কেকের গান অসহ্য লাগত কবি শ্রীজাতের, কারণ...

আর এই গায়কের গান ১৬ বছর ধরে ‘অসহ্য’ লাগত কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়েরকোলাজ

নব্বইয়ের দশকের ‘হাম দিল দে চুকে সানাম’ থেকে ‘ইয়ারো দোস্তি’ গান দিয়ে মানুষের হৃদয়ে তাঁর প্রবেশ। এরপর দীর্ঘ ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে একের পর এক প্রজন্মের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গানের মাধ্যমে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন এই গায়ক। গান, সুর আর অগণিত ভক্ত রেখে গতকাল মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ করে চলে যান না–ফেরার দেশে। মাত্র ৫৪ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরলোক গমন করেছেন কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকে। বর্তমানে তাঁর মৃত্যু কোনোভাবেই যেন মেনে নিতে পারছে না কেউই। আবারও গায়কের কণ্ঠে সম্মোহিত গান শোনার অপেক্ষায় অশ্রু ঝরিয়ে চলেছে সবাই।

আর এই গায়কের গান ১৬ বছর ধরে ‘অসহ্য’ লাগত কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ের। গায়কের মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমনটাই লিখেছেন তিনি। তিনি লেখেন, ‘কেকের গান আমার অসহ্য লাগে। ১৬ বছর ধরে অসহ্য লাগে। সেই ২০০৬ সালের ডিসেম্বর থেকে আজ অবধি কেকের গান আমি সহ্য করতে পারি না। ক্যাবের রেডিওতে হঠাৎ বেজে উঠলে চালককে তৎক্ষণাৎ বলি চ্যানেল সরিয়ে দিতে, কোনো জমায়েতে হুট করে বেজে উঠলে সন্তর্পণে উঠে বাইরে চলে যাই। এতটাই অসহনীয় আমার কাছে, কেকের গান, ১৬ বছর ধরে। টানা ১৬ বছর আমি কেকের গান শুনিনি। সত্যি বলতে কি, পালিয়েছি তাঁর কাছ থেকে।’

কেকের মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমনটাই লিখেছেন কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

সদ্য প্রয়াত কেকে বলিউডের জনপ্রিয় অনেক গানের গায়ক। কিন্তু কেন অসহ্য লাগত তাঁর গান? এর হৃদয়বিদারক ব্যাখ্যাও শ্রীজাত দিয়েছেন। একসময় তিনিও কেকের কণ্ঠের ভক্ত ছিলেন। আর যাঁর হাত ধরে কেকের ভক্ত হয়েছেন, তিনি তাঁর আদরের ছোট ভাই পুশকিন। পুশকিন ভালো গিটার বাজাতেন, গানের গলাও ছিল। পড়াশোনা আর পরীক্ষার ফাঁকে শ্রীজাত গান শুনতে চাইলে পুশকিন গেয়ে উঠতেন কেকের ‘ইয়ারোঁ, দোস্তি বড়ি হি হসিন হ্যায়’ আর ‘হাম রাহেঁ ইয়া না রাহেঁ কাল, কাল ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পাল’—এই দুটি গানই।

ভারতের জনপ্রিয় গায়ক কৃষ্ণ কুমার কুন্নাথ (কেকে)। ছবি: জাহিদুল করিম

১৬ বছর আগে এক বাইক দুর্ঘটনায় মারা যান শ্রীজাতের আদরের ছোট ভাই পুশকিন। এর পর থেকেই শ্রীজাত শোনা বন্ধ করে দেন কেকের গান। আর সেই থেকে কেকে তাঁর শত্রু। এই গানগুলো শ্রীজাতের দুই চোখের বিষ। তখন থেকেই কেকের অসামান্য সুরেলা আর টান টান দরাজ কণ্ঠ থেকে পালিয়ে বেড়ান তিনি। তিনি বলেন, ‘কেউ জানে না, কিন্তু ১৬ বছর ধরে এই একজন মানুষের গানের কাছ থেকে পালাই আমি। পিঠ বাঁচিয়ে, মন বাঁচিয়ে, চোখ বাঁচিয়ে।’

শ্রীজাত আরও বলেন, ‘আসলে কেকের কাছ থেকে নয়, পালিয়েছি অকালপ্রয়াত ভাইয়ের কাছ থেকে। আজ কেকেও চলে গেলেন, যাওয়ার আগেও গানই তাঁর সঙ্গ দিল। কী গেয়েছিলেন জানেন না শ্রীজাত। কেকে আসছেন শুনেই নজরুল মঞ্চের কাছাকাছি কোনো পথ দিয়ে তিনি যাননি। কেননা, হঠাৎ যদি কেকে গেয়ে ওঠেন “ইয়ারোঁ, দোস্তি...”। আর তা যদি তার কানে আসে!’

কলকাতার মঞ্চে কেকে

কেকের ওপর খুর রাগ ছিল শ্রীজাতের। কখনো দেখা হলে কেঁদেকেটে ঝগড়া করার ইচ্ছাও ছিল। জড়িয়ে ধরারও লোভ ছিল খুব, অভিমানে, অসহায়তায়। সেসব গানের সঙ্গেই ভেসে গেল। ‘হাম রহেঁ ইয়া না রাহেঁ কল, কাল ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পাল’...গানের কথাকে সত্যি করে দিয়ে চলে গেলেন কেকে। তাই আজ ১৬ বছরের গভীর ক্ষতের ওপর মলমের বদলে মশাল চেপে ধরলেন তিনি। এমনই মশাল, যার আগুনে দূরে কোথাও পুশকিনের গিটারটাও পুড়ে যাচ্ছে, একা একা...।

শেষবার নজরুল মঞ্চে গাইছেন কেকে