একটা যুগের অবসান হলো

পণ্ডিত বিরজু মহারাজখালেদ সরকার

পদ্মবিভূষণ পণ্ডিত বিরজু মহারাজ রোববার মধ্যরাতে চিরবিদায় নিয়েছেন। ৮৩ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি কত্থকশিল্পী হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। দিল্লির সাকেত হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। পণ্ডিত বিরজু মহারাজের নাতনি রোহিনী জানিয়েছেন, এক মাস ধরে মহারাজের চিকিৎসা চলছিল। তিনি কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। কিন্তু গতকাল রোববার রাতে শ্বাসকষ্টের কারণে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে আর শেষরক্ষা হয়নি। পণ্ডিতজির মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজনীতি, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়াজগতে। সব মহলের তারকারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন।

পণ্ডিত বিরজু মহারাজ
খালেদ সরকার

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পণ্ডিত বিরজু মহারাজের সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করে টুইটারে বলেছেন, ‘পণ্ডিত বিরজু মহারাজের মৃত্যু ব্যথিত করেছে। তিনি ভারতীয় নৃত্যকলাকে বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়েছিলেন আর বিশেষ স্বীকৃতি প্রদান করিয়েছিলেন। তাঁর চলে যাওয়া সমগ্র শিল্পকলাজগতের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। শোকার্ত এই আবহে ওনার পরিবার আর অনুরাগীদের প্রতি আমার সমবেদনা।’

ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ টুইট করেছেন, ‘কিংবদন্তি পণ্ডিত বিরজু মহারাজের প্রয়াণে এক যুগের অবসান হলো। ওনার মৃত্যুতে ভারতীয় সংগীত এবং সাংস্কৃতিক আঙিনায় এক গভীর শূন্যতার সৃষ্টি হলো। কত্থককে সমগ্র দুনিয়ার কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে ওনার অতুলনীয় অবদানের জন্য উনি আইকন হয়ে উঠেছেন। ওনার পরিবার আর অনুরাগীদের প্রতি আমার সমবেদনা।’

পণ্ডিত বিরজু মহারাজ
খালেদ সরকার

বলিউড অভিনেতা অনুপম খের ‘ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা’তে পড়াকালে পণ্ডিত বিরজু মহারাজের সঙ্গে তাঁর কিছু স্মৃতি এক ভিডিওর মাধ্যমে শেয়ার করেছেন। তিনি টুইট করে বলেছেন, ‘মহারাজকে পারফর্ম করতে দেখা সব সময় এক জাদুকরী অভিজ্ঞতা। উনি আমায় বলতেন যে আমার চোখে এক দুষ্টুমি আছে। ওনার অভিব্যক্তি থেকে আমি অভিনয়ের খুঁটিনাটি শিখেছি।’

চিত্রনির্মাতা সুভাষ ঘাই তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘কত্থক নৃত্যের ওস্তাদের থেকে আমার প্রথম শিক্ষালাভ হয়েছিল যুব কলেজ অনুষ্ঠানে। তখন উনি ভগবান কৃষ্ণ আর রাধার মধ্যে প্রেমালাপ নিজের দুই চোখের অভিব্যক্তির মাধ্যমে ব্যক্ত করেছিলেন। আমি শিখেছি নাচের অর্থ শরীর, তবে আত্মার বসবাস চোখের মধ্যে। আর তাই তিনি কত্থকের জগৎগুরু।’
চিত্রনির্মাতা অশোক পণ্ডিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘কত্থক গুরু আর গায়ক পদ্মবিভূষণ পণ্ডিত বিরজু মহারাজের দিল্লিতে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি অত্যন্ত বেদনাহত। একটা যুগের অবসান হলো। ওনার পরিবার আর নিকট আত্মীয়ের প্রতি আমার সমবেদনা জানাচ্ছি।’

রাজনীতিবিদ রাহুল গান্ধী টুইট করে জানিয়েছেন, ‘কত্থক কিংবদন্তি শ্রী পণ্ডিত বিরজু মহারাজের মৃত্যুর বেদনাদায়ক খবর পেয়ে আমি শোকাহত। ওনার পরিবার, বন্ধুবর্গ আর অনুরাগীদের প্রতি আমার সমবেদনা। ভারতীয় ধ্রুপদি নৃত্যজগতে ওনার অবদান অতুলনীয়। আর এ কারণে তাঁকে সব সময় স্মরণ করা হবে।’
সংগীতশিল্পী সোনা মহাপাত্র শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছেন, ‘সারা দেশের জন্য বেদনাদায়ক খবর। চিরসবুজ আর চির অনুপ্রেরণাকারী পণ্ডিত ব্রিজ মোহন নাথ মিশ্র আর নেই। তবে উনি ওনার শৈল্পিকতা, সংগীত, নৃত্যর জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’
বলিউড অভিনেত্রী কাজল টুইট করে লিখেছেন, ‘পণ্ডিত বিরজু মহারাজ কিংবদন্তি ছিলেন, আর তাঁকে দেখার অভিজ্ঞতা সব সময় বিস্ময়কর। আজ বিশ্ব এক অমূল্য কিছু হারাল। ওনার আত্মার চিরশান্তি কামনা করি। আমার গভীর সমবেদনা ওনার পরিবারের প্রতি।’
ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার টুইট করে বলেছেন, ‘পণ্ডিত বিরজু মহারাজ কত্থককে ভারত থেকে বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়েছিলেন। উনি অসংখ্য মানুষকে এই শিল্পকলার প্রতি অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে আমার হৃদয় ভারাক্রান্ত।’