগুলোর তো এটাই চাওয়া। এই দুজন যতটা শত্রুর মতো হিংস্র চোখে দুজনের দিকে তাকাতে পারবে, দৃশ্যটা তো ততই জমে উঠবে।
রাত বাড়ছে। এফডিসির স্টুডিওর ভেতরের মানুষগুলোর কাছে সেই হিসাব রাখার সময় নেই।