‘আমি তো পারিনি, আমার মেয়েকে তাঁর কাছে নাচ শেখাব’

বিরজু মহারাজের কাছে নাচের তালিম নিয়ে নিজেকে ধন্য মনে করেছিলেন কমল হাসান

কিংবদন্তি নৃত্যশিল্পী পণ্ডিত বিরজু মহারাজ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। গতকাল রোববার মধ্যরাতে দিল্লিতে তাঁর মৃত্যু হয়। বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। প্রবাদপ্রতিম এই কত্থক নৃত্যসাধকের মহাপ্রয়াণে সমগ্র ভারতের সাংস্কৃতিক আঙিনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তবে তাঁর খ্যাতি শুধু ভারতে নয়, সমগ্র দুনিয়ায় ছড়িয়ে আছে। সমগ্র বিশ্বের সামনে কত্থককে এক নতুন আঙ্গিকে পরিবেশন করেছিলেন তিনি। এর পাশাপাশি বলিউডি ছবিতে কোরিওগ্রাফি করে এক নতুন ধারার জন্ম দিয়েছিলেন পণ্ডিত বিরজু মহারাজ। চলচ্চিত্র জগতের একাধিক তারকা তাঁকে গুরুর আসনে বসিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন কিংবদন্তি অভিনেতা কমল হাসান। তিনি প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে পণ্ডিত বিরজু মহারাজের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধার কথা তুলে ধরেছিলেন।

পণ্ডিত বিরজু মহারাজ

পণ্ডিত বিরজু মহারাজ সত্যজিৎ রায়ের ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ ছবিতে দুটি নাচের কোরিওগ্রাফির সঙ্গে নিজের আওয়াজও দিয়েছিলেন। সঞ্জয় লীলা বানসালির ‘দেবদাস’ ও ‘বাজিরাও মস্তানি’ ছবিতে তিনি কোরিওগ্রাফি করে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। কমল হাসানের ‘বিশ্বরূপম’ ছবিতে কোরিওগ্রাফি করে জাতীয় পুরস্কার জয় করেছিলেন বিরজু মহারাজ। এর জন্য খ্যাতনামা এই নৃত্যশিল্পী কমল হাসানকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। এদিকে পণ্ডিত বিরজু মহারাজের কাছে নাচের তালিম নিয়ে নিজেকে ধন্য মনে করেছিলেন কমল হাসান। তিনি ২০১৮ সালে প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বিরজু মহারাজের প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি সব সময় চেয়েছি বিরজু মহারাজ ও উদয়শঙ্করের কাছে নাচ শিখতে। আর এটা আমার এক অসম্পূর্ণ ইচ্ছা ছিল। ৩২ বছর আগে ভাইজাক শহরে একটা অনুষ্ঠানে বিরজু মহারাজকে নাচ করতে দেখেছিলাম। তখন তাঁকে দেখে মনে হয়েছিল যে আমি তো পারিনি, আমার মেয়েকে তাঁর কাছে নাচ শেখাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি “সাগরসংগম” নামের একটি ছবি বানাই। তখন পণ্ডিতজির কাছে নাচ শেখার সুযোগ পাই। তিন মাস ওনার কাছে নাচের তালিম নিয়েছিলাম। উনি আমায় বলেন, “এত তাড়াতাড়ি আমার নাচের স্টাইল কীভাবে অনায়াসে রপ্ত করে ফেললে? আর এটা মোটেই সহজ স্টাইল নয়।” আমি এর জবাবে বলি যে ৩ মাস নয়, আমি ৪০ বছর ৩ মাস ধরে তাঁর কাছে নাচ শিখছি। আজ শুধু তাঁর হাত আমার মাথার ওপর আছে।’

দীপিকা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, গানের দৃশ্যটি শুট করার সময় তিনি কেঁদে ফেলেছিলেন।

বলিউড অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিত বিরজু মহারাজের পছন্দের নৃত্যশিল্পীদের মধ্যে একজন। তিনি বিশ্বাস করতেন, মীনা কুমারী আর ওয়াহিদা রহমানের মতো মাধুরীও একজন অসাধারণ নৃত্যশিল্পী।

বিরজু মহারাজ সবচেয়ে বেশি মাধুরী দীক্ষিতের গানে কোরিওগ্রাফি করেছেন

পণ্ডিত বিরজু মহারাজ সবচেয়ে বেশি মাধুরী দীক্ষিতের গানে কোরিওগ্রাফি করেছেন। ‘বাজিরাও মস্তানি’ ছবিতে ‘মোহে রংগ দো লাল’ গানটি কোরিওগ্রাফি করেছিলেন তিনি। এই গানে বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোনকে নাচ করতে দেখা গেছে। দীপিকা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, গানের দৃশ্যটি শুট করার সময় তিনি কেঁদে ফেলেছিলেন। কারণ, দীপিকা কিছুতেই ঠিকমতো নাচ করতে পারছিলেন না।
এদিকে সোজা কথার মানুষ ছিলেন বিরজু মহারাজ। তিনি এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট বলেছিলেন, ক্যাটরিনা কাইফ নাচ করতে পারেন না। ক্যাটরিনা যা করেন, পণ্ডিতজির কাছে তা শরীর হেলানো ছাড়া কিছু নয়।