এক দিনে ২১ গান রেকর্ড করেছিলেন তিনি

এস পি বালাসুব্রামানিয়ামের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজকোলাজ

করোনায় বিনোদন অঙ্গনের যত গুণী মানুষ চলে গেলেন, শিল্পী এস পি বালাসুব্রামানিয়াম তাঁদেরই একজন। গত বছরের এই দিনে শেষ হয় তাঁর জীবনযাত্রা। আজ তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।

শ্রীপতি পান্ডিতারাধুলিয়া বালাসুব্রামানিয়াম বা এস পি বালাসুব্রামানিয়ামের নামটি বাংলাদেশে হয়তো ততটা পরিচিত নয়। তবে তাঁর কণ্ঠ এ দেশের মানুষের অনেক চেনা। নব্বইয়ের দশকে সালমান খানের ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’, ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’সহ অনেক সিনেমায় তাঁর কণ্ঠ শোনা গেছে। গেয়েছেন ‘দিল দিওয়ানা বিন সাজনা’, ‘তুমসে মিলনে কি তামান্না হে’, ‘সাথিয়া তুনে ক্যায়া’, ‘বহুত প্যায়ার কারতেহে তুম কো সানাম’, ‘দেখা হে পেহিলিবার’সহ বহু গান।

এস পি বালাসুব্রামানিয়াম
সংগৃহীত

বালাসুব্রামানিয়াম দক্ষিণ ভারতের মানুষ। এ কারণেই হয়তো তাঁর কণ্ঠে হিন্দি গান একটু অন্যরকম শোনাত, বিশেষ করে উচ্চারণের কারণে। হিন্দি শব্দগুলো তিনি নিজস্ব স্টাইলে উচ্চারণ করতেন। ১৯৪৬ সালের ৪ জুন নেল্লোরের কোনেট্যাম্পেটে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

‘রোজা’ ছবিতে এ আর রাহমানের সংগীত পরিচালনায় ‘রোজা জানে মান’ গানটি গেয়েছিলেন বালাসুব্রামানিয়াম

বাবা এসপি সম্বামূর্তি ছিলেন একজন অভিনয়শিল্পী। এসপিরা দুই ভাই এবং পাঁচ বোন ছিলেন, যাঁদের মধ্যে এসপি শৈলজা নামকরা সংগীতশিল্পী। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি বালাসুব্রামানিয়ামের গভীর আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গিয়েছিলেন। কিন্তু সে সময়ে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েন। লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেননি। স্থানীয় এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গেয়ে সেরা গায়কের পুরস্কার জিতেছিলেন।

লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে

সেই অনুষ্ঠানের বিচারক ছিলেন দক্ষিণের নামকরা সংগীত পরিচালক এসপি কোদান্তপানি। তাঁর হাত ধরেই প্লেব্যাক শুরু করেন। বালাসুব্রামানিয়াম, গাইতে শুরু করেন নিজ অঞ্চলের বিভিন্ন ভাষার গান। ১৯৬৬ সালে ‘শ্রী শ্রী মর্যাদা রামান্না’ নামে এক তেলেগু ছবির মধ্যে দিয়ে গানের জগতে প্রবেশ করেছিলেন তিনি।

১৬টি ভাষায় চল্লিশ হাজারের বেশি গান গেয়েছেন বালাসুব্রামানিয়াম।

‘শঙ্কারাভরানাম’ সিনেমায় গান করে প্রথমবার সাড়া ফেলেন। তখন সারা ভারতে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৮১ সালে ‘এক দুজে কে লিয়ে’ চলচ্চিত্র দিয়ে মুম্বাইতে তাঁর যাত্রা শুরু হয়।

এই ছবিতে গান করে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। মনিরত্নম, এ আর রহমানের সঙ্গে বালাসুব্রামানিয়ামের জুটি হয়েছিল। ‘রোজা’ ছবিতে এ আর রাহমানের সংগীত পরিচালনায় ‘রোজা জানে মান’ গানটি গেয়েছিলেন বালাসুব্রামানিয়াম। সে গান আজও শোনেন বাংলাদেশের অনেক শ্রোতা।

১৯৯১ সালে ‘পাত্থর কে ফুল’ ছবিতে সালমানের হয়ে সাতটি গানে কণ্ঠ দেন বালাসুব্রমনিয়াম

