আজ মা-বাবার কাছে ফিরবেন আরিয়ান
ছেলেকে আর্থার রোড জেল থেকে বের করে আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন শাহরুখ। দেশের বড় আইনজীবীদের নিযুক্ত করেছিলেন তিনি। কারণ, এর আগে নিম্ন আদালতে আরিয়ানের জামিনের আবেদন খারিজ করা হয়েছিল। সবাই তাই বোম্বে হাইকোর্টের দিকে তাকিয়ে ছিল।
এ যেন এক রুদ্ধশ্বাস লড়াই। ২৬ দিন ধরে চলছে এই লড়াই। আরিয়ান খান বনাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো (এনসিবি)। দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর গতকাল বৃহস্পতিবার আরিয়ানসহ এই মামলার অন্য দুই অভিযুক্ত আরবাজ মার্চেন্ট ও মুনমুন ধামেচার জামিন মঞ্জুর করলেন বোম্বে হাইকোর্ট। তবে জামিনসংক্রান্ত আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলেই নিজের বাসায় ফিরতে পারবেন আরিয়ান। জামিনের খবর শুনে ইতিমধ্যেই মান্নাতের বাইরে ভিড় করেছেন শাহরুখ খানের অনুরাগীরা। মান্নাতের বাইরে যেন দীপাবলির রাত নেমে এসেছে। শাহরুখের বাংলোর সামনে বড় বড় পোস্টারে ভক্তরা লিখেছেন, 'ওয়েলকাম টু মান্নাত, আরিয়ান।' অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন দিওয়ালির আলোভরা রাতগুলো হয়তোবা জেলের আঁধারে কাটাবেন আরিয়ান। কারণ, আগামী সপ্তাহ থেকে দিওয়ালির ছুটিতে আদালত বন্ধ থাকবে।
২৬ অক্টোবর থেকে বোম্বে হাইকোর্টে শুরু হয় আরিয়ানের মামলার শুনানি। ছেলেকে আর্থার রোড জেল থেকে বের করে আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন শাহরুখ।
দেশের বড় আইনজীবীদের নিযুক্ত করেছিলেন তিনি। কারণ, এর আগে নিম্ন আদালতে আরিয়ানের জামিনের আবেদন খারিজ করা হয়েছিল। সবাই তাই বোম্বে হাইকোর্টের দিকে তাকিয়ে ছিল। বোম্বে হাইকোর্টে এই মামলা লড়ার জন্য সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগিকে নিযুক্ত করেছিলেন শাহরুখ।
তিন দিন ধরে নানাভাবে আদালতকে তিনি বুঝিয়েছেন যে আরিয়ানের এই গ্রেপ্তার সম্পূর্ণ বেআইনি। এই দুঁদে আইনজীবী ১০টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদালতের সামনে পেশ করেন। মুকুল রোহতগির যুক্তি ছিল যে আরিয়ান মাদক সেবন করেননি। এনসিবি তাঁর শারীরিক পরীক্ষাও করায়নি।
এনসিবির পক্ষের আইনজীবী অনিল সিং দাবি তুলেছিলেন যে আরিয়ান প্রমোদতরিতে আয়োজিত পার্টির মাদক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে লিপ্ত। এই অভিযোগের বিরোধিতা করে মুকুল বলেন ২ অক্টোবর রাতে প্রমোদতরিতে আয়োজিত পার্টিতে অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন আরিয়ান। সেখানে আরবাজ ছাড়া বাকি সবাই ছিলেন তাঁর অপরিচিত। তাই ষড়যন্ত্রের প্রশ্নই এখানে আসে না।
হাইকোর্টে এই মামলার শুনানির তৃতীয়, অর্থাৎ শেষ দিন এনসিবির আইনজীবী অনিল সিং আদালতকে বলেন যে কারোর কাছ থেকে মাদক পাওয়া যায়নি মানে এই নয় যে সে নিরপরাধ।
তিনি আরও বলেছেন, 'এটা মানছি যে গ্রেপ্তারের সময় কিছু নিয়ম মানা হয়নি। তবে রিমান্ড আদেশের পর তা সংশোধন করা হয়েছিল।' তিনি আদালতকে জানান যে আরিয়ানের এই গ্রেপ্তার আইন মেনেই হয়েছে। মুকুল রোহতগি এদিন আদালতে দাবি তুলে বলেন, আরিয়ানকে যিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তাঁকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়নি। আইনজীবী অনিল সিং আদালতকে বলেন, 'আরিয়ান প্রায় দুই বছর ধরে মাদক সেবন করছেন। আর আরবাজ মার্চেন্ট তাঁর ছোটবেলার বন্ধু। আরবাজ আর আরিয়ান সেদিন একসঙ্গে মান্নাত থেকে বের হয়েছিলেন। আরিয়ান জানতেন যে আরবাজের কাছে মাদক আছে। আর প্রমোদতরিতে তাঁরা দুজন একই ঘরে থাকতেন।'
দুই পক্ষের দীর্ঘ বাগ্বিতণ্ডার পর বেশ কিছু শর্ত সাপেক্ষে আরিয়ান, আরবাজ ও মুনমুনের জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। আরিয়ানের পাসপোর্ট এনসিবির কাছে জমা রাখতে হবে। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে শাহরুখপুত্র কথা বলতে পারবেন না। এই মামলার বাকি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারবেন না। তদন্তের স্বার্থে এনসিবি ডেকে পাঠালে আরিয়ানকে হাজির থাকতে হবে। আর এই তারকাপুত্রকে তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করতে হবে। আর এসব শর্ত লঙ্ঘন করলে আরিয়ানকে গ্রেপ্তার করা হবে।