বলিউডে এক সময় অভিনেতার পাশাপাশি গায়কদেরও সমান গুরুত্ব ছিল। কোন নায়কের ঠোঁটে কার গান ভালো লাগবে, সেটা বাছাই করার জন্য আলাদা টিম কাজ করতো। ক্যারিয়ারের শুরুতেই সালমানের নামের সঙ্গে বালাসুব্রামানিয়ামের নাম যুক্ত হয়ে যায়, ১৯৮৯ সালে ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’ মুক্তি পাওয়ার পর। তারপর থেকে সালমানের ঠোঁটে একের পর এক হিট গান।

‘শঙ্কারাভরানাম’ সিনেমায় গান করে প্রথমবার সাড়া ফেলেন

১৯৯১ সালে ‘পাত্থর কে ফুল’ ছবিতে সালমানের হয়ে সাতটি গানে কণ্ঠ দেন বালাসুব্রমনিয়াম। এর মধ্যে ‘কাভি তু ছালিয়া লাগতা হ্যায়’ এবং ‘তুমসে জো দেখতে হি প্যায়ার হুয়া’ গান দুটি সুপার হিট হয়।

এস পি বালাসুব্রামানিয়াম।
কোলাজ

১৯৯৪ সালে সালমান-বালাসুব্রামানিয়ামের ‘হাম আপকে হ্যায় কউন’ ছবিটি মুক্তি পায়। ছবিতে ‘মৌসম কা জাদু’, ‘দিদি তেরা দেবর দিওয়ানা’, ‘জুতে দো প্যায়সে লো’, ‘পেহলা পেহলা প্যায়ার হ্যায়’, ‘ধিক তানা’, ‘মুঝসে জুদা হো কর’, ‘হাম আপকে হ্যায় কউন’, ‘ওয়াহ ওয়াহ রাম জি’র মতো সুপারহিট গান গেয়ে বলিউডে নিজের আসন পাকা করে নেন বালাসুব্রামানিয়াম।

এস পি বালাসুব্রামানিয়াম
সংগৃহীত

১৬টি ভাষায় চল্লিশ হাজারের বেশি গান গেয়েছেন বালাসুব্রামানিয়াম। এক দিনে ২১টি গান রেকর্ড করার ঘটনাও রয়েছে তাঁর জীবনে। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ আর রহমান বলেন, ‘তিনি (এসপিবি) ১৫ মিনিটের মধ্যে একটি গান শিখতেন, ১৫ মিনিটের মধ্যে গেয়ে পরের গান রেকর্ডিংয়ে চলে যেতেন। আমার মনে হয় না আমি এর আগে এ রকম কোনও গায়ককে দেখেছি। এত গতিময়, এত পেশাদার, এত বিনয়ী।’

এক দিনে ২১টি গান রেকর্ড করার ঘটনাও রয়েছে তাঁর জীবনে।

বালাসুব্রামানিয়ামের আরেকটা জীবন ছিল, ভয়েস অ্যাক্টর হিসেবে। কমল হাসান থেকে শুরু করে অনিল কাপুর, মোহন, রজনীকান্তের জন্য তিনি ডাবিং করেছেন বিভিন্ন ভাষায়। ১৯৯৫ সালের পর থেকে মুম্বাইতে একটু অনিয়মিত হয়ে পড়েছিলেন এই শিল্পী। তবে দক্ষিণে আগের মতোই গান করে যাচ্ছিলেন। ২০১৩ সালে ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’-এর টাইটেল সংগীত করে অনেক দিন পর আবার আলোচনায় আসেন। তারপর থেকে প্লেব্যাকে একেবারেই অনিয়মিত ছিলেন। মাঝে মাঝে কনসার্টে দেখা যেত তাঁকে।

১৯৪৬ সালের ৪ জুন নেল্লোরের কোনেট্যাম্পেটে জন্মগ্রহণ করেন তিনি

তামিলনাড়ুতে তাঁর নাম ‘পাড়ুম নীলা’ বা চাঁদের গান। করোনা তাঁকে কেড়ে নিয়েছে ঠিকই। কিন্তু দরাজ কণ্ঠ রেখে যাওয়া চাঁদের গানগুলো কখনো ভোলার নয়।